মিলনের চরম মুহূর্তে পৌঁছেও অর্গাজম ঠিক মতো না হলে অতৃপ্ত থেকে যায় সঙ্গম সুখ। রাতের পর রাত এই এক সমস্যায় অশান্ত হয় মন, তিক্ত হয় দাম্পত্য। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যৌনচাহিদা কম, অর্গাজমের সমস্যায় ভোগেন প্রায় ৪০ শতাংশ মহিলা। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদের গোপন সমস্যা আড়ালে থেকে যায়। এই অতৃপ্তি নিয়ে স্বামী বা সঙ্গীর সঙ্গেও আলোচনা করেন না অনেকে। বহু বছর সহবাস করার পরেও কারও কারও নানা কারণে অর্গাজমের অভিজ্ঞতাই হয়নি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
তবে ট্রেন্ড কিছুটা বদলেছে। মানসিক ট্যাবু ভেঙে আজকাল প্রায়ই এমন প্রবলেম নিয়ে রোগী আসেন ডাক্তারের কাছে। এই সমস্যা লুকিয়ে রাখার নয়। চিকিৎসা করলেই সঙ্গম শেষের অস্বস্তি কেটে যাবে।
বিছানায় অতৃপ্তি- অ্যানরগাজামিয়া
মহিলাদের অর্গাজম হয় যৌন সঙ্গমের অনেকটা শেষের দিকে। মিলন শেষে এই তরল ক্ষরণ শরীরকে রিল্যাক্স করে। স্ট্রেস মুক্ত করে। শরীর ও মন দুই-ই হালকা হয়। এই তৃপ্তি না পাওয়া অর্থাৎ কোনও মহিলার অর্গাজম না হওয়ার সমস্যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ‘অ্যানরগাজামিয়া’। এটা মহিলাদের এক ধরনের সেক্সুয়াল ডিসফাংশন। তবে এই সমস্যা থাকলে তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ এর জন্য শরীরে কোনও গুরুতর অসুখ বাসা বাঁধবে না।
কারণ খুঁজে বের করুন
অ্যানরগাজামিয়া সমস্যার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। মানসিক চাপের জন্য যৌনতায় অনিচ্ছা, পার্টনার বা সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা-নৈকট্য কম থাকলে, তাঁর স্পর্শ পছন্দ না হলে, জোর করে মিলনে বাধ্য করা হলেও অর্গাজম ঠিক মতো হয় না।
এছাড়া মিলনের সময় সঙ্গীর দ্রুত বীর্যপাত হলে, যোনির ভিতরে যন্ত্রণা হলেও এমন হতে পারে। সোজা কথায়, অর্গাজমের সুখ পেতে হলে মিলনকে আনন্দদায়ক করে তুলতে হবে।
ভ্যাজাইনিসমাস সমস্যাটি থাকলেও অ্যানরগাজামিয়া হয়। এক্ষেত্রে মহিলার যোনির ভিতরে পেশিগুলি এতটাই সংকুচিত হয়ে টাইট থাকে যে সঙ্গীর পক্ষে ঠিকভাবে সঙ্গম করাই সম্ভব হয়ে ওঠে না। মহিলার কাছেও সঙ্গম খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়। সেই যন্ত্রণার আতঙ্ক থেকে তাঁর যৌন ইচ্ছা বা লিবিডোও ক্রমে কমতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এমন সমস্যা থাকা মহিলারা রতিসুখের চরম মুহূর্ত অর্গাজমের সাক্ষী হতে পারেন না।
এই ভ্যাজাইনিসমাসের সমস্যায় যৌনক্রীড়া সম্ভব না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তা সন্তানধারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন কিন্তু মা হওয়ার জন্য আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্য নিতে লাগতে পারে।
ডিসফাংশনের চিকিৎসা
মানসিক চাপের জন্য বা পার্টনারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অর্গাজম ঠিকমতো না হলে তা কাউন্সেলিং করে ঠিক করা যায়।
যৌন মিলনের সময় ভালবাসার অনুভূতি থাকা খুব দরকার।
অর্গাজমের সুখ পেতে হলে আদর-সোহাগ-ফোরপ্লের প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো করলে অর্গাজম সুখ অধরা থেকে যেতে পারে।
শুধুমাত্র অর্গাজম ঠিক মতো না হওয়া সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে তা থেকে মুক্তির উপায়ও এখন আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ খান। আমেরিকার ওষুধ নিয়ামক সংস্থা এফডিএ-র অনুমোদন করা ওষুধ ফাইবানসেরাইন, ব্রিমেলানোটাইড এই ডিসফাংশন ঠিক করতে অনেকটা সাহায্য করে। এ দেশের বাজারে ওষুধ দু’টি সহজলভ্য না হলেও ঘুরপথে সেগুলি আনিয়ে নেওয়া যায়।
মানসিক কারণ বা পার্টনারের তাড়াহুড়োর জন্য অর্গাজম না হলে তা নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। স্ট্রেস কমলে ও একটু সময় দিলেই সমস্যা কেটে যাবে।
ভ্যাজাইনিসমাসের চিকিৎসার জন্য কিছু লুব্রিকেন্ট জাতীয় জেল লাগাতে দেওয়া হয়।
অর্গাজম ও সন্তানধারণ
প্রথমেই বলে রাখি, অর্গাজম ডিসফাংশনের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই যে মহিলার যৌনক্রীড়ার সময় ঠিক ভাবে অর্গাজম হয় না, তাঁর সন্তানধারণে অসুবিধা যেমন হবে না তেমনই এই সমস্যার জন্য আইভিএফের সাহায্যে মা হওয়ার প্রয়োজনও পড়বে না।
২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।