Advertisement
Advertisement
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে মহামারী ঠেকানোর পদ্ধতি

মহামারি রোধে লকডাউনের পথ ভারতই দেখিয়েছিল বিশ্বকে, জানেন কীভাবে?

খ্রিস্টের জন্মের আগেই লকডাউন হয়েছিল দেশে।

New generation follows Ayurvedshashtra advisory given by Sushruta
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 2, 2020 9:40 am
  • Updated:April 2, 2020 10:08 am  

গৌতম ব্রহ্ম : আইসোলেশন, কোয়ারান্টাইন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং। নভেল করোনার রমরমার এই জমানায় শব্দগুলি এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। অনেকেই বলছেন, এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী যে হতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু ওঁরা কি জানেন, প্রাচীন ভারতেও রোগ-জীবাণুর ধ্বংসলীলা প্রতিরোধে এই একই দাওয়াই প্রয়োগ করা হত! শব্দগুলি শুধু আলাদা, এটুকুই যা। বস্তুত, মহামারী ঠেকাতে রোগীকে পরিবারশুদ্ধ অন্তরিন করে আলাদা করে রাখার প্রেসক্রিপশন আয়ুর্বেদশাস্ত্রেই মজুত।

বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন। খ্রিস্টের জন্মের আগে থেকেই ভারতআইসোলেশন, কোয়ারান্টাইন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং সম্পর্কে অবগত। এমনকি অষ্টাঙ্গ হৃদয় যা চরক ও সুশ্রুত সংহিতা অবলম্বনে লেখা, তাতে মহামারী রোধে ২১ দিন লকডাউনের কথাও স্পষ্ট করে বলা আছে। আমাদের চিকিৎসাবিজ্ঞান এতটাই উন্নত ছিল। এর পরেও আমরা হীনমন্যতায় ভুগব? চরক-সুশ্রুতের কথাই এখন মডার্ন মেডিসিন ঘুরিয়ে বলছে। প্রধানমন্ত্রী গত রবিবারের ‘মন কি বাত’ এও চরকের রেফারেন্স টেনে ডাক্তারদের প্রশংসা করেছেন। অতএব, তর্ক না করে আসুন আমরা এই লকডাউনকে মানি। করোণাকে কুপোকাত করি। মনে রাখবেন, এটা আমাদের ভারতীয়দের নিজস্ব উদ্ভাবন, প্রেসক্রিপশন। যা আজ সারা বিশ্ব অনুসরণ করছে।

Advertisement

আড়াই হাজার বছর আগে রোগ-জীবাণু মোকাবিলার এই পথ বাতলে গিয়েছেন সুশ্রুত মুনি। স্পষ্ট জানিয়েছেন, জীবাণু হামলায় যখন সভ্যতা বিপন্ন, তখন প্রতিটি রোগী ও তাঁর সংস্পর্শে আসা মানুষকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। অর্থাৎ আইসোলেশন ও সোশ্যাল ডিসস্ট্যান্সিং। করোনা রুখতে যে দুই অস্ত্রের উপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে নরেন্দ্র মোদি সবাই এই মুহূর্তে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ভবিষ্যতের দুনিয়া দেখতে হলে বর্তমানের কয়েকটা দিন ঘরে সেঁধিয়ে থাকুন। নচেৎ, অনর্থ হবে। গৃহবন্দি থাকার মেয়াদ সম্পর্কেও আয়ুর্বেদের স্পষ্ট নিদান রয়েছে। এবং বিস্ময়করভাবে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে তার অদ্ভুত মিল।

প্রধানমন্ত্রী একুশ দিন লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছেন। একই নিদান হেঁকেছে আয়ুর্বেদ গ্রন্থ ‘অষ্টাঙ্গহৃদয়’। যা খ্রিস্টের জন্মের চারশো বছর পর লেখা। তাতে বলা হয়েছে, ‘একবিংশোতিরাত্রেন বিষং শ্যাম্যতি সর্বথা’। অর্থাৎ একুশতম রাতে বিষের উপশম হয়। কীটলুতাদি বিষ প্রতিষেধ অধ্যায়ের ৬৫ নম্বর শ্লোক যেন বর্তমান লকডাউন সিদ্ধান্তেরই প্রতিধ্বনি। অন্যদিকে, খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশো বছর আগে লেখা সুশ্রুতসংহিতাতে রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে আক্রান্তের বাড়ি, শয্যা, আসন, অলংকার ও ব্যবহার্য জিনিস ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’, কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশনের সময় মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকরা যা বলে থাকেন। এখানে জনপদধ্বংসের উপসর্গ হিসাবে শ্বাস, কাশদূষণ, শিরোরুজা বা মাথা যন্ত্রণা, বমি, নাক দিয়ে জল পড়ার মতো উপসর্গের উল্লেখ রয়েছে। সুশ্রুতের ছয় নম্বর অধ্যায়ের ৩২ ও ৩৩ নম্বর শ্লোকে বলা হয়েছে, স্পর্শের মাধ্যমে, কাশির মাধ্যমে, একই থালায় ভোজন, একই বিছানায় শয়ন করলে, একই কাপড়ে অঙ্গ মার্জনা করলে, এক অলংকার পরিধান করলে কিংবা একই পাত্রে রক্ষিত মলম মাখলে রোগ ছড়ায়। এই উপসর্গিক রোগগুলি একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ‘ওপসর্গিক রোগশ্চ সংক্রমন্তি নরানরং।’

[আরও পড়ুন: লকডাউনে রক্তের আকাল, সংকট মেটাতে শিবির করলেন পুলিশকর্মীরা

গত রবিবার ‘মন কি বাত’-এও প্রধানমন্ত্রী চরকের চিকিৎসাস্থানের শ্লোক আউড়েছেন। সেখানে তিনি উত্তম চিকিৎসকের লক্ষণ ব্যাখ্যা করেছেন। এখনও প্রাচীন ভারতের সেই শাস্ত্র প্রাসঙ্গিক। কতটা প্রাসঙ্গিক, নভেল করোনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এমনটাই জানালেন রাজ্যের আয়ুর্বেদ পরিষদের সহসভাপতি ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র। তাঁর মতে, মডার্ন মেডিসিন আজ যা বলছে, তা অনেক আগেই চরক-সুশ্রুত বলে গিয়েছেন। অনুশীলন করেছেন। কিন্তু বহিরাগতদের আক্রমণে আয়ুর্বেদের সেই ঐতিহ্য নষ্ট হয়েছে। প্রদ্যোৎবাবু জানালেন, একসময় চরক ও সুশ্রুত সংহিতা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হত। অগণিত ছাত্রের হাত ধরে এই দুই গ্রন্থের প্রতিলিপি ও অনুবাদ পাড়ি দেয় চিন, তিব্বত ও অন্যান্য পূর্ব এশীয় দেশে। তাই তো চিনের চিকিৎসাশাস্ত্রে ভারতীয় আয়ুর্বেদের এত প্রভাব।

[আরও পড়ুন: ‘মাস্ক উইথ মেসেজ’, খুদেদের সচেতন করতে অভিনব উদ্যোগ ব্যবসায়ীর

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement