ফর্সা মুখে চোখের চারিপাশে কালো গোলক! রূপে কলঙ্ক। এ লক্ষণ অসুখেরও পূর্বাভাস। তাই ফেলে না রেখে সমাধান জরুরি। কারণ খুঁজে সমাধানের উপায় বলে দিলেন জেনারেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শুদ্ধসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়। শুনলেন সুমিত রায়।
মুখের সৌন্দর্যের একটি অন্যতম আমাদের চোখ। যার যত চোখ পটলচেরা, সে ততই সুন্দর। তবে মায়াবী নয়নের চারধারে কারও যদি কালো দাগ পড়ে সেটা খুবই অনভিপ্রেত। এই সমস্যা এখন খুব অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে। আর বয়স বাড়লে তো কথাই নেই। জীবনের চাপে চোখের ধারে ডার্ক সার্কল ক্রমশই ডার্ক হতে থাকে।
ডার্ক সার্কল আসলে কী ?
ত্বকের রঙের গাঢ়ত্ব নির্ভর করে মেলানিন নামক একটি রঞ্জকের উপর। যার যতবেশি মাত্রায় মেলানিন থাকবে তার ত্বক তত কালচে হবে। চোখ এবং চুলের রং কালো হওয়ার পিছনেও এই রঞ্জকের ভূমিকা আছে। অনেকের চোখের চারপাশে এই রঞ্জক অনেকটা বেশি পরিমাণে জমা হয় তাই সেই স্থানের ত্বকের রং গাঢ় খয়েরি হয়ে যায়। যা ডার্ক সার্কল হিসাবে দেখা দেয়। এটা সত্যিই খুব অস্বস্তিকর। এই রোগের প্রকোপে শিশু থেকে বৃদ্ধ, কেউ বাদ যায় না। শিশু এবং মহিলাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে ২০ – ৩০ শতাংশ মানুষ এতে আক্রান্ত।
কারণ?
আমাদের চোখের নিচে খুব কম মাত্রায় মেদ থাকে। এই স্বাস্থ্যকর মেদ ঝরে গেলে তার ফলে ডার্ক সার্কল প্রকাশ পায়।
অনিদ্রা
অনেকদিন টানা যদি ঘুম না হয় তার ফলে ডার্ক সার্কল হতে পারে। তাই প্রত্যেকের নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। রাতে ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম হলে সাধারণত ডার্ক সার্কলের সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু কাজের চাপে এখন মানুষের ঘুমটাই ঠিকমতো হয় না। পরিবার, অফিস, সন্তান পালন সব সামলে আমরা আপস করি ঘুমের সঙ্গে। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মানসিক চাপ
আজকের যুগে যেখানে কম্পিটিশন প্রতি মূহূর্তে সেখানে একচুলও বিরাম নেওয়ার অবকাশ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই মানসিক চাপ বইতে বইতে চোখের নিচে কালি পড়বেই।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
কারও যদি হঠাৎ করে ওজন কমে তবে তবে শরীরের অনেক রকম প্রক্রিয়াগত অসুবিধাও হয়। ফলে ডার্ক সার্কল দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ডায়েটের ফলেও ক্ষতি হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস যা এক ধরনের অ্যালার্জি। এতে চোখ খুব চুলকাতে থাকে। ফলে চোখের নিচের চামড়াটা মোটা হয়ে যায় ও চোখের নিচে কালি পড়তে শুরু করে।
জন্মগত
অনেকের আবার ডার্ক সার্কল জন্মগত হয়।
ভাসক্যুলার
অনেক সময় শরীরে রক্ত চলাচলের উপরও নির্ভর করে ডার্ক সার্কল। তাই কারও যদি চোখে পাওয়ার বেড়ে যায় ও দীর্ঘদিন ধরে যদি চশমা না পরে সেক্ষেত্রে চোখের তলায় কালি দেখা দিতে পারে। এগুলি সাময়িক কারণ। চিকিৎসা করলেই সমস্যা চলে যায়।
বড় অসুখের আভাস
অনিদ্রা বা হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়াটা কিন্তু অনেক রকম গুরুতর রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম, যক্ষ্মা (TB), ডায়াবেটিস, রক্তাল্পতা বা ক্যানসার। রক্তাল্পতা হলে ত্বকের কিছু জায়গায় পিগমেন্টেশন বেড়ে (গাঢ় খয়েরি হয়ে ওঠে) যায় আর কিছু জায়গায় পিগমেন্টেশন কমে যায় (ফ্যাকাশে হয়ে যায়)। সাধারণত রক্তাল্পতায় ফ্যাকাশে হয়ে যায় অনেকেই। ফলে চোখের কালি আরও স্পষ্ট বোঝা যায়। এছাড়া চোখে কোনও আঘাত লাগলেও এমন হতে পারে।
সমাধানের উপায়
এমন হলে জেনে নেওয়া দরকার যে, সেটা কোনও রোগের কারণে হচ্ছে কিনা। নাকি পরিশ্রম বা মানসিক চাপের কারণে। যদি রোগ লুকিয়ে থাকে তবে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। এছাড়া অনিদ্রা এবং মানসিক চাপ বেশি থাকলে কাউন্সেলিং জরুরি।
ডিপিগমেন্টেশন থেরাপি
হাইড্রোকুইনোন, কোজিক অ্যাসিড, এজেলাইক অ্যাসিড, রিটিনোইক অ্যাসিড জাতীয় ডিপিগমেন্টেশন এজেন্টস চোখের নিচে লাগিয়ে ডার্ক সার্কল দূর করা সম্ভব। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করাই ভাল।
লেজার থেরাপি
লেজার দিয়ে মেলানিনের এই পিগমেন্টেশন সরিয়ে ফেলা সম্ভব।
সার্জারি
অনেক সময় অপারেশনের মাধ্যমেও ডার্ক সার্কল গায়েব করা সম্ভব।
মেনে চলুন
যাঁদের এমন সমসযা রয়েছে তাঁরা নিয়মিত চোখের উপর কোল্ড কমপ্রেস বা ঠান্ডা সেঁক দিন। পাতলা কাপড়ে কিছু বরফ নিয়ে তা ভিজিয়ে চোখে দিন।
নিয়মিত নিশ্চিন্তে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমান।
বেশি করে ফল খান। বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল, কমলা, মোশম্বি, বাতাবি লেবু খান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.