Advertisement
Advertisement

Breaking News

ফিট অ্যান্ড ফাইন

ব্যস্তজীবনে ফিট অ্যান্ড ফাইন থাকতে চান? রইল টিপস

রোজকার টেনশন থেকে বাঁচার সহজ উপায়।

How to stay fit and fine in your daily busy life, tips are here
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 6, 2019 9:14 pm
  • Updated:April 6, 2019 9:14 pm  

জেট যুগে প্রতি মুহূর্তে ব্যস্ততা। স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, টেনশন, রোগব্যাধিও নিত্যসঙ্গী। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? কীভাবে ফিট রাখবেন নিজেকে, তাই নিয়েই এই কলাম। এবার প্রি মেনস্ট্রুয়াল এক্সারসাইজ নিয়ে বললেন যোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যসুন্দর দাস।

১) মেয়েদের মেনস্ট্রুয়েশন একটা প্রাকৃতিক বিষয়। প্রতিটি মেয়ে এই সাইকেলটির মধ্যে দিয়ে যান গোটা জীবনের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে। যা শুরু হয় ৯-১০ বছর থেকে চলে ৫০ বছর বা তারও বেশি অবধি। কারও কারও ৫০-এর আগেও এই সাইকেল শেষ হয়ে যায়। প্রতি মাসে পিরিয়ডের সাইকেল চলে। এর সঙ্গে হরমোনাল বিষয় জড়িত থাকে। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনের নিয়ন্ত্রণে থাকে এই পিরিয়ডিকাল সাইকেল। পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এই সাইকেলটির জন্য তিনটে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিকে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল হতে হয়। যেমন, পিটুইটারি গ্রন্থি যা সমস্ত গ্রন্থিকে কন্ট্রোল করে, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ও গোনাড গ্ল্যান্ড। এই তিনটে গ্ল্যান্ডকে বলা হয় মাস্টার, মিনিস্টার ও মনিটর গ্ল্যান্ড। এই হরমোন গ্ল্যান্ড গোটা শরীরকে প্রভাবিত করে। এই হরমোন গ্রন্থিগুলোর তারতম্যের প্রভাবে পিএমএস বা প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রম দেখা দেয় কম বা বেশি প্রত্যেক মহিলার মধ্যে।

Advertisement

[আরও পড়ুন:   আচমকাই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন যুবক-যুবতীরা, কী পরামর্শ বিশেষজ্ঞের?]

২) এই সিনড্রমের মানসিক লক্ষণগুলো হল, ডিপ্রেশন, ক্লান্তি, আলস্য, অ্যাংজাইটি, টেনশন, রাগের বহিঃপ্রকাশ, কান্না, বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ, বুক ধড়ফড়ানি, দুশ্চিন্তা, সামাজিকতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া অর্থাৎ সোশাল উইথড্রওয়াল, কনফিউশন। এছাড়া মনঃসংযোগের অভাব, ঘুমের ব্যাঘাত, যৌন চাহিদার তারতম্য কারও কমে, আবার কারও বৃদ্ধি পায়।

