বাচ্চাদের কৃমি নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ নেই। এই নাছোড়বান্দা পরজীবীদের মোকাবিলায় নিম, রসুন, লবঙ্গ, কলিচুনের জলের মতো অনেক ঘরোয়া টোটকা আছে। আবার আছে পলাশ বীজের মতো ব্রহ্মাস্ত্র। কার কী দরকার, কতটা দরকার, তাই নিয়ে আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র। লিখলেন গৌতম ব্রহ্ম।
কুড়ি রকমের কৃমির উল্লেখ রয়েছে আয়ুর্বেদে। ১৮ টি অভ্যন্তরীণ। দু’টি বাহ্য কৃমি। উকুনকেও কৃমির গোত্রে ফেলা হয়। কফজ, রক্তজ, অন্ত্যজ–নানা ধরনের কৃমি হয়। জল থেকে খাবার থেকে, এমনকী অপরিচ্ছন্ন হাত থেকেও কৃমির অনুপ্রবেশ হতে পারে। মাটিতে পরা জিনিস কুড়িয়ে খেলে কৃমি শরীরে ঢুকতে পারে। বাচ্চারা অনেক সময় গুহ্যে হাত দেওয়ার পর মুখে হাত দেয়। তাছাড়া বাচ্চাদের নখের ভিতর প্রচুর ময়লা থাকে। নিয়মিত নখ কাটা হয় না, পরিষ্কার করা হয় না। সেই কারণেই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়।
কৃমি থেকে দূরে থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। বাসি, পচা খাবার খাওয়া যাবে না। আর একটা কথা, যাদের অগ্নি বল কম তাদের শরীরে কুমির সংক্রমণ বেশি। আসলে অগ্নিবল কম হলে খাবার ঠিকমতো পরিপাক হয় না। ক্লেদকারক বা আমজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় অস্ত্রে। যা কৃমির বংশবিস্তারের সহায়ক। সাধারণত অস্ত্রে এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা গোত্রের কৃমি বংশবিস্তার করে। গ্যাস্ট্রিক জুস শক্তিশালী হলে, পেটের স্বাস্থ্য ভালো হলে কৃমি পেটে গেলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অগ্নিবল উদ্দীপ্ত করা গেলে শরীরে আম তৈরি কম হবে। কৃমির প্রকোপ কমবে।
কী কী খাবার খাওয়া যেতে পারে?
বেশি মিষ্টি খেলে বা কাঁচা চাল খেলে, ফলমূল না ধুয়ে খেলে বা অরক্ষিত খাবার খেলে তৃমির অনুপ্রবেশ হতে পারে। কৃমি ছোবলে অপুষ্টি, রক্তহীনতা, দূর্বলতা, কোলাইটিস হতে পারে। হতে পারে ত্বকের সমস্যা। কৃমির মোকাবিলায় ক্লেদকারক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কাঁচা চাল খাওয়া যাবেনা। তেল, ঝাল, মশলাদার খাবার, ঠান্ডা পানীয়, চর্বি জাতীয় খাবার, আইসক্রিম কমিয়ে দিতে হবে। এগুলো হলো ‘প্রিভেন্টিভ মেজার’। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে গেলে বাবা-মাকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সুসিদ্ধ খাবার খেতে হবে। গোলমরিচ, জিরে, ধনে, মৌরি এগুলো খাওয়া যেতে পারে। আর যদি কৃমি হয়ে যায় তবে পলাশ বীজের চূর্ণ রোজ সকালে আড়াইশো মিলিগ্রাম করে (পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত) খাওয়া যেতে পারে। বয়স্ক মানুষদের তিন গ্রাম করে রোজ দেওয়া যেতে পারে। কলিচুনের জলের সঙ্গে, গরম জলের সঙ্গে বা মধুর সঙ্গে পলাশ বীজ চূর্ণ খাওয়া যেতে পারে। আনারসের পাতার নিচের দিকের সাদা অংশ কৃমিনাশক। বিরঙ্গচূর্ণ কৃমির চিকিৎসায় কার্যকরী। ছোটদের ক্ষেত্রে আড়াইশো গ্রাম, আর বড়দের ক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম দেওয়া যেতে পারে, তিনবার করে।
তেতো মোক্ষম দাওয়াই
যেকোনও তেতোই কৃমিনাশক। কালমেঘ পাতা, চিরতা ভেজানো জল, হলুদ, তুলসী, পারসিক আজোয়ান, কুর্চিছালের চূর্ণ। ইন্দ্রযবচূর্ণ কৃমিনাশে ভালো কাজ করে। হাতের নাগালে থাকা নিমপাতা কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে বা এর রস তৈরি করে পান করা যাতে পারে। রসুনও কৃমি ধ্বংস করার জন্য পরিচিত। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দু কোয়া রসুন খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। অথবা দু কোয়া রসুন আধ কাপ জলে সিদ্ধ করে সে জলও পান করা যেতে পারে। লবঙ্গ অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, যা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। প্রতি দিন ১-২টি লবঙ্গ খেতে পারেন। ত্রিফলা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত সেবন করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, বাচ্চাদের কৃমির চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে হবে। না হলে সেই সূত্র ধরে অপুষ্টি, রক্তশূন্যতার মতো বড় বড় রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। আর একটা কথা, বাচ্চাদের কৃমি সংক্রমণ হলে একজন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক ঔষধ এবং প্রতিকার নির্ধারণ করতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.