দু’কানেই কি শুনতে পাচ্ছেন? নাকি একটা খোলা, একটা বন্ধ? ইতিউতি চিন্তাভাবনা না করে আসল কারণ চিনুন। ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. সব্যসাচী চক্রবর্তী-র কথায়, কানেও নাকি স্ট্রোক হয়। তাঁর কথা শুনে এই প্রতিবেদন লিখলেন জিনিয়া সরকার।
হঠাৎ কানে শুনতে পাচ্ছেন না! স্ট্রোক হয়নি তো? ব্রেন স্ট্রোক, না কি হার্ট স্ট্রোক! যাই হোক না কেন, তার জন্য কানে শুনতে অসুবিধা কেন? খুব অবাক লাগছে? পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে ভুল পড়ছেন না কি! এটা মনে হওয়াই তো স্বাভাবিক। এই উপসর্গের ঠিকুজি-কুষ্টি দূরে থাক, চেনা জানা রোগের যে প্রকাশ তার অনেক ঊর্ধ্বে এই লক্ষণ। আসলে এটা স্ট্রোকের কারণেই হয়। কিন্তু কানের স্ট্রোক (Ear Stroke)! এই অসুখের ব্যাপারে অনেকেই জানেন না।
কানের স্ট্রোকের প্রকোপ যে কম তা একেবারেই নয়। বরং অজ্ঞতায় গোল্ডেন আওয়ারও পেরিয়ে যায়। শোনার পথ ক্রমশ ম্লান হতে থাকে। কানে স্ট্রোকের ফলে হঠাৎ করেই শুনতে পান না রোগী। যেমন ব্রেন স্ট্রোক হলে হঠাৎ করে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে মস্তিষ্ক
কাজ করতে পারে না। ঠিক তেমন। ফলে হঠাৎ করেই বধিরতা প্রকাশ পায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝতেই পারেন না রোগী ঠিক কী হল। সমস্যা আরও জটিল হয়। হতে পারে একজন বসে সিনেমা দেখছেন, ফোনে কথা বলছেন, কারও সঙ্গে বসে গল্প করছেন, হঠাৎ করেই এমন হতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় জেনে রাখুন।
কানে স্ট্রোক ও গোল্ডেন আওয়ার:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই অসুখের নাম ‘সাডেন সেনসরিনিউরাল হিয়ারিং লস’। এতে করে কয়েক সেকেন্ড আগেও যে মানুষটা শুনতে পাচ্ছিলেন, তিনি হঠাৎ করেই শুনতে পাবেন না এক কানে। কিন্তু কেউ-ই সেটা বুঝতে পারেন না, বা সেভাবে এই অসুখ সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকার জন্য প্রথমেই সঠিক চিকিৎসকের কাছে যান না। এক্ষেত্রেও গোল্ডেন আওয়ার রয়েছে। ১-২ ঘণ্টা না হলেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে না গেলে চিরতরে কানে কম শুনতে হবে।
৭২ ঘণ্টা শুনে মনে হতে পারে এ তো অনেক সময়, তিনটে দিন। আসলে কানে
শুনতে না পেলে তা কী কারণে হচ্ছে সেটা একদিকে যেমন কেউ বুঝতে পারেন না, উলটে নিজের মতো নানাকিছু ভেবে নিয়ে রোগ ফেলে রাখেন। কেউ মনে করে ঠান্ডা লেগে কান বুজে গিয়েছে, কিংবা কানে কিছু ঢুকেছে, কিছু জমেছে, কান খোঁচাতে থাকে, কানে সেঁক দিতে থাকে ইত্যাদি। যা করে অবস্থা আরও খারাপ পর্যায়ে চলে যায় সঙ্গে তিনটে দিনও পেরিয়ে যায়। তখন কানের ডাক্তারের কাছে নিয়ে এলেও অনেক সময়ই পুরোপুরি কানের শোনার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না।
কী কী লক্ষণ থাকবে?
কানে শুনতে না পাওয়ার সঙ্গে মাথা ঘুরতে থাকে। তাই বেশিরভাগ লোকেই মাথা কেন ঘুরছে সে ব্যাপারেই বেশি উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে। ফলত, আসল রোগ দেরি করে নির্ণয় হয়। কানের স্ট্রোকের আগাম কোনও ছোটখাটো প্রকাশ থাকে না তাই আগে থেকে সতর্ক হওয়া সম্ভব নয়। স্বাভাবিক কাজকর্মের মাঝেই হঠাৎ করে কানে শুনতে পারেন না একজন। তাই এমন সমস্যা হলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন শুনতে পান না?
আসলে কানের সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগ রয়েছে। ফলে এই ইন্দ্রিয়টির মধ্যে দিয়ে অনেক শিরা-ধমনি প্রবাহিত হয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। কানের অভ্যন্তরে কোনও ধমনি
ব্লক হয়ে গেলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, ইন্দ্রিয়টি অকেজো হয়ে পড়ে, ফলে তখনই একজন কানে শুনতে পান না। কানের এই অসুখ আসলে একপ্রকার এমার্জেন্সি।
আসলে কোনও শব্দ কান দিয়ে কানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ককলিয়ায় আঘাত করে। সেখান থেকে শব্দ সিগন্যালে পরিণত হয়ে নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। তখনই আমরা শব্দের প্রতিক্রিয়া জানাই। কিন্তু ককলিয়ার আর্টারি ব্লক হয়ে গেলে তখন আর সিগন্যাল মস্তিষ্কে পৌঁছয় না। ফলে হঠাৎ করেই কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো হবে, চিঁ-চিঁ করে শব্দ হবে। আর কানে একেবারেই শুনতে পারেন না। সাধারণত একটা কানেই হবে এমন। চিকিৎসা যত দেরিতে শুরু হবে ককলিয়া ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকবে।
বাঁধাধরা কোনও কারণ অজানা সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা হয়। যাঁদের ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ রয়েছে তাঁদের হতে পারে। আবার কখনও কোনও ভাইরাসের
কারণে হতে পারে। তবে সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি।
হিয়ারিং এড দরকার?
এই রোগের ফলে এক কানেই শোনার সমস্যা শুরু হয়। তাই মেশিন দিয়ে এককানের এই সমস্যা ঠিক করা একটু কঠিন। তবে অনেকেরই একটা কানে কম শুনলে নিত্যদিনের
কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। হতে পারে বাঁ-কান খারাপের জন্য ওই দিক থেকে কেউ কথা বললে শুনতে পান না। তখন ক্রস হিয়ারিং এড ব্যবহার করে সেই সমস্যা ঠিক করা সম্ভব। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা দরকার। চিকিৎসার ৪-৬ মাস পর হিয়ারিং এড লাগানো যেতে পারে। তবে রোগীর সমস্যা কতটা তা দেখে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেন। আর প্রয়োজনে ফোন করতে পারেন ৯০৮৮৯৩৯৫০০ নম্বরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.