৩) এই সিনড্রমের শারীরবৃত্তীয় লক্ষণগুলো হল, খিদে কমে যাওয়া, ব্রেস্ট টেন্ডারনেস, অস্বস্তি। ব্লোটিং, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, গা বমি ভাব, মাথা যন্ত্রণা, হাত-পা ফোলা, শরীরে ফোলা ফোলা ভাব, গা ব্যথা, স্কিনে সমস্যা আসে, চাকচিক্য কমে মলিন দেখতে লাগে। গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টাইনাল সিস্টেমেরও সমস্যা হয়। অ্যাসিডের প্রবলেম হয়। পেট বা তলপেট ব্লোটিং—এর ফলে বেড়ে যায়।
৪) হরমোনাল ইমব্যালেন্স এর জন্য দায়ী। আমাদের ইউটেরাসের মধ্যে যে কভারিং থাকে, যাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম, তা ভারী হলে আরও বেশি সমস্যা হয় পিরিয়ডের সময়। এন্ডোমেট্রিওসিস হলে পরবর্তীকালে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
৫) এর পাশাপাশি কর্মব্যস্ত জেটযুগে এখন সকলে লাইফস্টাইল ডিজঅর্ডারে ভুগছে। দিনে বারো থেকে চোদ্দো ঘণ্টা কাজ। বিশ্রামহীনতা, ঘুম কম হওয়া, লেটনাইট, অনিয়মিত ডায়েট এই হরমোনাল ইমব্যালেন্সকে ত্বরান্বিত করে। বায়োলজিকল ক্লকে আসে বদল। ফলে আর বেশি চোখে ধরা পড়ে পিএমএস।
৬) ওষুধ খাওয়ার কোনও শেষ নেই। কত ধরনের সমস্যায় কত ওষুধ খাওয়া যেতে পারে? যোগা ব্রিদিং, এক্সারসাইজ, প্রাণায়াম এগুলো হল সাইকোসোমাটিক মেডিসিন। সাইকো অর্থাৎ মন এবং সোমা অর্থাৎ দেহ। ন্যাচরাল আর্ট অফ হিলিং।
৭) নিয়মিত আসন করলে শুধু পিএমএস নয়, যে কোনও শারীরিক, মানসিক সমস্যা রোধ করা যায় বা কমিয়ে ফ্যালা সম্ভব।
৮) পিএমএস-এর ক্ষেত্রে ব্রিদিং এক্সারসাইজ, নেক এক্সারসাইজ, পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ এবং কয়েকটা আসন খুব কার্যকরী। ডিপ ব্রিদিং উইথ চেস্ট এক্সপ্যানশন, ডিপ ব্রিদিং এক্সেলেশন থ্রু মাউথ, যোগা ব্রিদিং, লেগ সার্কলিং, লেগ ক্রসিং ইত্যাদি, সঙ্গে মৎস্যাসন, ভদ্রাসন, গোমুখাসন, কপালভাতি, সূর্যভেদ প্রাণায়াম, অশ্বিনীমুদ্রা, ধ্যান ইত্যাদির মধ্যে চার-পাঁচটা করলে খুব দ্রুত কাজ দেয়।

ডিপ ব্রিদিং উইথ চেস্ট এক্সপ্যানশন
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত সামনের দিকে সোজা করে জোড়া করুন। এবার শ্বাস নিতে নিতে দু’হাত ফাঁক করে কাঁধ বরাবর এনে বুকের ছাতি ফোলান। আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত আগের অবস্থায় আনুন। অর্থাৎ দীর্ঘশ্বাস নেওয়া। এই ব্যায়াম সুখাসনে অর্থাৎ বাবু হয়ে বসেও করা যেতে পারে।দাঁড়িয়ে দু’দিকে হাত লম্বা করে রেখেও করা যেতে পারে। দশবার করুন।

ডিপ ব্রিদিং উইথ ফোল্ডিং হ্যান্ডস
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে বুকের কাছে আনবেন যাতে হাত একই সরলরেখায় থাকে। এবার শ্বাস নিতে নিতে দু’হাত খুলে কাঁধ বরাবর সোজা করে ও শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থায় ফিরে আসা।

নেক এক্সারসাইজ
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে শ্বাস নিতে নিতে মাথা ডান কাঁধের দিকে যতদূর সম্ভব ঘোরানোর চেষ্টা করুন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা সোজা করুন। এইভাবে দশবার করুন। আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে শ্বাস নিতে নিতে মাথা একবার পিছনে হেলানো ও শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাথা সোজা করা। এই ভাবে দশবার করুন।

পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ
পেলভিক ব্রিজ ১ নাম্বার– চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা মুড়ে নিতম্বের কাছে নিয়ে আসুন। দু’হাত দেহের দু’পাশে লেগে থাকবে। এবার কাঁধ ও দুই পায়ের ওপর জোর দিয়ে শ্বাস নিতে নিতে নিতম্ব ওপরের দিকে তুলুন ও শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নীচের দিকে নামান। প্রথমে পাঁচবার করুন, ধীরে ধীরে বাড়ান।
পেলভিক টিল্ট– চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা মুড়ে নিতম্বের কাছে আনুন। দু’হাত দেহের পাশে লেগে থাকবে। হাতের তালু মাটিতে পাতা থাকবে। এবার কোমরের যে অংশ মাটি থেকে উঠে আছে অর্থাৎ পিঠের নীচের অংশ একবার মাটিতে লাগান। আবার তুলুন। এইভাবে পাঁচবার করুন।
গোমুখাসন
বাঁ হাঁটুর ওপরে ডান হাঁটু রেখে বসুন। যেন বাঁ পায়ের গোড়ালি ডান নিতম্বের সংলগ্ন থাকে। এই অবস্থাকে অর্ধ বা সুখ গোমুখাসন বলে। পরবর্তী ধাপে ডান হাত মাথার ওপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পিঠ বরাবর নীচের দিকে নামান। বাঁ-হাত কুনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পিছনে নিন। দু’হাতের আঙুলগুলো বাঁদিকে হুকের মতো আঁকড়ে ধরুন। মেরুদণ্ড সোজা থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে তিরিশ গুনে নিন।

[আরও পড়ুন:  সাইজ জিরোর দিন শেষ, সহজ উপায়ে বদলে ফেলুন চেহারা]

অশ্বিনীমুদ্রা
পিএমএস-এর জন্য এই আসন খুব ফলদায়ী। রেকটাম বা মলদ্বার ধীরে ধীরে ভিতর দিকে টানা ও তারপর ছাড়া। পদ্মাসন, সুখাসন বা চেয়ারে বসে যে কোনও অবস্থায় করতে পারেন। এইভাবে দু’বার করুন।
সূর্যভেদ প্রাণায়াম
পদ্মাসনে বা সুখাসনে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। এবার ডান হাতের অনামিকা ও কনিষ্ঠার আঙুল দিয়ে বাঁ-নাক বন্ধ করে ধীরে ধীরে দু’সেকেন্ড পর্যন্ত ডান নাক দিয়ে বায়ুগ্রহণ করুন। শ্বাস গ্রহণ করা হলে বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক বন্ধ করে দু’সেকেন্ড পর্যন্ত বায়ুধারণ করুন। এরপর অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল খুলে বাঁ-নাক দিয়ে বায়ুত্যাগ করুন। এইভাবে দু’বার অভ্যাস করুন।
ভস্ত্রিকা বা কপালভাতি
কামারের হাপরকে ভস্ত্রিকা বলে। হাপর যেমন ফুললে বাতাস ঢোকে এবং চাপ দিলে বাতাস বেরিয়ে যায় সেই প্রক্রিয়াই হয় কপালভাতির ক্ষেত্রে। বজ্রাসন বা সুখাসনে বসে জোরে ফুঁ দিয়ে মুখ থেকে শ্বাস ছাড়ুন এবং পেটখালি করুন বা ভিতর দিকে টানুন। আবার মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার ভঙ্গিতে জোরে শ্বাস টানুন এবং পেট ফোলান। এইভাবে দু’বার করুন।

ভদ্রাসন
এই আসন মেয়েদের পিরিওডিকাল সবরকম সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। হেভি ফ্লো, বা ফ্লো কম হওয়া, ব্যথা, যন্ত্রণা, অনিয়মিত হওয়া সাদা স্রাবজনিত সমস্যা কমাতে খুব ফলদায়ী। পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। পায়ের তলা দুটো পরস্পর সংলগ্ন থাকবে। হাঁটু মাটিতে ঠেকে থাকবে। দু’হাতের সাহায্যে গোড়ালি দুটো শরীরের দিকে টানুন যাতে জননেন্দ্রিয় স্পর্শ করে। হাঁটু উঠবে না। এইভাবে তিরিশ গুনে নিন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement