গৌতম ব্রহ্ম: ৯৩টি দেশ আয়ুর্বেদকে (Ayurveda) স্বীকৃতি দিয়েছে। ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার তৈরি হয়েছে আয়ুর্বেদের। গুণোত্তর প্রগতিতে বাড়ছে বাজার। আর আয়ুর্বেদের এই সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠেছে অশ্বগন্ধা (Ashwagandha)। বাংলার এই নিজস্ব ভেষজ আমেরিকা, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সহ একাধিক দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। একাধিক বহুজাতিক সংস্থা অশ্বগন্ধাকে কাজে লাগিয়ে একাধিক প্রোডাক্ট তৈরি করছে।
বড় বাজার তৈরি হয়েছে। শুধু এই ম্যাজিক ড্রাগের দৌলতে Unicorn Startup Company-তে পরিণত হয়েছে হায়দরাবাদের একটি সংস্থা। যা নিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi) নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন। সংস্থার কর্ণধার কার্তিকেয় বালদাও জানিয়েছেন, সমস্ত রকম আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে অশ্বগন্ধা তৈরির জন্যই আজ রপ্তানির পরিমাণ এত বেড়েছে। আমেরিকা, আফ্রিকা, ও ইউরোপের বাজার ধরতে একাধিক বহুজাতিক সংস্থা কার্তিকেয়র সংস্থা থেকে অশ্বগন্ধা কিনে প্রোডাক্ট তৈরি করছে।
কার্তিকের মতো এমন অনেক সংস্থা আছে যারা আয়ুর্বেদকে আধুনিক বিজ্ঞানের নিগড়ে বেঁধেছে। ল্যাবরেটরিতে একের পর এক হার্ডলস টপকে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় ভেষজকে কৌলিন্য দিয়েছে। অশ্বগন্ধার মতো আয়ুর্বেদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে উঠেছে নিম, হলুদ, ঘৃতকুমারী, আমলকী, গুড়ুচি, যষ্টিমধু, আদা, গোলমরিচ। তবে করোনাকালে হওয়া একাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভাল ফল করায় আশ্বগন্ধা নিয়ে বিশ্বের আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়েছে।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা প্রদ্যুৎ বিকাশ কর মহাপাত্র জানালেন, চরক ও সুশ্রুত সংহিতায় অশ্বগন্ধাকে বলবর্ধক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। স্নায়ুর উত্তেজনা প্রশমন, পুষ্টিকারক, বীর্যবর্ধক হিসাবে অশ্বগন্ধা অতুলনীয়। এই গাছের মূল ব্যবহার হয়। রাজ্যের আয়ুর্বেদ অধিকর্তা ডা দেবাশীষ ঘোষ বলেন, অশ্বগন্ধায় উইদানল, সমনিরোল, সমনিটল, ইপুরানল সহ একাধিক রাসায়নিক সংগঠক আছে। যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর ভাল প্রভাব ফেলে। নিদ্রাজনক, স্মৃতিবর্ধক। অশ্বগন্ধা থেকে তৈরি অশ্বগন্ধারিষ্ট মনোরোগেও দারুণ কাজ করে। শারীরিক দুর্বলতা কাটায়। প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে কার্যকর। বেঙ্গালুরুর নিমহান্স হাসপাতালেও মনোরোগের উপশমে অশ্বগন্ধার ব্যবহার হচ্ছে।
এত গুণ সত্বেও বিশ্ব বাজারে আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছিল অস্বগন্ধা। অবশেষে শাপমুক্তি। আইআইটি জয়পুরের তরুণ বিজ্ঞানী ডা বালা পেসা জানিয়েছেন, বায়ো কেমিক্যাল মার্কার ব্যবহার করে ওষুধের কার্যকারিতা মাপা হচ্ছে। আর এখন তো স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে আরও অনেক প্যারামিটার অনেক সহজে মাপা যায়। WHO-র সদর দপ্তর জেনেভায় কর্মরত টেকনিক্যাল অফিসার ডা, গীতা কৃষ্ণাণ জানিয়েছেন, আয়ুর্বেদ-সহ একাধিক ট্র্যাডিশনাল ওষুধের উপর জোর দিচ্ছে WHO। গুজরাটের জামনগরে WHO গ্লোবাল সেন্টার ফর ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন তৈরি করেছে। এখানেই চলবে প্রচলিত ওষুধ নিয়ে গবেষণা।
গীতাও মেনে নিয়েছেন, আয়ুর্বেদ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। ৯৩ টি দেশ আয়ুর্বেদ ব্যবহারে সম্মত হয়েছে। দেশের সংখ্যা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৪০ জন বিদেশি ছাত্রের ভারতে আয়ুষ নিয়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে। পানাজিতে আয়ুর্বেদের টানে ওয়ার্ল্ড আয়ুর্বেদ কংগ্রেসে ৬০ টি দেশের চারশোর বেশি প্রতিনিধি এসেছেন। প্রত্যেকেই আয়ুর্বেদ নিয়ে নিজের ভালবাসার কথা জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান-সহ একাধিক দেশ নিজস্ব ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। একাধিক বিষয়ে আয়ুষ মন্ত্রকের সাহায্য প্রার্থনা করেছে।
আজ, রবিবার আয়ুর্বেদ কংগ্রেসের সমাপ্তির দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন। তিনি আয়ুর্বেদ নিয়ে বড় ঘোষণা করবেন বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন কেন্দ্রীয় আয়ুষ সচিব বৈদ্য রাজেশ কোটেচা। মোদি এদিন গোয়ার মোপাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন করবেন। তাঁর হাত ধরেই যাত্রা শুরু করবে গোয়ার ‘ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ’।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.