পান্তা ভাত। ছবি: সংগৃহীত।
সাধারণ ভাতের চেয়ে অনেক বেশি উপকারী পান্তা ভাত। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এর জুড়ি নেই। সুস্বাদু রেসিপি ও স্বাস্থ্যগুণ জানিয়ে পাতে পান্তা রাখতে বলছেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও কনসালট্যান্ট ডায়েটিশিয়ান অরিজিৎ দে।
গ্রীষ্মের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ তুঙ্গে। আগামী কয়েক মাস কী হতে চলেছে সেটা মোটামুটি বোঝাই যাচ্ছে। এই সময় সুস্থ থাকতে যথাসম্ভব হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এর থেকে বাঁচতে একবার পরখ করুন পান্তা। গ্রামেগঞ্জে এই খাবারের প্রচলন রয়েছে, তবে শহুরে মানসিকতারা এটাকে সেভাবে গ্রহণ করেন না। কিন্তু শরীর ঠান্ডা করতে পান্তা খুবই কার্যকর।
পান্তাভাতের গুণাগুণ
ভিটামিন বি ১২: ফার্মেন্টেশনের ফলে পান্তা ভাতে ভিটামিন বি ১২ বেড়ে যায়। এটি ক্লান্তিভাব ও অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি: পান্তাভাত পিএইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। আলসার রোগীদেরও সুফল দেয়।
নতুন মায়েদের জন্য: ফারমেন্টেশনের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়। মায়েদের দুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা: ন্যাচারাল ল্যাক্সেটিভ হিসাবে কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর। সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম। অন্যদিকে পটাশিয়ামের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি।
রিহাইড্রেশন: পান্তা ‘বডি রিহাইড্রেটিং ফুড’ হিসাবে পরিচিত। গরমকালের খাবার হিসাবে পান্তা উপকারী।
ত্বকের ঔজ্জ্বল্য: ‘বিউটি সিক্রেট অফ এশিয়া’ নামে পান্তা ভাত পরিচিত। কারণ এটি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। যা ত্বকের ইলাস্ট্রিসিটি বৃদ্ধি করে, ফলে ত্বক মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল দেখায়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর: পান্তা ভাতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের প্রাপ্যতা অনেক বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ – ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রনের মতো উপাদানের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে ৩.৪ এমজি আয়রন থাকে। অন্যদিকে পান্তা ভাতের ক্ষেত্রে সেটাই দাঁড়ায় প্রায় ২১ গুণ, ৭৩.৯১এমজি।
উপকারী ব্যাকটিরিয়া: প্রোবায়োটিক্সে ভরপুর পান্তা ভাত। এটি হজমশক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। সেই সঙ্গে পান্তা সারাদিন কাজ করার জন্য শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
ভাত বারণ, কিন্তু পান্তা ভাত চলতে পারে
পান্তা ভাতের প্রোবায়োটিক টাইপ টু ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়া স্থূলতা ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। কারণ পান্তা ভাতের প্রোবায়োটিকের প্রভাবে শরীরে ফ্যাট সঞ্চয়ের প্রবণতা কমে যায়৷ রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে ডায়াবেটিসে সংক্রমণের হার কমায় এবং সংক্রমণ হলে সুস্থতার হার বাড়িয়ে তোলে পান্তা ভাত৷
পান্তা ভাত খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়৷ তার ফলে হৃদরোগের আশঙ্কাও কমে৷ জলে ভেজানো ভাতে অ্যান্টি ডায়াবেটিক উপাদানগুলির কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায় অনেকটাই৷পান্তা ভাতের প্রোবায়োটিকের গুণে নানা ভিটামিনের সংশ্লেষ বাড়ে৷ ফলে শরীরে ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
তবে ভাতের মতোই পান্তা ভাতেও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড বেশি৷ তাই খুব বেশি খাওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস রোগীর ভাতের থালার চার ভাগের এক ভাগ হবে পান্তা ভাত৷ বাকিটায় থাকবে ডাল, তরকারি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। তবে তীব্র গরমে শরীরের জন্য পান্তা উপাদেয় এবং উপকারী, দুই-ই। গরমে ডায়েরিয়া ও হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের বাসিন্দাদের ডায়েটে পান্তা ভাতের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়।
প্রকারভেদ
ভাত সিদ্ধ করে তা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ব্যবহার করলেই তার নাম হয়ে যায় পান্তা ভাত ৷ এই সাধারণ পান্তা ভাত ওড়িশায় পাখালা নামে পরিচিত, যা নানাবিধ ভাবে পরিবেশিত হয়।
সাজা পাখালা – লেবুর রস দিয়ে দিয়ে তাজা রান্না করা ভাত তৈরি করার সাথে সাথে জল যোগ করে প্রস্তুত করা হয়।
বাসি পাখালা – বাসি ভাতে জল যোগ করে চাল ফার্মেন্টেড করে প্রস্তুত করা হয় যা সাধারণত সারারাত রাখা হয় এবং পরের দিন খাওয়া হয়। খাবারে স্বাদ যোগ করার জন্য এটিতে কুচি করা পিঁয়াজ এবং লেবু যোগ করা যায়।
জিরা পাখালা – এই পাখালা কারি পাতার সাথে ভাজা জিরা যোগ করে প্রস্তুত করা হয়।
দই পাখালা – পাখালার সাথে দই যোগ করে দই পাখালা তৈরি করা হয়।
সুগন্ধি পাখালা বা সুবাসা পাখালা – নোনা জলে ডুবিয়ে রান্না করা ভাতে কাটা বা গ্রেট করা আদা এবং ভাজা জিরা যোগ করে প্রস্তুত করা হয় যা পাখালাকে সুগন্ধ দেয়।
ফোন – ৯৮০৪১৫৯৮১১
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.