ডিমেনশিয়া ধরলে ছাড়ে না। মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ শুকিয়ে গেলে ওষুধেও কাজ হয় না। রক্ষাকবচ হতে পারে ভিটামিন ডি, বি-কমপ্লেক্স অথবা পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান। সতর্ক করলেন এসএসকেএম হাসপাতালের বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডা. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়। লিখছেন জিনিয়া সরকার
১২০ টাকার বদলে ২০ টাকা! তারপরই বচসা শুরু এক বৃদ্ধের সঙ্গে সবজিওয়ালার। আশপাশের দোকানদারদেরও দাবি, অমরবাবু নাকি প্রায়ই বাজার করেন অথচ পুরো টাকা দেন না। বুঝিয়ে বললেও অস্বীকার করেন। কম টাকা দিয়ে বলেন পুরো টাকা দিয়েছেন। তাই বাজারে ঢুকলেই টিপ্পনি শুনতে হয়। ব্যাঙ্গ-তামাশা শুনেও প্রায় ৭০ ছুঁই-ছুঁই বৃদ্ধটি অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকেন। নির্বাক-ভাবলেশহীন মুখে ফিরে যান, আবার আসেন। শুনে অদ্ভুত কিংবা কান্ডজ্ঞানহীন মনে হলেও বৃদ্ধটি আসলে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত।
এই রকম অভিব্যক্তি বয়সকালে মস্তিষ্কের কোষ শুকোতে থাকলে তা থেকে হতে পারে। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় এই ধরনের ব্যবহারিক নানা পরিবর্তন শুরু হয়। সব ব্যপারে উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত হতে থাকেন, কী করছেন তার খেয়াল থাকে না, অল্পতেই রেগে যান ইত্যাদি। তারপর বর্তমান ভুলে যেতে থাকেন। শেষের দিকে নিকট আত্মীয়স্বজনকেও চিনতে পারেন না। চিকিৎসকের কথায়, বয়সকালে চামড়ায় টান, চুলে পাক ধরার মতো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষও শুকোতে শুরু করে। স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া এখন ক্রমশই বাড়ছে। সাধারণত ৬৫-৭৫ বছর বয়সের পর থেকেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে ভিটামিন ডি-এর অভাব
কেন্টাকি ইউনিভার্সিটির গবেষকরা প্রায় ১৬০০ জন বয়স্কর উপড় টানা ছ’বছর সমীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, যাঁদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর যথেষ্ট অভাব রয়েছে তাঁদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ। অভাব মাত্রা অতিরিক্ত হলে এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১২৫ শতাংশ। অন্য একটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘জামা নিউরোলজি’-তে প্রকাশ পেয়েছে, বাড়ন্ত বাচ্চাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব স্মৃতিশক্তির স্বাভাবিক উন্মেষ ব্যহত করে। তাই এই গবেষকরাও বলছেন, ডিমেনশিয়ার সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর যোগসূত্র নিবিড়। এরাজ্যের নিউরো চিকিৎসক ডা. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, ভিটামিন-ডি বা সূর্য রশ্মির সঙ্গে ডিমেনশিয়া অসুখ নিরাময়ের সরাসরি কোনও যোগসূত্র না পাওয়া গেলেও এই তথ্য অস্বীকার করার মতো নয়। দেখা গেছে, ডিমেনশিয়া রোগীকে বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে দিলে তাদের মানসিক অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হয়। তাই একটু বয়স বাড়লে নিয়মিত সকাল ১১ থেকে বেলা ২টোর মধ্যে সূর্যরশ্মি গায়ে লাগান। রোদ বা সূর্যের আলো গায়ে লাগালে তা ব্রেনের ফ্রি র্যাডিক্যালসকে বিনষ্ট করে ব্রেন স্নায়ুকোষকে সচল রেখে ডিমেনশিয়া অসুখ প্রতিরোধ করে।
অল্প বয়সে অন্য কারণ
৫০-৫৫ বছর বয়সেও এই অসুখ প্রকাশ পেতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে তারও আগে। সেক্ষেত্রে অপুষ্টি জনিত কারণ, ভিটামিন ডি, বি-কমপ্লেক্সের অভাব, মাথায় আঘাত বা অ্যাকসিডেন্ট, শরীরে সংক্রমণ যেমন- হারপিস, এইচআইভি, ব্রেন টিউমার, জন্মের পরই কোনও সংক্রমণ বা ভাইরাল এনসেফেলাইটিস, হরমোনাল ডেফিসিয়েন্সি বা থাইরয়েড কম অথবা বয়সকালে স্ট্রোকের ফলেও ডিমেনশিয়া অসুখ দেখা দিতে পারে।
পুষ্টি শক্তি
ওষুধে ডিমেনশিয়া কাবু করা কঠিন। এমন ওষুধ নেই যা রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় পুনরায় ফিরিয়ে দিতে পারে। তাই আগাম সতর্ক হতে বা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলিকে সতেজ রাখতে জরুরি-
১) ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সামদ্রিক মাছ, কাঁকড়া ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।
২) শাক-সবজিতে থাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স।
৩) হলুদ (কাঁচা বা গুড়ো) স্মৃতিশক্তি বা ব্রেনের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হলুদে কিউকারমিন নামক উপাদান স্নায়ুকোষের বিনষ্ট হওয়া রোধ করে।
৪) ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের পরিবার-পরিজনের আন্তরিকতা ও ভালবাসা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.