গৌতম ব্রহ্ম: একাধিক প্রাকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে সহজেই ডেঙ্গু জ্বরকে কাবু করা সম্ভব। তবে, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর’–এই আপ্তবাক্য মাথায় রেখে ডেঙ্গু হওয়ার আগেই কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এমনটাই দাবি করলেন শহরের আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথি ডাক্তাররা।
ডেঙ্গু জীবাণু ও প্লেটলেটের গঠন প্রায় একরকম। সেই কারণে ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার সময় রোগীর শরীরে প্লেটলেট হুহু করে কমতে থাকে। আমাদের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ডেঙ্গু জীবাণুকে মারতে গিয়ে প্লেটলেটকে মেরে ফেলে। তাই এই সমস্যা। এই প্লেটলেট বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই পেঁপে পাতার রসের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকরাও এখন পেঁপে পাতার রস থেকে তৈরি ক্যাপসুল প্রেসক্রাইব করছেন। কিন্তু রোগ হওয়ার আগেই যদি তা ঠেকানো যায়? নিদেনপক্ষে যদি হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়? বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু মোকাবিলার এই ফরমুলাই বাতলেছেন। তাঁদের মত, প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে, জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলেও তা সুবিধা করতে পারে না। পারে না বংশবিস্তার করতে।
প্রথমে আসা যাক আয়ুর্বেদের কথায়। পিপুল, তালমিছরি, আদা, গোলমরিচ, ছোট এলাচ, নিম-তুলসী, গুরুচির মতো উপাদান আমাদের হাতের নাগালেই রয়েছে। এগুলি বয়সের হিসাবে বিভিন্ন অনুপাতে নেওয়া যেতে পারে। ‘শ্যামাদাস বৈদ্য শাস্ত্রপীঠের অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ করমহাপাত্র জানিয়েছেন, পিপুল ২৫০ মিগ্রা, তালমিছরি ১৫০০ মিগ্রা, আদা ২৫০ মিগ্রা, গোলমরিচ ২৫০ মিগ্রা, ছোট এলাচ ১২৫ মিগ্রা চূর্ণ করে মিশিয়ে সকাল-সন্ধে খালি পেটে মধু দিয়ে চেটে খেতে হবে। অথবা সকালে দুই থেকে তিনটি তুলসীপাতা ও গুরুচি ভেজানো রস খাওয়া যেতে পারে।
হোমিওপ্যাথি মতেও ডেঙ্গুর ‘প্রতিষেধক’ রয়েছে। সাধারণত ব্যক্তিবিশেষে হোমিওপ্যাথি ওষুধের ডোজ আলাদা হয়। কিন্তু মহামারীর ক্ষেত্রে ‘জেনাস এপিডেমিকাস’ ফরমুলা প্রয়োগ করা হয়। ডি এন দে হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গু বা অজানা জ্বরের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। যেমন কোনও অঞ্চলে যদি গাঁটে—গাঁটে ব্যথা হওয়া ডেঙ্গু বা ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ দেখা যায়, তবে ‘ইউপেটোরিয়াম পার্ফ’ দেওয়া যেতে পারে অঞ্চলের বাসিন্দাদের। এছাড়া উপসর্গ দেখে ‘রাস টক্স’ ও ‘ব্রায়োনিয়া’ দেওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গু হলেও এই তিনটি ওষুধই হোমিওপ্যাথি ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডোজ জেনে নিতে হবে। জানালেন ডি এন দে কলেজের অধ্যাপক ডা. শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়।
আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রেও ডেঙ্গু হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে। নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করাতে হবে। প্লেটলেটের সংখ্যা মাপতে হবে। প্রদ্যোৎবাবু জানালেন, ডেঙ্গু হলে ঘরোয়া টোটকা চলতেই পারে। তবে তার সঙ্গে কিছু বাড়তি ওষুধ চাই। যেমন, লক্ষ্মীবিলাসের বড়ি, মৃত্যুঞ্জয় রস, ত্রিভুবনকীর্তি রস। এগুলি দিনে দু’বার বা তিনবার দু’টি করে বড়ি খাওয়া যেতে পারে। আর প্লেটলেট কমতে শুরু করলে অবশ্যই পেঁপে পাতার রস খেতে হবে। ডেঙ্গুতে অনেক সময়ই ‘হেমারেজিক শক’ হয়। অর্থাৎ শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়। এসব ক্ষেত্রে ‘বোলবদ্ধ রস’ কার্যকর। তাছাড়া মকরধ্বজ ও মধু সহযোগে নবায়স লৌহ খেতে হবে।
আরও কিছু একক দ্রব্য ডেঙ্গুকে কাবু করতে পারে:
নিম পাতা: নিমের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরের প্লেটলেট বাড়ানোর পাশাপাশি শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাছাড়া রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রভাবকে দ্রুত কমিয়ে ফেলতেও নিমপাতা সাহায্য করে থাকে।
কমলালেবুর রস: এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরের টক্সিনকেও বের করে দিতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোষদেহের ক্ষত সারাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
মেথি: শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমাতে ও শরীরের ব্যথা নিরাময়ে ভাল কাজ করে। নিশ্চিন্ত ঘুম হয়, যা শরীরকে দ্রুত সুস্থ করার ক্ষেত্রে উপযোগী।
পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পুদিনার তেল মশা ঠেকায়।
শাকসবজি: অলিভ, সয়াবিন, ব্রোকোলি, ফুলকপি, টম্যাটো প্রভৃতি সবজি শরীরের রক্তের প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে। রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। সঠিক থাকে প্লেটলেটের মাত্রা। তাই প্রচুর পরিমাণে সবজি খান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.