হরমোন শরীরের সবচেয়ে কার্যকর কেমিক্যাল। একটু এদিক-ওদিক হলেই নানারকম সমস্যায় পড়তে হয়। অধিকাংশ মহিলার ভোগান্তি এই নিয়েই। হরমোনের গতিবিধি ঠিক রাখবেন কী ভাবে, জানাচ্ছেন এনআরএস হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান ডা. নীলাঞ্জন সেনগুপ্ত। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
সমস্ত অসুখের কিছু না কিছু লক্ষ্মণ আগাম প্রকাশ পায়। তারপর কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হয়। আবার কোনও ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণই প্রকাশ পায় না। তেমনই একটি অন্যতম সমস্যা হরমোনাল ইমব্যালান্স বা শরীরে হরমোনের অসামঞ্জস্য। যেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভুক্তভোগী মহিলারাই। পুরুষদের হলেও তা অনেক কম। শরীরে হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার একটু এদিক-ওদিক হলেই নানা রকমের অসুখ প্রকাশ পায়।
ঠিক কী হয়?
ধরুন একটা কেক তৈরি করবেন। সেই কেকের উপাদান সামগ্রীর কম-বেশি হলে সেই কেকটার মান কী ভাল হবে? স্বাদ ভাল হবে? না। তেমনই শরীরে হরমোনের হেরফের হলেও শারীরিক সামগ্রিক কাজকর্মও নানা রকমভাবে বিপর্যস্ত হয়। হরমোন হল শরীরের অন্যতম কেমিক্যাল ম্যাসেনজার। যা এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ডে উৎপন্ন হয়। এই শক্তিশালী কেমিক্যাল আমাদের রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে শরীরের কলা ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কীভাবে কাজ করবে সে ব্যাপারে নির্দেশ পাঠায়। প্রজনন ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হরমোনের ভূমিকা অনবদ্ধ। বয়সজনিত কারণে হরমোনের সমস্যা অস্বাভাবিক কিছু নয় কিন্তু কম বয়সে এই ধরনের সমস্যার কারণ এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ডের সমস্যা।
ভোগান্তি কখন?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইট্রোজেন ও এন্ড্রোজেন-এর মাত্রা বেড়ে সমস্যা শুরু হয়।
সাধারণত মেয়েদের রিপ্রোডাকটিভ এজ গ্রুপে এই অসামঞ্জস্য দেখা যায়। ১২ থেকে ৪৫-৫০ বছর বয়সের মধ্যে এই অসুবিধা হয়। যার দরুন পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম) হয়।
এছাড়া হতে পারে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা। এই হরমোনের কম বা বেশি সবেতেই অসুবিধা।
প্রোল্যাক্টিন হরমোন-এর সমস্যা মহিলাদের খুবই হয়। এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলেই বিপদ। সাধারণ পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে টিউমার হলে, দীর্ঘদিন অম্বল-গ্যাসের ওষুধ অনবরত খেলে, সাইকিয়াট্রিক ওষুধ খেলে, মানসিক চাপ থেকে এই হরমোনের মাত্রা বাড়তে পারে।
এই ধরনের সমস্যাগুলো ওষুধ দিয়ে নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
কেন হয়?
শরীরে একাধিক হরমোন রয়েছে। তাদের কাজও ভিন্ন ভিন্ন। কোন ধরনের হরমোনের সমস্যা তার সঙ্গে নির্ভর করবে কী অসুখ হবে।
বিভিন্ন কারণে হতে পারে হরমোনের সমস্যা?
হরমোন থেরাপি, কোনও অসুখে ওষুধ দীর্ঘসময় খেলে, ক্যানসার বা কেমোথেরাপি নিলে,
শরীরে কোনও টিউমার দেখা দিলে, পিটুইটারি টিউমার, উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের অভাব বা খেতে না পারলে, মানসিক চাপ, কোনও আঘাত বা ট্রমা।
সমস্যা এক, যা ডেকে আনে অন্য সমস্যা
হরমোনাল ইমব্যালান্স হলে তার ফলে একাধিক অসুখ হতে পারে।
টাইপ ১ ও ২ ডায়াবেটিস
হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপার থাইরয়েডিজম
হাইপোগনাডিজম
কাসিং সিনড্রোম বা শরীরে কর্টিজলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
কনজিনেটাল অ্যাড্রিনালিন হাইপারপ্লাসিয়া, এক্ষেত্রে কর্টিজল হরমোনের মাত্রা কমে যায়।
প্রজননে সাহায্যকারী হরমোনের অসামঞ্জস্যে পিসিওএস, প্রিম্যাচিওর মেনোপজ, সন্তানধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
আল্ট্রাসনোগ্রাফি, প্রয়োজনীয় হরমোন টেস্ট করে কোন হরমোনের সমস্যা ও কোন রোগ রয়েছে তা নির্ণয় করে সেই মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বিশেষজ্ঞ, গাইনকোলজিস্ট বা ত্বকের সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টেরও পরামর্শ নিতে হবে। তবে কোনও সমস্যা না থাকলে নিজে থেকে হরমোন টেস্ট বা আল্ট্রাসাউন্ড করা উচিত নয়।
মানুন
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.