পুজো মানেই পেটপুজো। কোনওদিন জমিয়ে মাটন বিরিয়ানি, তো কোনওদিন নির্জলা উপোস। এই অনিয়মের সঙ্গী গ্যাস-অম্বল-বুকজ্বালা। অবশ্য এই রোগ বাঙালির বারোমাস্যা। কীভাবে সুস্থ থাকবেন? জানাচ্ছেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. সুনীলবরন দাস চক্রবর্তী। তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করলেন জিনিয়া সরকার।
দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) মানেই খাওয়া-দাওয়া, সাজগোজ আর ঘোরাঘুরি। সোজা কথায় অনিয়মের চূড়ান্ত। ঠিক সময়ে ঘুম না হওয়া, অসময়ে খাওয়া সব মিলিয়ে পুজোর সময় পেটের বারোটা পাঁচ। গ্যাস-অম্বল-বুকজ্বালার কষ্ট বাড়তে বাধ্য। যাঁদের আগে থেকেই এহেন অসুখ রয়েছে, তাঁদের তো আরও সাংঘাতিক অবস্থা হয়। তাই আনন্দ, হই-হুল্লোড়ের মাঝেও কিছু জিনিস কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। না হলে পুজো মিটতে না মিটতেই পেটের সমস্যা কাহিল করবে।
পুজোয় গ্যাস-অম্বল এড়াবেন কী করে?
শত আনন্দ, আড্ডার মাঝেও সময়ে খাওয়া খুব জরুরি। রাতে ঠাকুর দেখা বা ঘোরাঘুরি করুন কিন্তু ওই সময়ে চা-কফি এড়িয়ে চলুন, খাবেন না। ফাস্টফুড মাঝরাতে খাওয়া খুবই অস্বাস্থ্যকর। হতে পারে, সারা বছর হয়তো গ্যাস-অম্বলের সমস্যা নেই কিন্তু এই সময়ে তাঁদেরও এই ধরনের অসুবিধা হতে পারে। তাই মেনে চলুন কিছু বিষয়। যেমন– বাইরে বা রেস্তেরাঁয় খেলেও খুব অল্প পরিমাণে খান, পর্যাপ্ত জল পান জরুরি আর এই সময় বেশি চা-কফি বা মদ্যপান বিপদ বাড়ায়। তাই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখুন।
খালি পেটে বা উপোসের পর কী জরুরি?
টানা অনেক্ষণ উপোস করা বা খালিপেটে থাকা ক্ষতিকারক। কারণ পাকস্থলিতে অ্যাসিড সর্বক্ষণ নিঃসৃত হতে থাকে। খাবার খেলে সেই অ্যাসিড ভালভাবে খাবারের সঙ্গে মিশে হজম ক্রিয়া সম্পন্ন করে। কিন্তু খালি পেটে পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমতে থাকে যা থেকে পেট জ্বলতে থাকে। অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্সের সমস্যা হয়। তাই বেশিক্ষণ উপোস না করাই ভাল। আরও মারাত্মক টানা উপোসের পর যদি কেউ তেলেভাজা বা লুচি, কচুরি, তেল-মশলাদার তরকারি খান সেটা মারাত্মক।
উপোসের পর প্রথমে শরবত বা ফলের রস খান। তারপর ধীরে ধীরে বারবার জল খান। তার কিছুক্ষণ পর সলিড খাবার খান। প্রথমে ড্রাই ফুড যেমন, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি। তার সঙ্গে ফল খেতে পারেন। তারপর অল্প তেলে রান্না করা উপমা, চিঁড়ের পোলাও, সবজি দিয়ে খিচুড়ি বা ভাত, ডাল, সবজি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
সারাবছরই যাঁরা ভোগেন, তাঁদের করণীয়?
