সবুজও আয়রনের উৎস। মাংস ছাড়া আর কী খেয়ে আয়রনের প্রয়োজন মিটতে পারে? জানালেন ডায়াটিশিয়ান সৌভিক দে।
লোহিত রক্তকণিকার প্রধান উপাদান আয়রন (Irone)। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে অক্সিজেন বহনকারী রক্তকণিকার ঘাটতি দেখা দেয়, এর ফলস্বরূপ লোহিত রক্তকণিকা কমে যায় ও অ্যানিমিয়া রোগ হয়। এছাড়া শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও প্রকট হতে পারে। তাই সুস্থ শরীরে জন্য খাবারে প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়রন। তবে তার জন্য সবসময় মাছ-মাংস খেতে হবে তা কিন্তু নয়। সবজি ও ফলে উপস্থিত আয়রনও শরীরের জন্য খুব জরুরি।
আয়রনের জন্য ভিটামিন সি –
খাদ্যের ভিত্তিতে আয়রনকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ‘Heme’ যা প্রাণীজ খাদ্যের মাধ্যমে পাওয়া যায় এবং ‘Non-Heme’ যা উদ্ভিজ্জ খাবারে থাকে। এই ‘Non-Heme’ আয়রন শরীরে শোষিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন। তাই উপরিউক্ত খাদ্যগুলির সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ডায়েটে রাখলে উপকার।
আয়রন যুক্ত সবজি
পালংশাক, কপি পাতা, লেটুস শাকের মত সবুজ সবজি আয়রনের উৎকৃষ্ট উৎস। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনন্দিন আয়রনের প্রয়োজনের ২.৫-৬.৪ মিলিগ্রাম অর্থাৎ শতকরা (১৪-৩৬%) প্রদান করে সবুজ শাক-সবজি।
অনেকেই জানেন না ১০০ গ্রাম পালং শাকে যে পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায় তা সমপরিমাণ মাংস অথবা স্যামন মাছের থেকে ১.১ গুণ বেশি।
অন্যান্য সবুজ সবজি যেমন ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট (ক্ষুদ্র বাঁধাকপি) ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন আয়রনের প্রয়োজনের ৬-১০ শতাংশ সরবরাহ করে।
বিট একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার যা একাধারে আয়রন, ভিটামিন সি ও ফোলেট প্রদান করে।
আলুতেও আয়রন, ভিটামিন সি, ফাইবার থাকে।
সোয়াবিন আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি অতিপুষ্টিকর খাবার। শরীর গঠনে, ওজন নিয়ন্ত্রণে, চুল ও ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে।
শস্যদানার মধ্যে ব্ল্যাক বিনস আয়রন সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
কাবলি ছোলা আয়রন, ভিটামিন সি, ফোলেট সমৃদ্ধ যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
প্রতিদিন আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের সব থেকে সহজ উপায় হল ব্রাউন রাইস। এর সঙ্গে সবুজ শাকসবজি এবং পাতিলেবু থাকলে আয়রনের সঙ্গে ভিটামিন সি-ও মিলবে।
উৎস যখন ফল –
তরমুজ, স্ট্রবেরি আয়রন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
বেদানাতেও আয়রনের সঙ্গে ভিটামিন এ, কে, ই ও সি এছাড়া ফাইবার, প্রোটিন, ফোলেট, পটাশিয়াম থাকে।
খোসা সমেত আপেল খেলেও আয়রনের ঘাটতি কিছুটা কমে।
শুকনো ফলের মধ্যে এপ্রিকট, কিসমিস, খেজুরে আয়রন ও ফাইবার থাকে।
চিনাবাদাম, আমন্ড, তিল বীজ, হ্যাজেল নাট, কুমড়ো বীজ, আখরোট, কাজু, পাইন বাদাম এগুলিতে আয়রনের সঙ্গে জিঙ্ক, ভিটামিন কে, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম থাকে।
মশলা যেমন ধনেপাতা, পুদিনা পাতা রান্নায় ব্যবহার করলে অথবা লেবুর জলের সঙ্গে খেলে শরীরে আয়রন দ্রবীভূত হয় ভাল। রোজ সকালে উষ্ণ জলে হলুদ, মধু, লেবু দিয়ে পান করলেও শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়ানো যায়।
উপকারী তোফু-
সোয়াবিন দুধ বা সোয়া মিল্ক থেকে যে পনির তৈরি হয় সেটাই তোফু। ১০০ গ্রাম তোফু শরীরে ২.৭ গ্রাম আয়রন সরবরাহ করতে পারে। এটা গ্লুটেন মুক্ত, কম ক্যালোরি যুক্ত, কোলেস্টেরলবিহীন একটি খাবার। ক্যানসার, হৃদরোগ, অস্থিক্ষয় প্রতিরোধেও সাহায্য করে তোফু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.