ফেসবুকের ঝাঁ-চকচকে প্রোফাইল নয়। নতুন প্রজন্মকে স্পর্শকাতর নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা যাক একটু সমালোচনা, একটু ভাবনা, আর অনেকখানি গঠনমূলক চিন্তা নিয়ে। ওদের সঙ্গে ওদের পাশে থাকি। নিউ জার্সি থেকে লিখলেন মৌমন মিত্র।
Critical thinking অর্থাৎ সমালোচনামূলক চিন্তা:
আপনার বাড়িতে খুদেরা হোমওয়ার্ক নিয়ে আসছে দৈনন্দিন। ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে না পড়তে আপনিও লাগাতার ওদের হোমওয়ার্ক করিয়ে চলেছেন। একটু ভাবুন। এতো অবধি ওদের আপনি ৫ আর ৩ যোগ করলে ৮ হয় বুঝিয়েছেন। কিন্তু কেন হয়? এই কেন উত্তরের নামই বলা যায় ক্রিটিকাল থিঙ্কিং। আপনার আশপাশে যা কিছু রয়েছে, তা গণিত হোক বা বিজ্ঞান সবকিছুর মধ্যে এই সমালোচনামূলক চিন্তাকে সংযোজন করতে হয়। কোনও রাজ্যের স্থানীয় ভাষার পাশাপাশি এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে এই ভাবনামূলক চিন্তাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা সত্যি প্রয়োজন।
এবার আসি এই ক্রিটিকাল থিঙ্কিং-এর পদ্ধতিতে।
বিশ্লেষণ – জীবনের যে কোনও অংশকে ছোট্ট মাথায় বিশ্লেষণ করানো শেখাতে হবে। একটা কাব্যের পিছনেও ভাবনা আসে। আবার গণিতের বাক্সেও থাকে প্রত্যেক ফ্যাক্ট-এর পেছনে অনেক, অনেক, কোথাও সহজ, কোথাও কঠিন বিশ্লেষণ।
যোগাযোগ – একসঙ্গে কোনও প্রোজেক্টে কাজ করে, তার ভাল মন্দ বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ভাগ করতে হবে। কথা বলা, প্রকাশ করার মাঝেই বেরিয়ে আসে অনেক নতুন স্বতন্ত্র ভাবনা। এই শিক্ষা বন্ধুত্ব যেমন তৈরি করে তেমনি নিজেদের মধ্যে ভাবনা আদান প্রদানের মানসিকতার জোগান দেবে।
সৃজনশীলতা – ধরুন গণিতে একটি নম্বর ১২। ওদের ভাবতে দিন কতভাবে এই নম্বর ১২টি তৈরি করা যায়। গড়তে শিখুক ওরা এইভাবেই আরও অনেক কিছু। শুধু মাটির মূর্তি নয়, তৈরি হয় শব্দ, তৈরি হয় নম্বর। আর আমরাই পারি নিজেদের মতো করে।
মুক্তমনস্ক – খুদেদের মন যত মুক্ত থাকবে তত বেশি তারা নতুন ভাবনা চিন্তাকে উদার মনে গ্রহণ করতে পারবে। বিভিন্ন ভাবনা নিজের মধ্যে নিয়ে তা নিয়ে মতামত তৈরি করতে ওদের সাহায্য করুন একদম জীবনের শুরু থেকেই।
সমস্যার সমাধান – এই ক্রিটিকাল থিঙ্কিং-এর মূল বিষয়বস্তু কিন্তু এই ধাপ জুড়েই- সমস্যার সমাধান। যখনই আপনি এই ধাপে ভাবতে শিখবেন তখনই সঠিক ভাবনামূলক চিন্তা সহকারেই সমাধান করতে পারবেন কোনও কঠিন সমস্যার।
চারিদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের অজানা নয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী প্রজন্মের নতুনভাবে পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখাটাই যেন দিন দিন কঠিন, কঠোর হয়ে চলেছে। চারিদিকে আমরা লেঠেল প্রতিবাদ দেখছি। মানুষ মানুষের প্রতি সহমর্মিতা হারিয়ে ফেলছে। সবটাই ঠিক। অন্যায় পৃথিবীর যে কোনও অংশেই আছে। আছে প্রতিবাদও। কিন্তু প্রতিবাদ মানে ধ্বংসস্তূপ নয়। প্রতিবাদ মানে নিজের ভাবনাকে যুক্তি ও সমাধান-সহ মানুষের কাছে অহিংস রূপে প্রকাশ করাও। আর এই ভাবনা আসবে, যদি মনের ভিতর এই শিক্ষার বীজ রোপণ করা যায়, একদম শিশু বয়স থেকেই। ছোট ছোট চিন্তাকে এই আদলে দেশের, দশের শুভ কাজে গড়ে তোলা প্রয়োজন। LinkedIn-এর বিদ্বান বা ফেসবুকের ঝাঁ-চকচকে প্রোফাইল নয়। ওদের আগামিদিনের স্পর্শকাতর নাগরিক গড়ে তোলা হোক একটু ভাবনা, আর অনেকখানি গঠনমূলক চিন্তা নিয়ে। বিচ্ছেদে থাকুক স্বার্থ, মর্মে রয়ে যাক অলীক চিন্তা। তৈরি হোক আগামীর ডেলিবারেট থিঙ্কারস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.