সুব্রত ব্রহ্ম: প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের নানা নিদানকে হাতিয়ার করে কোভিড (COVID-19) অতিমারীর (Pandemic) বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে আয়ুশ মন্ত্রক। এবার তারা করোনা মোকাবিলায় ম্যালেরিয়া (Malaria) ঠেকানোর ওষুধে শান দিচ্ছে। মন্ত্রকের আশা, নতুন দাওয়াইটি লড়াইয়ের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। আয়ুশ ৬৪ (AYUSH-64)। যে পলি হার্বাল আয়ুর্বেদিক ওষুধ ম্যালেরিয়া বধে বৈদ্যরা প্রয়োগ করে থাকেন, সেটাই মৃদু্ ও মধ্যম উপসর্গযুক্ত করোনা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে আয়ুশ মন্ত্রক।
সোমবার সল্টলেকের কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ ঔষধি অনুসন্ধান সংস্থান থেকে ওষুধ বণ্টন শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ৮ জন কোভিড রোগীকে আয়ুশ ৬৪ দেওয়া হয়েছে। রোগীর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট দেখিয়ে আত্মীয়রা তা সংগ্রহ করেছেন। তা ছাড়া ‘সেবা ভারতী’-র বঙ্গীয় শাখাকে ৩০ হাজার ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব নেটওয়ার্ক মারফত ব্লক স্তরে আয়ুশ ৬৪ বিলি করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
এই সংক্রান্ত কর্মযজ্ঞের নোডাল অফিসার ‘সিসিআরএএস’-এর ডা. দীপসুন্দর সাহু এই খবর জানিয়ে বলেন, “দিল্লির এইমস, সফদরজং হাসপাতাল-সহ একাধিক হাসপাতালে আয়ুশ ৬৪ নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে। আশাপ্রদ ফল মেলায় দেশজুড়ে ৩০ লক্ষ করোনা রোগীর চিকিৎসায় এই ওষুধ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়ুশ মন্ত্রক।”
৭ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আয়ুশ ৬৪ বণ্টন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া, যুবকল্যাণ ও আয়ুশ মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বলেছিলেন, কোভিড মোকাবিলায় এই ভারতীয় ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণিত। কোভিড মোকাবিলায় যুক্ত টাস্ক ফোর্স, আইসিএমআর-সহ বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে কথা বলেই করোনা বধে এই ওষুধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য অবশ্য এখনও বরাদ্দ আয়ুশ ৬৪ ট্যাবলেট হাতে পায়নি। সিসিআরএএসের স্টকে থাকা ওষুধই বিলি শুরু হয়েছে। দীপসুন্দরবাবু জানালেন, “আয়ুশ মন্ত্রকের বরাদ্দ ওষুধ হাতে পেলে সুবিধা হবে। আরও বড় পরিধিতে বন্টন করা যাবে।”
টিকা আবিষ্কার হলেও সরাসরি কোভিড বধের কোনও ওষুধ এখনও চিকিৎসকদের হাতে নেই। এডসের মতো জীবাণুঘটিত রোগে ব্যবহার হওয়া ওষুধই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার হচ্ছে করোনায়। রেমডিসিভির, আইভারমেক্টিন সবই তার উদাহরণ। এবার মডার্ন মেডিসিনের দেখানো পথে হেঁটে ম্যালেরিয়ার ওষুধকে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল আয়ুশ মন্ত্রক। অবশ্য শুধু আয়ুশ ৬৪-ই নয়, কাবাসুরা কুডিনির নামে একটি সিদ্ধা ওষুধও করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। ‘সিএসআইআর’ এবং আয়ুশ মন্ত্রকের যৌথ উদে্যাগে মাল্টি সেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলেছে দেশজুড়ে। এই ওষুধগুলি কোভিড চিকিৎসার জাতীয় প্রোটোকলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
প্রাক্তন আইসিএমআর ডিজি ডা. ভি এম কাটোচের নেতৃত্বে একটি ইন্টার ডিসিপ্লিনারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জে বি রায় আয়ুর্বেদ কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. পুলককান্তি কর জানিয়েছেন, “আয়ুশ ৬৪-এর অ্যান্টি ভাইরাল গুণ রয়েছে। ইমিউনো মডিউলেটর হিসাবেও কার্যকারিতা প্রমানিত। বহু মানুষ দ্রুত করোনামুক্ত হয়েছেন এই ওষুধের গুণে। আশা করি, হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে গেমচেঞ্জার হয়ে উঠবে এই ওষুধ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.