ছবি: প্রতীকী
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যদি রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে মা ও ভ্রূণের নানা ক্ষতি হতে পারে। সাবধান করলেন কার্ডিওলজিস্ট ডা. গোপাল ঘোষ। তাঁর সঙ্গে কথা বললেন সোমা মজুমদার।
সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, গর্ভাবস্থায় ৬-৮% মহিলার ব্লাড প্রেশার (Blood Pressure) বেড়ে যায়। শুধুমাত্র আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ থাকলেই নয়, স্বাভাবিক রক্তচাপ রয়েছে, এমন মহিলাদেরও গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক না রাখলে হবু মা ও গর্ভস্থ সন্তানের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ঝুঁকি থাকে। এমনকী মা ও শিশুর জীবনহানিরও আশঙ্কা থাকে। তাই ব্লাড প্রেশার বেশি থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই সতর্ক হওয়া জরুরি।
প্রেগন্যান্সি ও হাইপারটেনশন-
মায়ের আগে থেকে ব্লাড প্রেশার থাকলে কিংবা প্রেগন্যান্সির (Pregnancy ) প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে যদি ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায় তাকে ক্রনিক হাইপারটেনশন (Chronic Hypertension) বলে। আবার গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে ব্লাড প্রেশার বাড়লে তাকে জেশটেশনাল হাইপারটেনশন (Gestational Hypertension) বলে।
ঝুঁকি কখন-
গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্ল্যামশিয়া বা এক্ল্যামশিয়া হাইপারটেনশন হলে মা ও শিশুর শরীরে সবচেয়ে বেশি জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মায়ের আগে থেকে ব্লাড প্রেশার থাকলে কিংবা গর্ভাবস্থায় প্রেশার বাড়লে দু’ক্ষেত্রেই এক্ল্যামশিয়া হতে পারে। তবে জেশটেশনাল হাইপারটেনশন হলে এক্ল্যামশিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এক্ল্যামশিয়ায় ক্রিয়েটিনিন বেড়ে মায়ের কিডনির ক্ষতি পারে, প্লেটলেট কমে যেতে পারে, লিভার-সহ মায়ের বিভিন্ন অঙ্গেও প্রভাব পড়তে পারে। এমনকী মায়ের বারে বারে জ্ঞান হারানোর সম্ভাবনাও থাকে। সারা বিশ্বে প্রেগন্যান্সিতে মা ও শিশুর মৃত্যুর একটি বড় কারণ হল এক্ল্যামশিয়া হাইপারটেনশন। তাই এক্ল্যামশিয়া প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা খুবই জরুরি।
চেক আপ জরুরি-
সাধারণত ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে গর্ভবতী মহিলার শরীরে খুব একটা লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আবার সবরকম ব্লাড প্রেশারের ওষুধও প্রেগন্যান্সিতে দেওয়া যায় না। তাই গর্ভাবস্থায় অ্যান্টিনেটাল চেক আপে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি চেকআপে ব্লাড প্রেশার মাপলে মায়ের ব্লাড প্রেশারের মাত্রা ঠিক আছে কিনা বোঝা যাবে। হবু মায়ের ব্লাড প্রেশার ১২০/৮০-এর মধ্যে থাকা উচিত।
যদি সিস্টোলিক ১২০-১৩৯ এবং ডায়াস্টোলিক ৮০-৮৯-এর মধ্যে থাকে তাহলে তাকে বলা হয় স্টেজ-১ হাইপারটেনশন। এক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও প্রেশার যেন আর বেড়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে স্টেজ ২ অর্থাৎ উপরের প্রেশার ১৪০ এবং নিচের প্রেশার ৯০-এর বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে।
ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে-
গর্ভাবস্থায় ব্লাড প্রেশার থাকলে প্রথম থেকেই বেশি সতর্ক হোন। প্রত্যেকদিন শরীরচর্চা বা হাঁটা দরকার। এ ছাড়াও প্রেগন্যান্সিতে মায়ের স্বাভাবিক ওজন বাড়লেও অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত ফল ও পুষ্টিকর খাবার খান। নোনতা ও ফ্যাটযুক্ত খাবার না খেলেই ভাল। ক্যাফিনেটেড ড্রিঙ্ক, অ্যালকোহল এবং ধূমপান গর্ভাবস্থায় একেবারেই উচিত নয়। মায়ের ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানোও খুবই দরকার। আর নিয়মিত চেক আপ ও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া গর্ভাবস্থায় চলবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.