গৌতম ব্রহ্ম: সেরে ওঠা রোগীর রক্তরসই হয়তো করোনা যুদ্ধের মহা হাতিয়ার! যে কারণে, করোনা চিকিৎসায় এবার ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ শুরু করে দিল আমেরিকা। সোজা কথায়, নভেল করোনার কবল থেকে আরোগ্যলাভ করা মানুষের রক্তের প্লাজমা সদ্য আক্রান্ত বা সংকটজনক কোভিড পজিটিভ রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া। প্লাজমায় মজুত অ্যান্টবডিই Covid 19 ভাইরাসের শমন হয়ে উঠবে বলে মার্কিন চিকিৎসকদের একাংশ আশাবাদী। তাঁদের বক্তব্য, এই সংকটের মুহূর্তে প্লাজমা থেরাপি আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। অ্যান্টিবডিযুক্ত প্লাজমা আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শক্তি জোগাতে পারে করোনা যুদ্ধে।
সম্প্রতি আমেরিকার হিউস্টন মেথডিস্ট হসপিটালে এক কোভিড পজিটিভ হওয়া রোগীর উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। করোনার ধরা পড়ার পর ১৪ দিন কোয়ারাইন্টাইনে থেকেছেন, এমন এক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে এক সংকটজনক করোনা আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এরিক সালাজার জানিয়েছেন, “আমাদের হাতে সময় খুব কম। করোনা মোকাবিলার তেমন অস্ত্রও নেই। এই পরিস্থিতিতে প্লাজমা থেরাপি বড় আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। জানা গিয়েছে, চিনের ইউহানেও বেশ কয়েকজন রোগীর উপর এই ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ প্রয়োগ করা হয়। আমেরিকা আরও বড় আকারে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করতে চলেছে। ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চ’-এ ভেন্টিলেশনে থাকা কয়েকজন করোনা আক্রান্তের উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ভাবনাচিন্তা চলছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা চিকিৎসায় এই থেরাপির উল্লেখ করেন। নবান্নে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ছিলেন ডা. অভিজিৎ চৌধুরিও। তিনিই প্রথম ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’র সাফল্যের উদাহরণ দেন।
এ রাজ্যেও এই পদ্ধতি প্রয়োগের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী জানান, “অনেক রোগেই এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়। মূল নীতি হল, যদি কেউ কোনও রোগ থেকে সুস্থ হয়, তাহলে তার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি যুক্ত প্লাজমা আক্রান্ত মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসকে মেরে ফেলাই থেরাপির মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু ট্রান্সফিউশনের আগে ভাল করে প্লাজমার নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। এক রোগ সারাতে গিয়ে যেন আর এক রোগের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে না ফেলি।” প্রান্তরবাবুর পর্যবেক্ষণ, নভেল করোনার বিরুদ্ধে শরীর যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে সেগুলি খুব শক্তিশালী। অনেকসময় তা ভাইরাসকে মারতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করে ফেলে। এনআরএস ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগে রক্তের অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা হয়। এদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিয়মকানুন মেনে একটা ‘ট্রায়াল’ চালানো যেতেই পারে। এমনটাই জানালেন প্রান্তরবাবু।
তাঁর বক্তব্য, এক্ষেত্রে ব্লাড গ্রুপ ম্যাচিং করাটা জরুরি নয়। তবে একই গ্রুপের হলে ভাল। আসলে শ্বেতকণিকা বা লোহিত কণিকার ক্ষেত্রে ব্লাড গ্রুপ মেলানোটা জরুরি। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। প্লাজমায় অন্য কোনও জীবাণু থাকলে তা রোগীর শরীরে ঢুকে পড়বে। তাই এখন প্লাজমা থেকে ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া সবাই এড়িয়ে চলছে। আসলে প্লাজমাকে পাস্তুরাইজেশন, ন্যানো-ফিল্ট্রেশন করতে হয়। তবে খুব ক্রিটিক্যাল কেস ছাড়া এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত নয়। অনেকটা এই জাতীয় পদ্ধতি কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্য রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে শ্বেতরক্তকণিকা দেওয়া হয়। একে বলে গ্র্যানুউলোসাইট ট্রান্সফিউশন। কিন্তু আমাদের দেশে এই প্রযুক্তি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হওয়া দরকার। সতর্ক করেছেন আর এক চিকিৎসক ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.