প্রীতিকা দত্ত: বিশ্বজুড়ে করোনা (Coronavirus) ত্রাস। এক কোটি ছুঁতে চলেছে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আশার কথা শোনাচ্ছেন। আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মানুষের উপর প্রয়োগ করা হবে ‘চ্যাডক্স’ ভ্যাকসিন। এই পর্বে পাশ করে গেলেই ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনার প্রতিষেধক বাজারে আসতে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। আর ওষুধ উৎপাদন শুরু করার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে ভারতও। পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হবে অক্সফোর্ডের এই করোনা প্রতিষেধক – ‘চ্যাডক্স’।
সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (Serum Institute of India) দাবি, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভাল ফল মিলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী জুলাইতেই কয়েক লক্ষ ভ্যাকসিন তারা তৈরি করে ফেলবে। প্রাথমিকভাবে ৩০ লক্ষ ডোজ তৈরি হবে। পরবর্তী সময়ে উৎপাদনের হার কয়েক লক্ষ হয়ে যাবে।
ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলবে। ইতিমধ্যেই প্রতিষেধক ট্রায়াল নিয়ে অক্সফোর্ডের সঙ্গে ব্রাজিলের এক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে চ্যাডক্স ভ্যাকসিন টিমের প্রধান সারা গিলবার্টকে ইমেল করা হলে তিনি জানান, “চ্যাডক্স নিয়ে ট্রায়াল চলছে। এবং তার রেজাল্টও আশানুরূপ। এই চ্যাডক্স প্রতিষেধক নিয়ে আগেও কাজ করেছি। ২০১৪ সালে আফ্রিকায় ইবোলা প্রতিষেধকের ব্লু-প্রিন্টেও চ্যাডক্সের নাম উঠেছিল। তার আগে মার্সের ভ্যাকসিন হিসেবেও চ্যাডক্স প্রথম পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভাল কাজ করেছে। তাছাড়াও জিকা, চিকনগুনিয়াতেও চ্যাডক্সের ট্রায়াল চলেছে। এবার SARS-CoV-2’এর পালা। আপাতত এর থেকে বেশি বলাটা ঠিক হবে না।” তবে এই মুহূর্তে প্রতিষেধকটি নিয়ে অক্সফোর্ডের গবেষকরা বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাঁরা মনে করছেন, পারলে চ্যাডক্সই পারবে, করোনা থেকে সাধারণের জীবন বাঁচাতে।
গত ৩০ এপ্রিল COVID-19 সংক্রমণ রুখতে চ্যাডক্সকে বাজি ধরেছিল অক্সফোর্ড এবং অস্ট্রাজেনেকো। এপ্রিলেই দুই পর্বে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়। ফলও মেলে হাতেনাতে। তখন দক্ষিণ ইংল্যান্ডে ১৮ থেকে ৫৫ বছরের এক হাজার মানুষের উপর ট্রায়াল চলে। গবেষণায় জানা যাচ্ছে, এখনও অবধি তাঁরা সুস্থ। পরে ১০,২৬০ জনের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে এই প্রতিষেধক। এই তালিকায় শিশু থেকে বয়স্ক – সকলেই ছিলেন। ইংল্যান্ড ছাড়াও ৩০ হাজার মার্কিনির উপর এই প্রতিষেধক প্রয়োগের ভাবনা রয়েছে। এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের দায়িত্বে রয়েছেন ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল এবং জেন্নার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
মোট ৯০টি দেশে করোনা প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছে। তবে এত তাড়াহুড়ো করে নতুন কোনও রোগের প্রতিষেধকে কতটা কী কাজ হবে সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেই প্রশ্নটাই তুললেন দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ম্যানেজমেন্ট রিসার্চের জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়োগী। তাঁর কথায়, “বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ এক্কেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠবে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে উপসর্গহীনদের খুঁজে পাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই অবস্থায় কাকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।”
সেইসঙ্গে তিনি আরও জানান, দূর ভবিষ্যতে প্রতিষেধকের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, সেটাও দেখা দরকার। কলকাতার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ফেজ থ্রি-তে ট্রায়াল মানেই ভ্যাকসিন মানব শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তার স্থায়িত্ব কতদিনের? কিছু দিন। নাকি কয়েক মাস? সেটা জানা খুব জরুরি। তার উপর নির্ভর করবে সংক্রমণ। তারপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.