শরীর কী চায়? এই নিয়েই নানা কক্ষপথে গবেষণা চলছে। তেমনই একটি, উপবাস কতটা স্বাস্থ্যকর? সামনেই শিবরাত্রি। উপবাসে শামিল হওয়ার আগে জানা দরকার এর সুফল ও কুফল শরীরে কতটা। ইতিবাচক দিক তুলে ধরলেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন জিনিয়া সরকার।
যে কোনও পুজোঅর্চনা মানেই নিষ্ঠাভরে প্রার্থনা। আর এই প্রার্থনার প্রথম শর্তই নাকি নির্জলা উপোস। যদিও বা জল গিলে খাওয়া যেতে পারে কিন্তু দাঁতে কাটা যাবে না কিছু। ভগবানের ক্ষুধা ও তৃষ্ণারূপ অনুভব করতে গেলে না খেয়ে থাকাই উচিত, এই মত মেনেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপবাসের রীতি প্রচলিত। সামনে আবার শিবরাত্রি। এই দিন অনেকেই হয়তো নির্জলা উপবাস করবেন। এখন এই নিয়মে শরীর কতটা অভ্যস্ত বা শরীর কতটা এটা সহ্য করতে পারে সেটাও কিন্তু পরোক্ষভাবে বোঝা জরুরি।
শরীরের জন্য উপোস ভাল না খারাপ তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে, যদি ঠিক মতো বুঝে উপোস করা হয়, তাহলে এর ইতিবাচক প্রভাব শরীরে পড়ে। আবার অতিরিক্ত করলে ক্ষতিও হয়।
ভালো দিক কী?
মাঝেমধ্যে উপোস করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়।
উপবাস শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল এই সব কমিয়ে হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কিছু প্রাণীর শরীরে পরীক্ষা করে তথ্য মিলেছে, ওয়ার্কিং মেমরি বা ভার্বাল মেমরি উপবাসের পর বেড়ে যায়। অর্থাৎ স্মৃতিশক্তিতেও এই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। যা মানব শরীরেও সমভাবে কাজ করবে বলেই অনুমান করা যায়।
উপোস করলে গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ বাড়ে। এছাড়াও পেটে এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া রয়েছে যেমন, ক্রাইস্টিনসেনেলা। যা উপবাস করলে শরীরে বা পেটে গ্রো করে। এই ব্যাকটিরিয়া একজনের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বলা হয় যাঁরা মাঝেমধ্যে উপোস করেন তাঁদের দীর্ঘায়ু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও উপবাস করলে ওজন বা মেদ কমে, ভুঁড়ি কমে। যা অনেক অসুখ প্রতিহত করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়।
তবে কী ধরনের উপবাস করছেন তার উপর নির্ভর করবে শরীরের খারাপ-ভালো। ধরন আছে অনেক, যেমন –
ওয়াটার ফাস্টিং – অনেকে সারাদিন শুধু জল খেয়ে উপবাস করেন।
জ্যুস ফাস্টিং – শুধুমাত্র ফলের রস খেয়ে থাকা।
টোট্যাল ক্যালোরি রেস্ট্রিকশন – এক্ষেত্রে সারাদিনই খাওয়া চলে, কিন্তু খুবই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে আহার গ্রহণ করতে হবে।
ফ্যাটিলিভার কমাচ্ছে উপবাস
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং- সাধারণত পুজো-পার্বণে আমরা যে ধরনের উপোস করি সেটা এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-ই। এই উপবাস বর্তমানে শরীরের জন্য সবচেয়ে ভালো। এক্ষেত্রে ১২-১৪ ঘণ্টা উপোস করে থাকার পর তার পরের বাকি সময়ে খাবার খাওয়া হয়। অর্থাৎ অনেকক্ষণ না খেয়ে থেকে তারপর খাবার খাওয়ার এই পন্থাকেই বলা হয় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফ্যাটিলিভার প্রতিহত করতে এই ফাস্টিং দারুণ কার্যকর।
এই উপবাসে সাধারণত সারা দিনে দুটো মিল খাওয়া যেতে পারে। হতে পারে সারাদিন না খেয়ে তারপর দুপুরে খাবার খেলেন ও রাতে অল্প। অথবা সকালে পেট ভর্তি করে খেয়ে দুপুরে খুব হালকা ফল বা জ্যুস, হার্বাল টি খেয়ে থাকা। তারপর সন্ধে ৭-৮টার মধ্যে রাতের ডিনার করে নেওয়া দরকার। এই ফাস্টিং করলে লিভারের ভিতরে যে ফ্যাট জমে সেটা ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। সাধারণত ওষুধের দ্বারা যা করা সম্ভব নয়।
ভাঙার পর আহার
দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর হঠাৎ বেশি খেয়ে ফেললে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পরে। এক্ষেত্রে প্রথমেই শরবত, মিষ্টি অর্থাৎ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে ভালো। এগুলো অল্প পরিমাণে কিন্তু উপযুক্ত ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার। এতে শরীরে এনার্জির অভাব দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া যায়। ফল, বাদাম, ছোলা, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। ফাস্টিং ভাঙার পর অনেকটা পরিমাণে খেলে সেক্ষেত্রে তার কুপ্রভাব পড়তে পারে শরীরে। তাই ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার অল্প পরিমাণে খেতে হবে। বিশেষ করে উপোস করার আগে বা পরে, সমস্ত রকম প্রসেসড ফুড, টিনড ফুড, জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড এবং ঘরে তৈরি ডিপ ফ্রায়েড খাবার থেকেও দূরে থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.