সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্রুত ও সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে গেলে দরকার জিপিএস। ঠিক তেমনই মস্তিষ্কের জটিল অস্ত্রোপচার সফল করতে দরকার ‘নিউরো নেভিগেশন’। বস্তুত নিঃশব্দে রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জন্য এই যন্ত্র কিনল স্বাস্থ্যদপ্তর। একইসঙ্গে এমন একটি যন্ত্র কেনা হয়েছে, যার সাহায্যে মস্তিষ্ক অথবা মেরুদণ্ডর যে কোনও অংশে থাকা টিউমার লেজার রশ্মি দিয়ে কেটে ফেলা সম্ভব। টিউমারের মধ্যে ক্যানসার কোষ থাকলেও তা গোড়া থেকে নির্মূল করা হচ্ছে।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। মস্তিষ্কের কোনও অংশে টিউমার থাকলে এতদিন এমআরআই করা হত। এটাই দস্তুর। কিন্তু সেই টিউমারের আয়তন, ওজন অথবা টিউমার মস্তিষ্কের কতটা জায়গা জুড়ে শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে, তার সম্যক ধারণা থাকে না নিউরো সার্জেনের। ফলে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খুলি খুলে অপারেশন শুরুর পর দেখা যায়, এমআরআইযের ছবিতে টিউমার যতটা বোঝা গিয়েছিল তার থেকেও অনেকটা বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে ঘাপটি মেরে বসে আছে টিউমার। ফলে বেশিরভাগ ব্রেন টিউমার অপারেশন সফল হয় না। অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যু হয়। অভিযোগের তিরে বিধস্ত হন লড়াকু চিকিৎসক।
নতুন পদ্ধতিতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে ব্রেন টিউমার সন্দেহের উপসর্গ নিয়ে রোগী এলে আউটডোরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এমআরআই করেন। রিপোর্ট পজিটিভ হলেই কালক্ষেপ না করে নিউরো নেভিগেশন পরীক্ষার জন্য ট্রমা কেয়ার সেন্টারে পাঠানো হয়। বস্তুত নিউরো নেভিগেশনের দেখানো পথেই অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জটিল ব্রেন টিউমার অপারেশন হয়। হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাক্তার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক নিউরো নেভিগেশন যন্ত্র কেনা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি অস্ত্রোপচার সফল।”
উলটোদিকে অত্যাধুনিক কুসা যন্ত্রে মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডর টিউমার জল দিয়ে গলিয়ে নরম করে লেজার সার্জারিতে কেটে বাদ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তার কথায়, সুগার পরীক্ষার জন্য যতটা রক্ত নেওয়া হয় তার থেকেও কম রক্তপাত হয় নয়া পদ্ধতিতে।সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানান, ”নিউরো সার্জারিতে চলতি শিক্ষা বর্ষে এমসিএইচ (পোস্ট ডক্টরাল) কোর্স পাঁচজন যুক্ত হয়েছে। বিভাগে ৬ জন অধ্যাপক। অধ্যাপকরা পথ দেখাচ্ছেন, ছেলেরা নতুন উদ্যমে কাজ করছে।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২৪×৭ ট্রমা কেয়ার চালু হয়েছে, খোলা নিউরো সার্জারি। স্বাস্থ্যভবনের ওই আধিকারিকের কথায়, ”আর জি করে নিউরো সার্জারি বিভাগ ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বর্তমানে সাতটি শয্যা। দ্রুত ৩০ শয্যা করা হবে। আইসিইউ থেকে সুস্থ হওয়ার পর এইচডিইউ(হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) থেকে রোগীকে দিনরাত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।” আর জি করে নয়া চিকিৎসা কৌশল চালু হওয়ায় এসএসকেএমের উপর চাপ অনেকটা কমবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.