শ্বাসকষ্টের সমস্যার মানেই তা ফুসফুসজনিত অসুখের কারণে হবে তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে শ্বাসকার্যে বাধার একটি অন্যতম কারণ নাকে পলিপ। কী করে বুঝবেন সমস্যা নাসিকাতেই লুকিয়ে? সে ব্যাপারেই বললেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. অতীশ হালদার।
আমরা নাক, কান, গলার বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মাঝে মাঝেই এক বিশেষ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হই। প্রায়ই বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের আমাদের চেম্বারে এনে বলেন যে ‘‘ডাক্তারবাবু আমার সন্তানের নাকে পলিপ হয়েছে বা বহুদিন ধরে পলিপের সমস্যায় ভুগছে, নাক দিয়ে একবারেই শ্বাস নিতে পারছে না।’’ কিন্ত জেনে রাখা ভালো যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা পলিপ-এর জন্যে হয় না। সাধারণ মানুষ যেটাকে পলিপের সমস্যা ভাবছেন সেটা নাকের ভেতরের একটা স্বাভাবিক অংশের বৃদ্ধি। যা ঠান্ডা থেকে, ধুলোবালি বা অ্যালার্জির জন্যে বা নাকের মধ্যেকার হাড় (সেপটাম) এর বাঁকা, নাকের ভেতরের ইনফিরিওর টারবিনেট অংশের ফুলে যাওয়া ইত্যাদি থেকে হয়। এগুলি অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।
নাকের ভেতরের অংশকে দু’ভাগে ভাগ করে ন্যাসাল সেপটাম। সেটা বেশির ভাগ মানুষেরই সামান্য বাঁকা থাকে। ফলে নাকের মাঝখানের হাড় বা সেপটাম যেদিকে বাঁকা থাকে তার উলটো দিকের ইনফিরিয়র টারবিনেট অংশ ফুলে যায়। ফলে নাকটা বন্ধ মনে হয়। এটা নর্মাল শরীরবৃত্তিও প্রক্রিয়া। কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
তাহলে কি পলিপ বলে কিছু নেই?
নিশ্চয়ই আছে। মানুষের নাকের ভেতরে সাধারণত দুই ধরনের পলিপ হয়। মাক্সিলারি পলিপ (antrochoanal), যেটা একদিকের নাকে দেখা যায়। আর ইথময়ডাল পলিপ, যেটা নাকের ভেতরে দুই দিকেই হয়।
মাক্সিলারি পলিপ (Antrochoanal) কমবয়সি পেশেন্ট দের মধ্যে দেখা যায়। প্রধানত যে সব বাচ্চাদের নাকের হাড় বাঁকা থাকে তাদের সেই দিকের মাক্সিলারি সাইনাসে হওয়া কম ঢোকে। ফলে সেই সাইনাসের ভেতরের মিউকোসা বা আস্তরণ ফুলে যায় আর ধীরে ধীরে নাকের ভেতরে চলে এসে নাকের ভেতরের দিকে ঢুকে এক দিকের নাক বন্ধ করে দেয়। ফলে সেই নাকে হওয়া চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সব ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি বা সিটি স্ক্যান করে ডায়াগনোসিস করে অপারেশন করতে হয়। এবং এই অপারেশন করে পলিপ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব।
ইথময়ডাল পলিপ সাধারণত ৩০ বা ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অ্যালার্জি এই ধরনের পলিপ হবার জন্যে অন্যতম প্রধান কারণ। এটি দুই দিকের নাকের ভেতরেই আঙুরের গোছার মতো ঝুলে থাকে। নাক থেকে সর্বক্ষণ জল গড়ায়। নাক বন্ধ থাকে। এই ক্ষেত্রেও স্টেরয়েড স্প্রে দিয়ে একটু কমিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে সিটি স্ক্যান করে এন্ডোস্কোপিক অপারেশন করে এই পলিপ কেটে বাদ দেওয়া উচিত। তবে অপারেশন এর পর ভবিষ্যতে এই ধরনের পলিপ আবার হবার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া ও আর একধরনের পলিপ নাকে হয়, যেটা কে বলে ব্লিডিং পলিপাস অফ নোজ। এই পলিপ সাধারণত খুব ছোট হয় এবং এই পলিপ দেখতে রক্তবর্ণ। পেশেন্ট এই রোগ হলে নাকের রক্তপাত নিয়েই ডাক্তারদের কাছে আসেন। এই ক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে নেওয়া খুব জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.