পায়ের শিরায় আলসার হলে, একটু সজাগ থাকলেই তা বোঝা যায়। কিন্তু বুঝেও না বুঝলে সমস্যা আরও গভীর হয়। এখন সমাধানও মাত্র কয়েক মিনিটে সম্ভব। তবে অভাব রয়েছে সচেতনতার। এ নিয়েই কথা বললেন ইন্টারভেনশন্যাল রেডিওলজিস্ট ডা. অভীক ভট্টাচার্য। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
আলসার (Ulcer) কিন্তু বেশ মারাত্মক আকার নিতে পারে, তা শরীরের যেখানেই হোক না কেন। সাধারণত প্রতিদিনের কাজ করতে গিয়ে যাঁদের পায়ে খুব চাপ পড়ে তাঁদের, পায়ের শিরায় এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তা থেকে কিন্তু পায়েও আলসার হয়। সাধারণত দেখা যায়, এদের পায়ের শিরা ফুলে ওঠে ও চামড়ার উপরে গাঢ় নীলচে রঙের রেখা ফুটে ওঠে।
ঠিক কী হয় এই অসুখে?
আমাদের পায়ে যে ভেন বা শিরা থাকে তা দুরকম। এক, ডিপ ভেন, যা পায়ের পেশী থেকে রক্তকে হার্টে পৌঁছে দেয়। দুই, সুপারফিশিয়াল ভেন, যার সাহায্যে চামড়ার তলার রক্ত হার্টে এসে পৌঁছয়। পা থেকে হার্টে রক্ত চলাচলের পদ্ধতিকে বলা হয় ভালভ মেকানিজম। এই ভালভ যদি কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন রক্ত ঠিকমতো হার্টে এসে পৌঁছতে পারে না এবং সেই দূষিত রক্ত পায়ে জমাট বাঁধে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এই ফুলে যাওয়া রক্ত শিরাকে ভেরিকোজ ভেন (Varicose veins) বলে। যার ফলে পা ফুলে যেতে পারে, শিরা ফেটে পা থেকে রক্ত বেরোতে পারে, পায়ে বা শিরায় বড় ঘা হতে পারে।
ভেরিকোজ ভেন আর আলসার দুটোই কি এক অসুখ?
ভেরিকোজ ভেনের লক্ষণ প্রচুর মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তবু খুব বাড়াবাড়ি না হলে চিকিৎসা করান না। এই ব্যাপারটা উপেক্ষা করলে পায়ে বড় ঘা হতে পারে যাকে আমরা বলি নন-হিলিং ভেনাস আলসার। এই ধরনের ঘা শুধু ওষুধ খেয়ে সারে না। তবে আলসার, শিরা ও ধমনিতে– দুটি কারণেই দেখা যেতে পারে। তার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ডপলার পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া প্রয়োজন।
বাইরে থেকে কী লক্ষণ দেখলে রোগ বোঝা সম্ভব?
চামড়ার তলায় কেঁচোর মতো শিরা ফুলে ওঠা, পায়ে কালো কালো ছোপ বা ঘা হওয়া, ঘুমের মধ্যে পা থেকে রক্তপাত হওয়া, বিশ্রাম নেওয়া অবস্থাতেও পায়ের পেশীতে কামড়ে ধরার মতো ব্যথা হওয়া, – এই সব লক্ষণই ভেরিকোজ ভেন ও তা থেকে আলসার হলে প্রকাশ পায়।
একটানা অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। পা ফুলে যায়। গোড়ালিতে অসহ্য যন্ত্রণা করে। পা ফেলতে গেলে শরীর টলে যায়।
কাদের ক্ষেত্রে এই অসুখ হওয়ার প্রবণতা বেশি?
প্রথমত, পায়ের নিষ্ক্রিয়তা। যদি এমন জীবনযাত্রা হয় যেখানে হাঁটাচলা একেবারেই কম, সেক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার অভ্যেস থেকে এই রোগ হওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, স্থূলতার কারণেও পায়ের এই সমস্যা হতে পারে। চতুর্থ কারণ, বংশগত। সব শেষে, মহিলাদের প্রেগন্যান্সিতেও ভেরিকোজ ভেন দেখা যেতে পারে।
কতটা মারাত্মক হতে পারে এই অসুখ?
ভেরিকোজ ভেন সব মানুষের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক নয়, কিন্তু কিছু মানুষের আলসার এবং রক্তপাতের কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই কারণে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং শক্তি হ্রাস পায়, রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকতে পারে, এবং এই জমাট রক্ত হার্টে বা ফুসফুসের ধমনিতে চলে গিয়ে গুরুতর সমস্যা ডেকে আনে।
এই সমস্যা প্রতিকারের উপায়?
ভেরিকোজ ভেন প্রাথমিক অবস্থায় অধিকাংশই অবহেলা করেন, রোগ লুকিয়ে রাখেন। ফলত তা থেকে আলসার হয়ে যায়। এই অসুখ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে তার অনেক রকম চিকিৎসা রয়েছে। জীবনধারার পরিবর্তন, ব্যায়াম আর বিশেষ মোজার মাধ্যমে রোগের অবনতি আটকানো সম্ভব। কিন্তু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে সেক্ষেত্রে অপারেশন দরকার। তবে বর্তমানে লেজার বা রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন পদ্ধতিতে একদম মিনিম্যালি ইনভেসিভ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই একদম সূক্ষ্ম কেটে সেখানে কিছু ইনজেকশন প্রয়োগ করে ভেরিকোজ ভেন বা আলসার হওয়া ভেনকে বাদ না দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে নিডলের মধ্য দিয়ে লেজার বা রেডিওফ্রিকোয়েন্সি প্রোব পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভেইনকে বন্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে রেজাল্ট খুবই ভাল। কাটাছেঁড়া নেই, অপারেশন পরবর্তী সেলাই করার দরকার নেই, রক্তপাতের সম্ভাবনা নেই আর অপারেশনের পর রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা করে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। তাই চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, রোগ লুকিয়ে না রেখে প্রথমেই লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের কাছে আসুন। এখন উপায় অনেক, দরকার শুধু সচেতনতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.