ছবি: প্রতীকী।
জন্ম থেকেই কানে শুনতে সমস্যা বাড়ছে। কীভাবে সম্ভব মোকাবিলা? জানাচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. দীপ্তাংশু মুখোপাধ্যায়।
হু-এর তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ৩৬ কোটি মানুষ শ্রবণজনিত সমস্যায় ভুগছে। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশের শুনতে অসুবিধা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই জন্ম থেকেই বধির। ৬ বছরের কম বয়সি ১০০ জনের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ২ জন বধির। আর একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ভারতে এক হাজার সদ্যোজাতের মধ্যে ১-৪ জন ‘সিভিয়ার হেয়ারিং লস’-এ ভুগছে।
টেস্ট করুন
জন্মের পরই OAE ও BERA টেস্ট করলে বাচ্চার জন্মাবধি শ্রবণ সমস্যা আছে কি না তা বোঝা যায়। জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে OAE টেস্ট করতে হবে। তাতে পাস করে গেলে বাচ্চা শুনতে পাবেই। কিন্তু পাস না করলে আবার সাত-দশ দিন বাদে তাকে OAE টেস্ট করতে হবে। তাতেও ফেল করলে BERA টেস্ট করতে হবে। এই টেস্টে পাস না করার অর্থ তখনই বাচ্চাকে শ্রবণ যন্ত্র দিতে হবে। ‘আর কিছু দিন দেখি’ বা ‘বড্ড ছোট্ট বাচ্চা’ বলে দেরি করবেন না।
তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসা শুরু
জন্মের পর OAE টেস্ট বা ইউনিভার্সাল নিওনেটাল স্ক্রিনিং এখনও এই দেশে বাধ্যতামূলক নয়। তাই বেশিরভাগেরই সমস্যা তখন ধরা পড়ে না। বাচ্চা শুনতে না পেলে বলতেও পারবে না। তিন-চার বছর বয়স হওয়ার পরও শিশু যখন কথা বলতে পারে না, তখন বাবা-মায়ের টনক নড়ে। মনে রাখবেন, জন্ম থেকে সাড়ে তিন বছর বয়স পর্যন্ত শ্রবণ সমস্যার চিকিৎসা করলে বা হিয়ারিং এইড লাগালে বাচ্চা আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই শুনতে পারবে, কথা বলতে পারবে। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি জন্মের ছ’মাসের মধ্যে শ্রবণ সমস্যা ধরা পড়ে। সাড়ে
তিন বছরের পরে চিকিৎসা শুরু করলে একদম স্বাভাবিক বাচ্চার মতো শুনতে পাবে না। কথা বলা বা অন্যান্য ব্যবহারজনিত বিষয়গুলিও পুরোপুরি শিখতে পারবে না।
দেরি করলে তৈরি হবে না অডিটরি সেন্টার
গর্ভাবস্থা থেকে বা জন্মের পর থেকে বাচ্চা যে যে শব্দ শোনে তা তাদের ব্রেনে আলাদা আলাদা অডিটরি সেন্টার তৈরি করে। সেখানে নেটওয়ার্কিং তৈরি হয়। শ্রবণের সঙ্গে মাথার ডেভলপমেন্ট হওয়ায় শিশু আস্তে আস্তে কখন ‘বাবা’ বলবে কখন ‘মা’ বলবে তা শিখে যায়। চার-পাঁচ বছর বয়সে চিকিৎসা শুরু করে তখন তার কানে গিয়ে ‘বাবা’ বলে শেখানো হলে সে তখন শুনতে পাবে। কিন্তু ‘বাবা’ শুনে কেমন প্রতিক্রিয়া দিতে হয় তা দু’বছরের বাচ্চা যত তাড়াতাড়ি পারবে চার বছরের শিশুটি পারবে না। পাঁচ বছর হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসা করলে কিছুই করা যাবে না।
বাচ্চার শোনার সমস্যার কারণ
কেন বাড়ছে অসুখ?
অ্যালকোহল, ধূমপান, মাদক সেবনের প্রবণতা মেয়েদের মধ্যে এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। যার কু-প্রভাবে শিশু বধির হতে পারে। এই কারণে এখন জন্মাবধি বধির শিশুর সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে।
বুঝবেন কীভাবে বাচ্চা শুনছে না?
বাচ্চা ঘুমালে ঘরের ভিতরে প্রচণ্ড জোরে আওয়াজ করে বা জোরে দরজা বন্ধ করার শব্দে ঘুম না ভাঙলে বা সে না চমকালে, মোবাইল-টিভির আওয়াজ শুনে না তাকালে বা শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা না করলে বা এই শব্দে ঘুম ভেঙে বাচ্চা না কাঁদলে, বাচ্চাকে পিছন থেকে ডাকলে সে সাড়া না দিলে বা ঘুরে না তাকালে, বুঝতে হবে শ্রবণ সমস্যা আছে।
ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট
হিয়ারিং এইড ছাড়াও ককলিয়ার যন্ত্রের সাহায্যে বধির বাচ্চা শুনতে পায়। এটা পেসমেকারের মতো একটা যন্ত্র। সাধারণ হিয়ারিং এইডের মতো খোলা-পরা করতে হয় না। ছ’মাস থেকে দু’বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুর কানের উপর দিকে ব্রেনের খুলির ভিতর দিয়ে গিয়ে অন্তঃকর্ণে এটি বসিয়ে দেওয়া হয়। আজীবন এই যন্ত্রের সাহায্যে শোনা যায়। এমনিতে এটি কয়েক লাখ টাকা দাম। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে প্রতি বছর সরকারি হাসপাতালে বেশ কিছু শিশুকে বিনামূল্যে এটি প্রতিস্থাপিত করা হয়। তবে সমস্যা থাকলে তা জন্মের পরেই সর্বাগ্রে চিহ্নিত করা জরুরি। OAE টেস্ট করা হল কি না তা খেয়াল রাখতে হবে বাবা-মাকে। অথবা সমস্যা যাতে না হয় তার জন্য গর্ভাবস্থা থেকেই মাকেও সতর্ক থাকতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.