একটু বয়স বাড়লেই অনেকের ত্বকে কালো ছোপের প্রাদুর্ভাব হয়। এটা সাধারণ ব্যাপার নয়। তবে রয়েছে অসাধারণ চিকিৎসা, যা উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দেয়। সে ব্যাপারেই বললেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. রূপক কিশোর মু্খোপাধ্যায়।
ত্বকে কালো কালো ছোপ! এটা একটা বয়সের পর প্রায় অধিকাংশ মহিলারই একটা বড় সমস্যা। এটা ঠিকই যে, এই সমস্যা মহিলাদেরই বেশি দেখা যায়। যার নাম ডাক্তারি পরিভাষায় ‘মেলাজমা’ বা ‘মেস্তা’ (Melasma)। এমন হলে অধিকাংশই যেটা করেন, কেন হচ্ছে সমস্যা তার চেয়ে বেশি ভাবেন কীভাবে এ থেকে মুক্তি মিলবে সেটা নিয়ে। ফলত এটা-ওটা ক্রিম লাগিয়ে, পার্লারে গিয়ে দাগ-ছোপ তোলার দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। তাতে সমস্যা আরও গুরুতর হয়।
কারণ জানা দরকার
আমাদের শরীরে বা ত্বকে ‘মেলানিন’ তৈরি হয়। মেলানিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ, যা মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে তৈরি হয়। এটি ত্বককে বাইরের রোদ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু নানা কারণে যদি মেলানিন অধিক মাত্রায় তৈরি হতে শুরু করে তখনই ত্বকে কালো ছোপ দেখা দেয়। এটি সাধারণত কপালে, নাকের উপরে, গালে দেখা যায় যখন মেলানিন বেশি মাত্রায় তৈরি হয়।
কাদের মেলানিন বেশি তৈরি হয়?
মহিলাদের হরমোন জনিত সমস্যা থেকে, বেশি রোদে ঘুরতে হয় যাঁদের, তাঁদের এই ধরনের ছোপ বা দাগ দেখা যায়। তবে ঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এই সমস্যা
সেরে যায়।
সমাধানের নতুন পথ
গ্লুটা থিওয়ান, ক্যামিক্যাল পিলিং, প্লাজমা চিকিৎসা করলে এক্ষেত্রে খুব উপকার পাওয়া যায়। চিকিৎসা চলাকালীন এবং তারপরে ‘সান স্ক্রিন লোশন’ ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজনীয়।
গ্লুটাথিওয়ান একপ্রকার ইন্ট্রাডার্মাল ইনজেকশন, যা ১৫ দিন বাদে বাদে মেলাজমা দাগ বা ছোপগুলির উপর দিতে হয়। এই চিকিৎসাটি সম্পূর্ণ হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। এই ইনজেকশনটি নেওয়ার পরে কোনও ব্যথা বা যন্ত্রণা থাকে না। এটা নিয়ে ব্যক্তি তার বাড়িতে বা কর্মস্থলে চলে যেতে পারেন। এই চিকিৎসাটি করতে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। যাদের বেশি পরিমাণে মেলাজমা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সেলাইনের মাধ্যমে ইনজেকশনটি দেওয়া হয়। ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ৮-১০ বার ইনজেকশনটি দিতে হতে পারে। শুধু মাত্র কিডনি সমস্যাজনিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই ইনজেকশনটি ব্যবহার করা হয় না।
কেমিক্যাল পিলিং চিকিৎসাটি ১৫ দিনের ব্যধানে করা হয়। এই কেমিক্যাল পিলিংটি ত্বকের যে জায়গায় দাগ বা ছোপ আছে শুধু সেই জায়গায় ব্যবহার করা হয়। কেমিক্যাল পিলিং পদ্ধতিতে রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করে ত্বকের উপরি স্তরগুলি অপসারণ করে, নিচের তরুণ ত্বককে প্রকাশ করে।
এই চিকিৎসা পদ্ধতি ত্বকের সূক্ষ্মরেখা, বলিরেখা ব্রণ, দাগ, অমসৃৃণ ত্বক, ত্বকের রং, কালো ছোপ এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে এবং ত্বককে আরও উন্নত করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রবণ রয়েছে। কোন দ্রবণটি কোনও ধরনের সমস্যায় ব্যবহার করা যাবে তা ব্যক্তির ত্বকের অবস্থা কেমন তার উপর নির্ভর করে। এই চিকিৎসাটি করতে ৩০ মিনিট
সময় লাগে।
এবার বলি প্লাজমা চিকিৎসার কথা। প্লাজমা (PRP/GFC)- PRP হল Platelet Rich Plasma এবং GFC হল Growth Factor concentrate Plasma । প্লাজমা এবং প্লেটলেট এই দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত এক ধরনের বিশেষ তরল পদার্থ যা রোগীর রক্ত থেকে নিয়ে ত্বকের সেই নির্দিষ্ট স্থানে দেওয়া হয়।
এই চিকিৎসার দ্বারা কেলাজেন তৈরি হয়। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। GFC এবং PRP পদ্ধতি এক, কিন্তু GFC টিউবের মধ্যে প্লাজমা আরও ভালো কাজ
করতে পারে। এই চিকিৎসাটি মাসে একবার করে করতে হয়। এবং ৫-৬ মাস যদি করা যায় তাতে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটা করতে দেড়ঘণ্টা সময় লাগে।
তাই ত্বকে, বিশেষত মুখে, নাকে এমন কালো ছোপ যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে দেরি না করে, ফেলে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সঠিক ট্রিটমেন্ট করুন। উপকার মিলবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.