অভিরূপ দাস: বৈজ্ঞানিক নাম কোলসিকাম লুটেয়াম। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সুরঞ্জনা। পশ্চিম হিমালয়ের ৪ থেকে ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় থোকায় থোকায় ফুটে থাকে হলদেটে ফুল। দেখতে অনেকটা লিলির মতো। কয়েক হাজার বছরের পুরনো এই গাছের শিকড়ই ছত্রভঙ্গ করছে করোনা ভাইরাসকে (Coronavirus)। জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা JAMA-র জার্নালে এই খবর প্রকাশিত হতেই হইহই পড়ে গিয়েছে।
জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, গ্রিসে ১০৫ জন করোনা আক্রান্তের উপর গবেষণা চালানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫৫ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে ‘কোলকিসিন’ নামে একটি ওষুধ তিন সপ্তাহ ধরে রোজ দেওয়া হয়। দু’হাজার বছরের পুরনো এই ওষুধ ব্যবহার করে আক্রান্তরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।
প্রশ্ন এখানেই। ২০০০ হাজার বছরের পুরনো এলোপ্যাথিক ওষুধ! শহরের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বলছেন, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন সারা পৃথিবী জুড়েই আয়ুর্বেদ ওষুধেই চিকিৎসা চলতো।
কোলকিসিন ওষুধ গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, তা আদতে তৈরি লিলি গোত্রের এক উদ্ভিদ থেকে। সে গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কোলসিকাম লুটেয়াম। এই গাছ থেকেই তৈরি আয়ুর্বেদিক ওষুধ সুরঞ্জনা। আদতে তা একটা গাছের শিকড়।
কীভাবে কোভিড ঠেকাচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন সুরঞ্জনা? আয়ুর্বেদিক কলেজ শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোতবিকাশ কর মহাপাত্র জানিয়েছেন, বিষয়টিতে চমকে যাওয়ার কিছু নেই। গাউটের জন্য এই ওষুধ কাজ করে। অর্থাৎ মেটাবলিক আর্থারাইটিসে কাজ করছে। এছাড়াও এই ওষুধের একটি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি একশন রয়েছে। করোনা সংক্রমণেও ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনাইটিস, ল্যারিঞ্জায়টিসে মৃত্যু হচ্ছে রোগীদের। স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান কাজে লেগে গিয়েছে।
প্রাচীন আয়ুর্বেদে ডিমের কুসুমের সঙ্গে কেশর দিয়ে এই ওষুধ মিশিয়ে আর্থারাইটিসের ব্যথার জায়গায় লাগানো হতো। এর আগে আয়ুশ ক্বাথ (শুকনো আদা, লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ) প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিশা দেখিয়েছিল আয়ুর্বেদ। এবার “নিরাময়” ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদিক সুরঞ্জনার কথা উঠে আসায় খুশি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা।
যদিও গ্রিসের চিকিৎসকরা কোলকিসিনকে এতটা ভরসা করতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, এত কম সংখ্যক রোগীর উপর চালানো এই পরীক্ষার ভিত্তিতে এখনই বলা যাবে না যে করোনা সারাতে ভাল কাজ দিচ্ছে কোলকিসিন। আরও অনেক পরীক্ষা দরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.