অভিরূপ দাস: ঠাকুমার মৃত্যু হয়েছে ক্যানসারে। একই রোগে মারা গিয়েছেন বাবাও। ছেলের জিনেও কি তবে মারণ রোগের অশনিসংকেত? এবার জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এবার তাও জানা যাবে। ক্যানসার (Cancer Treatment) আক্রান্ত মায়ের জিন সন্তানের শরীরেও ওই কর্কট রোগ বয়ে আনছে কি না, তাও আগাম স্পষ্ট হয়ে যাবে। মিলবে প্রতিকারের দিশাও।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তকারী এমন জিনোম সিকোয়েন্স যন্ত্র শহরে প্রথম বসল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড টেকনোলজিতে। নিউটাউনের এই জনস্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রে যে ‘জেনেক্সাস সিকোয়েন্সার’ যন্ত্র বসানো হয়েছে তার দাম প্রায় ৬ কোটি টাকা। কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র? গবেষক অরিতা আচার্য জানিয়েছেন, প্রথমে কারও শরীরের ডিএনএ চিহ্নিত করা হবে। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ডিএনএ আইসোলেশন। এবার সেটার কোয়ালিটি টেস্টিং হবে। সবশেষে এই যন্ত্রের মধ্যে ফেলে দেখা হবে তার চরিত্র। আকস্মিক জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত। আগে জানলে বাদ দিয়ে দিতেন তা। রাজ্যে এমন মহিলার সংখ্যা নেহাত কম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এ সব ক্ষেত্রে দায়ী জিনের গঠনে আকস্মিক বিপজ্জনক পরিবর্তন বা ‘মিউটেশন’। জিন তত্ত্বের গূঢ় গাণিতিক মডেলের উপর চোখ বোলালেই বোঝা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ক্যানসারের ক্ষেত্রে জিনের মিউটেশনই দায়ী। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিক খুলে দেবে এই যন্ত্র। কারণ কর্কট রোগের একাধিক কারণের মধ্যে জিনের ‘অ্যাক্সিডেন্টাল’ মিউটেশন অন্যতম।
উল্লেখ্য, নিউটাউনের এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে আমেরিকার জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল। জনস্বাস্থ্য গবেষণায় পৃথিবীর মধ্যে শিরোনামে এই প্রতিষ্ঠান। শহরের কর্কটরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্যানসারের নেপথ্যে জীবনযাত্রা ও ভাগ্যের সঙ্গে বংশধারা বা জিনে কী রয়েছে তার ভূমিকাও অনেকখানি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পরপর তিন প্রজন্ম ক্যানসারে আক্রান্ত। আবার মাঝের এক প্রজন্মকে বাঁচিয়ে দিয়ে ঠাকুরমার ক্যানসারের জিন নাতির মধ্যেও প্রকট হওয়ার ঘটনা রয়েছে। শরীরে ক্যানসারের জিন রয়েছে কি? সন্দেহ থাকলে এই মেশিনে জিনোম সিকোয়েন্স করে সহজেই তা ধরা যাবে। ধরা গেলেও এই যন্ত্রে তা বাদ দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ জিন কারেকশনের উপায় নেই।
তবে আগে থেকে ধরা গেলে স্তন ক্যানসার অথবা জরায়ুর ক্যানসারের রোগীদের উপকার হবে। এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, প্রতিটি শিশু জন্মানোর সময় জিনের যে বিন্যাস থাকে, ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনই ঠিক করে, কোন অসুখ বাসা বাঁধবে। হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এমন যন্ত্রেই জিনোম সিকোয়েন্স করে স্তন ক্যানসারের আভাস পেয়েছিলেন। যে কারণে বাদ দিয়ে দেন স্তন। ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, এবার এমন সুযোগ পাবেন বঙ্গের মহিলারাও।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক অরিতা আচার্য জানিয়েছেন, শুধু ক্যানসার নয়, জেনেটিক অসুখ নানাবিধ। জিনসূত্রে যেসমস্ত অসুখ পাওয়া যায়, তার সবই এখানে জিনোম সিকোয়েন্স করে জানা যাবে। বংশসূত্রে পাওয়া কিছু মারাত্মক অসুখের মধ্যে রয়েছে হান্টিংটন ডিজিজ। যেখানে মস্তিষ্কের স্নায়ুর কোষ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। শিশুর হেক্সা জিনে মিউটেশন ঘটলে টে সাকস ডিজিজ দেখা যায়। এই অসুখে বেটা হেক্সোস্যামিনিডেস এ এনজাইমের স্বল্পতা লক্ষ করা যায়। এই এনজাইম ফ্যাটি সাবস্ট্যান্স ভাঙতে কাজে লাগে। এছাড়াও বংশঘটিত আরও এক মারাত্মক অসুখ সিকল সেল অ্যানিমিয়া। যেখানে শরীরের লোহিত রক্তকণিকার আকার বদলে যায়। কমে যায় বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা। গবেষকরা বলছেন, আগে থেকে এমন অসুখ ধরা গেলে চিকিৎসা করা অনেক সহজ হবে। পরিবারের লোকেরাও সচেতন হবেন। সাধারণ ভাবে এ যন্ত্রে একটি বিশেষ জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। তবে একাধিক টেস্টের জন্য সে খরচ বাড়বে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.