যাঁদের দীর্ঘ সমস্যা, তাঁরা মূলত বদহজম, পেটফোলা, পেটে চিনচিনে ব্যথা, অম্বল, বুকজ্বালার সমস্যায় ভোগেন। এঁদের করণীয়,
খাবার অল্প পরিমাণে বারেবারে খান।
সারাদিনের মিল ৩ বার না করে ৫-৬ বার সেই মিল করুন।
খাওয়ার সময় অল্প পেট ভরলেই খাওয়া থামিয়ে দিন। একেবারে পেট ভর্তি করে খাবার খাওয়া অস্বাস্থ্যকর।
খাবার ভাল করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস জরুরি। এতে হজমজনিত সমস্যা কমে।
পুজোর কটাদিন যাঁদের আগে থেকেই পেটের নানা সমস্যা রয়েছে, বাইরের খাবার এড়িয়ে গেলেই ভাল করবেন। খেলেও সিদ্ধজাতীয়, কম তেলে রান্না খাবার খেতে পারেন।
কোল্ড ড্রিংক্স বা সফট ড্রিংক্স পান মোটেই ভাল নয়। ভাল থাকতে এই অভ্যাস ছাড়তেই হবে।
যে কোনও খাবার খেয়ে জল একঘণ্টা পরে পান করুন। এতে খাবার হজম হয় ভাল। গ্যাস-অম্বলের সমস্যা নির্মূল হয়।
রাতে বা দুপুরে খাওয়ার পর একঘণ্টা পরে শুতে যান।
অম্বল-বুক জ্বালা কি ধরলে সারে না?
এটা ভুল কথা। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তন এক্ষেত্রে মূল দায়ী। তাই এই দু’টি ঠিক করতে পারলেই অনেক ভাল থাকা যায়। এই সমস্যা কী জন্য হচ্ছে তার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না। বিভিন্ন মানুষের গ্যাস-অম্বলের কারণ বিভিন্ন। তাই দীর্ঘদিন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়ে চিকিৎসা করলে, ঠিক কারণ নির্ণয় হলে রোগ সারবে।
কতটা জল পান এক্ষেত্রে জরুরি?
সুস্থ থাকতে, পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সারাদিনে তিন লিটার জলপান যথেষ্ট। আর খাওয়ার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই জলপান করা একেবারেই উচিত নয়।
গ্যাসের সমস্যায় নিজে নিজের ডাক্তারি একেবারেই নয়-
সবচেয়ে ভুল সবাই যেটা করে তা হল, গ্যাস-অম্বল সমস্যায় নিজের মতো ওষুধ কিনে খেয়ে। কখনও মাঝেমধ্যে একটা-আধটা ওষুধ খেলেন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু কথায় কথায় বা নিয়মিত এই অ্যান্টাসিড জাতীয় ট্যাবলেট বা গ্যাসের ট্যাবলেট সেবন একেবারেই ঠিক নয়।
তাই এই ধরনের সমস্যায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন সেটা জানা অতি জরুরি।
ধরুন, বেশ অনেকদিন ধরে এই ধরনের ওষুধ খেয়ে পেটের সমস্যা কমছে না, তখন।
গ্যাস-অম্বলের সঙ্গে পেটে ব্যথা, বমি ও বমির সঙ্গে রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গ্যাসের সমস্যার সঙ্গে হঠাৎ করে ওজন কমতে শুরু করলে, বারবার মল ত্যাগ বা মলের সঙ্গে রক্ত এলে সেক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তার দেখান।
আর পেটে ব্যথা যদি পেটের উপরের অংশে হয়, তাহলে খুব সাবধান। কোনওভাবেই গ্যাসের ব্যথা ভেবে এক্ষেত্রে ওষুধ খাবেন না। উপরের পেটের ব্যথা গ্যাস-অম্বলের জন্য নাও হতে পারে। অন্য কারণও লুকিয়ে থাকতে পারে।
বিশদে জানতে ফোন করতে পারেন – ৯৮৩০৪৫৭৪৪৪
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.