ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কলকাতা থেকে মস্কোর দূরত্ব? উত্তর – ৬ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার। আকাশপথে যেতে ১২ ঘণ্টা। কুইজের প্রশ্ন নয়। ঘটনা হল, খাস কলকাতায় পাওয়া গেল এন্টামিবা মস্কোভস্কি (Entamoeba moshkovskii)। এককোষী পরজীবী। ডায়রিয়া সংক্রমণ ছড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। কলকাতার নাগরিকের মল পরীক্ষায় এমন প্রোটোজোয়ার নমুনা পেয়ে বাস্তবিকই উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্কোয় জন্ম এই পরজীবীর। সেখানকার শীতল জল-হাওয়াতে দিব্য থাকে। কিন্তু কলকাতার মতো ট্রপিক্যাল এলাকায় বাড়বাড়ন্তের কারণ কী? বলা হচ্ছি, ঠান্ডা নোংরা জল খাবার থেকে সংক্রমিত হয়ে শূকরের মধ্যে ছড়ায় এই পরজীবী। আবার শূকর থেকে মানুষের শরীরে। তাহলে আক্রান্ত শূকর থেকে কলকাতায় আসা কোনও ব্যক্তির মলে পাওয়া গিয়েছে। মোদ্দাকথা জুনোটিক ডিজিজ।
আইসিএমআর-এর কলকাতা শাখা নাইসেড গত কয়েকমাস ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া নিয়ে সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষা রিপোর্ট থেকেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। নাইসেড অধিকর্তা ডা. শান্তা দত্তের কথায়, ডায়রিয়ার জন্য দায়ী এমন বেশ কিছু পরজীবী কলকাতার বিভিন্ন অংশে পাওয়া গিয়েছে যেগুলোর কোনও অস্তিত্ব আগে পাওয়া যায়নি।
নাইসেড কর্তার এহেন বক্তব্যে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। বস্তুত, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের মতো বিভিন্ন ধরনের এককোষী প্রোটেজোয়া ক্রমশ বাড়ছে কলকাতায়, যার ফলে বাড়ছে আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো সংক্রামক রোগ। এই পরজীবীগুলি প্রধানত প্রোটোজোয়া গোষ্ঠীর অন্তর্গত এককোষী অণুজীব। যেগুলি মানুষের অন্ত্রে পরজীবী হিসাবে বসবাস করে। এইসব পরজীবীর নমুনা প্রথমে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসে। ওই হাসপাতালের নমুনা পরীক্ষা করেছে নাইসেড।
অপর একটি তথ্য অনুযায়ী, ক্রিপটস্পরিডিয়াম রাইনি নামের এক ধরনের প্রোটোজোয়া যা হরিণের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী তার সন্ধানও মিলেছে কলকাতায়। এর ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে জুনোটিক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন অংশে ডায়রিয়ার নতুন পরজীবীর নমুনা যেমন মিলেছে, তেমনই পরজীবী শনাক্তকরণের জন্য বিশেষ ধরনের কিট তৈরি করা হয়েছে। একসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ডায়রিয়া শনাক্তকরণ সম্ভব এই নতুন কিট থেকে।
এছাড়া ভারতবর্ষের রাজ্যগুলিতে স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃমির সংক্রমণের পরিসংখ্যান এই গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য থেকে পাওয়া গেছে এবং তার ভিত্তিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মিলিত উদ্যোগে স্কুলগুলিতে ডিওয়ার্মিং করা হয়েছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডিওয়ার্মিংয়ের ফলে কৃমি সংক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে। স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের অভিমত, ডায়রিয়া রুখতে স্বচ্ছ ও দূষণমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে, পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে সবাইকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.