বাচ্চাদের ইউরিন ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে চিন্তা দীর্ঘ হতে পারে। বছরখানেক পর আবার অন্যভাবে ফিরে আসে। যার প্রথমেই রয়েছে কিডনির অসুখ। তাই অবহেলা নয়। বললেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এর পেডিয়াট্রিক সার্জন ডা. পার্থপ্রতিম গুপ্ত ।
শিশুকালের অসুখ বড় বয়সে আরও বড় আকারে ফিরে আসে। তেমনই একটি সমস্যা হল ছেলেবেলায় ইউরিন ট্রাক্ট ইনফেকশন। যার প্রভাব মারাত্মক পড়ে কিডনিতে। তাও কিনা সমস্যা হয়ে যাওয়ার বছর দশেক পরেও রয়ে যায় সেই সম্ভাবনা। আর এই নিয়ে অবহেলা করলে সেটা বারবার ফিরেও আসে। তখন আরও জটিল আকারে পারিপার্শ্বিক সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। কাজেই ইউরিন ট্র্যাক্টে কোনও রকম অসুবিধা হলে ভীষণ সিরিয়াসলি ব্যাপারটি নিতে হবে।
ছেলেরাও বাদ নেই
একদম ছোট বয়সে অর্থাৎ ৩ বছর বয়সের পর থেকে ১০-১২ বছর পর্যন্ত শুধু যে মেয়ে শিশুদের এই ইনফেকশনের প্রবণতা বেশি তা নয়। এটা ছেলেদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। এবং ছেলেদের ছোট বয়সের ইউরিন ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বড় বয়সে নানা সমস্যার কারণও হয়। কাজেই সব শিশুর বাবা-মাকেই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
কখন সাবধান হতে হবে?
কিছু লক্ষণ থাকলে সতর্ক হতে হবে। প্রথমত, শিশুর ইউরিনের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ১৫-২০ মিনিট অন্তর বারবার প্রস্রাব পাবে। ২৫-৩০ বার হতে থাকে একদিনে। এমন হলে শিশুরা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। রাতে অর্থাৎ ঘুমের সময়ও বারবার প্রস্রাব পাবে।
প্রস্রাবে উগ্র গন্ধ, করতে গেলে জ্বালাভাব, সঙ্গে জ্বর থাকতে পারে। এই লক্ষণ থাকলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হয়েছে এটা মনে করা হয়। সেটা নিশ্চিত হতে ইউরিনের টেস্ট করা দরকার। এটা ছেলে-মেয়ে যারই হোক, সর্বপ্রথম আমরা শিশুর পেট টিপে ভালোভাবে দেখি। ক্লিনিক্যাল আই দ্বারাই বোঝা সম্ভব শিশুর ইউটিআই হয়েছে কি না, সঙ্গে কিডনি কতটা ঠিক আছে সবই বোঝা সম্ভব। তারপর বাকি টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কারণ অনেক কিছু
অনেক সময় শিশুদের বারবার প্রস্রাবের প্রবণতা মানসিক চাপের কারণেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে স্কুলে তাকে নিয়ে কোনও ঠাট্টা-রসিকতা করা হচ্ছে কি না।
পরিবারে বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি হচ্ছে কি না, পরিবারে সবচেয়ে প্রিয় মানুষের বিয়োগ, স্কুলের রেজাল্ট ঠিক হচ্ছে কি না, স্কুলে বন্ধু-বান্ধব রয়েছে কি না। এই সব কারণেও অনেক সময় ইউটিআই-এর মতোই লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এখন শিশুদের অধিক সময় ডায়াপার পরিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যা থেকে শিশুদের ইউটিআই-এর সমস্যা বাড়ছে।
ছেলেদের একবছর বয়সের মধ্যে একাধিকবার যদি ইউটিআই হয় তাহলে দেখতে হবে শিশুর ইউরিনারি অর্গানের কোনও গঠনগত ত্রুটি রয়েছে কি না।
তাহলে কিডনির সঙ্গে যে মূত্রনালি যুক্ত রয়েছে তার গমনপথ সুগম হয় না। বাধা থাকলে সে ক্ষেত্রে মূত্রের সমস্যা হয়, মূত্র জমে থেকে ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হয়। এছাড়া মূত্রনালি থেকে মূত্র ঠিকমতো বেরতে না পেরে উলটো পথে কিডনিতেই চলে আসে। এতে কিডনির ক্ষতি হয়। কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়। কিডনির সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা সারাজীবন প্রয়োজন হয়। এই সমস্যা মেয়েদেরও হয়। যার নাম, ভিইউআর। এদেরও স্ট্রাকচারাল ডিফেক্টের জন্যই এমন হয়। ইউটিআই থেকে ক্রমশ কিডনির সমস্যা শুরু হয়।
বড় বয়সে এর প্রভাব
শিশুকালে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হলে তা যদি কিডনি পর্যন্ত ছড়ায় তা হলে তার প্রভাব কিন্তু বড় বয়সেও রয়ে যায়। শিশুর গ্রোথ ঠিক হয় না অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়ে
না, কিডনির সমস্যা বড় বয়সে ফিরে আসতে পারে। তাই গ্রোথ ঠিক না হলে পরীক্ষা করে দেখা উচিত শিশুর মূত্রনালিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, বা কিডনিতে এর প্রভাব পড়ছে কি না। অনেক সময় ইউটিআই প্রকাশ নাও পেতে পারে, কিন্তু গ্রোথ ব্যহত হয়। তখন সতর্ক হতে হবে। ছোট বয়সে ইউটিআই হলে কিডনির কার্যক্ষমতা দুর্বল হয় পরবর্তীকালে।
তাই সময়ে এই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.