টানা বসে থাকলে পায়ে ঝিনঝিন ধরে, কিন্তু সব সময় এটা সাধারণ ব্যাপার মনে করলে ভুল। বেশিক্ষণ লেখালিখি বা কম্পিউটারে টাইপ করলে যদি হাতেও এমন অনুভূতি হয় তাহলে সাবধান। নিউরো সার্জন ডা. কৌশিক শীল বললেন নার্ভে চাপ পড়েই এমন হয়।
দেবারতি এক প্রখ্যাত আইটি সংস্থায় কর্মরত। বয়স ৩৮ বছর। বড় বড় প্রোজেক্টের দায়িত্বে সে আছে। যথারীতি সারাদিন কম্পিউটার ঘাড় গুঁজে কাজ করতে হয়। হঠাৎ করেই বেশ কিছুদিন ধরে হাতে ঝিনঝিন ধরা শুরু হয়েছে। মাঝেমধ্যে অনেকক্ষণ কোনও জিনিস ধরে রাখলে হাত কাঁপে। তিন-চারমাস ধরে এই সমস্যা হচ্ছে, তখন নিরুপায় হয়ে চিকিৎসা করাতে আসে।
সমস্ত টেস্ট করে ধরা পড়ল হাতের কবজির নার্ভে তার চাপ পড়েছে। নার্ভ চেপে গিয়েই এমন সমস্যা হচ্ছে। এই অসুখ এখন শুধু কর্মরতদেরই নয়, স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও বেশ প্রকট।
আরও যেটা সমস্যার তা হল এই লক্ষণ থাকলেও অনেকেই তা অবহেলা করে। তখন আরও জটিল হয় অসুখ।
দেবারতির সমস্যার একমাত্র সমাধান হল অপারেশন করে চিকিৎসা। যা মোটামুটি সারতে বেশ সময়ের ব্যাপার। কাজেই বোঝা যাচ্ছে এই আপাত নিরীহ লক্ষণ কতটা মারাত্মক হতে পারে?
ঠিক কী হয়?
সাধারণত নার্ভ চেপে গেলে অল্প বয়সে এমন হয়। হাতে ঝিনঝিন ধরতে শুরু করে। এই চাপ কবজিতে পড়ে, যেখানে টিস্যু বেড়ে হাতের মেন নার্ভ, মেডিয়ান নার্ভ বা মধ্য নার্ভের উপর চাপ পড়ে। থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড থাকলে এই টিস্যুতে চাপ পড়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
এছাড়া একই কাজ অনেকদিন ধরে করতে থাকলে – যেমন ড্রিল মেশিন চালানো, কম্পিউটার টাইপিং ইত্যাদি কাজ করলে কবজিতে মুভমেন্ট বেশি হয় ফলে চাপ বাড়ে। মহিলাদের এই ধরনের টিস্যু গ্রোথ ও বেশি হয়। একে ডাক্তারি পরিভাষায় কার্পেল টানেল সিনড্রোম বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, তারপর না কমলে সার্জারি করতে হয়।
যারা ভারী কাজ করেন বা খেলাধুলা করেন, তাদের মেরুদণ্ডের হাড় বেড়ে নার্ভে চাপ পড়ে। তা ঘাড়ে হলে হাত ঝিনঝিন করে, লাম্বার স্পাইনে হলে পায়ে ঝিনঝিন করে। কিছুদিন পরে হাতে ও পায়ে নার্ভের ব্যথা শুরু হয় (Newropathic Pain)। পরের দিকে প্রস্রাবের সমস্যা হয়। অনেক সময়ে শিরদাঁড়ার ডিস্ক বেরিয়ে গেলে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। এই ধরনের সমস্যা এক্স-রে এবং এমআরআইতে ধরা পড়ে এবং শীঘ্র চিকিৎসা না করলে হাত ও পায়ের নার্ভ দুর্বল হতে পারে।
বয়সকালে বা ডায়াবেটিস থাকলে প্রিরেফারাল নিউরোপ্যাথি হতে পারে। এতে নার্ভের উপর কেমিক্যাল ড্যামেজ হয়। এর জন্যে তার সেন্সিবিলিটি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নিউরোপ্যাথিক পেনের ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। না হলে এই সমস্যা একবার বেড়ে গেল একে পুরো ঠিক করা কঠিন। অনেক সময় ক্যানসারের কেমোথেরাপি চলার ফলেও অনেকের এমন হয়।
কী করবেন
প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।
দীর্ঘক্ষণ হাত বা পায়ে বেশি চাপ নিলে এমন সমস্যা হয়। তাই বসে কোনও কাজ করলে ৩০ মিনিট পরে একটু দাঁড়াবেন। দাঁড়িয়ে আপনার কাজ হলে, আধঘণ্টা পরে একটু বসবেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু শরীরচর্চা করলে কষ্ট কিছুটা হলেও কমে। তবে তা ডাক্তারের পরামর্শমতো।
সব সময় জুতো পরে থাকবেন। জুতো যেন নরম হয় ভিতরে ও বাইরে পায়ের পাতার যত্ন নিন।
ধূমপান বা মদ্যপান বর্জন করুন।
ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো ওষুধ সঠিক সময়ে খান। নিজের মতে বা ইন্টারনেটে দেখে সেলফ মেডিসিন একেবারেই ভাল নয়।
কম্পিউটারে কাজ করার সময় প্রতি ২০ মিনিটে একবার ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসুন।
সব অসুখের মতো হাত ও পায়ের ঝিনঝিন প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে সারে। না হলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে যেতে পারে, সার্জারির ঝামেলাও পোয়াতে হতে পারে।
ফোন – ৮০১৭১১০২১৩
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.