ওষুধ খেলে কমে, আবার শুরু হয়। অ্যালার্জিতে (Allergy) নাজেহাল। ঘুরে ফিরে আসে বারবার। হোমিওপ্যাথিতে গোড়া থেকে এর নির্মূল সম্ভব। পরামর্শে নিদান ইন্টারন্যাশনাল হোমিওপ্যাথিক ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডা. কুণাল ভট্টাচার্য। তার কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।
অ্যালার্জি আসলে অ্যালার্জেন্সের বিরুদ্ধে শরীরের একটি প্রতিক্রিয়া। শরীরে বাইরে থেকে কোনও অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান প্রবেশ করলে যদি তা শরীর গ্রহণ করতে না পারে তখনই প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এটাই অ্যালার্জি। অর্থাৎ শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে থাকে। যেমন, ইনফ্লামেশন অর্থাৎ চোখ জ্বালা ও লাল হয়ে যাওয়া, চাকা চাকা ফুসকুড়ি, হাঁচি, সর্দি-কাশি এমনকী, শ্বাসকষ্টও। আর এই অ্যালার্জি বা অ্যালার্জেন্স থেকে দূরে থাকা দায়। চলার পথে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের প্রবেশ ঘটবেই। তাই ভাল থাকতে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধই সঙ্গী। ক্রনিক অ্যালার্জি রোগ যেমন চিরকালীন, ওষুধটিও চিরসঙ্গী।
উপশমের অন্য পথ –
প্রধানত অ্যালোপ্যাথিতে উপশমের পথ তাৎক্ষণিক হয় কিন্তু রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয় না। বর্তমান সময়ে চিকিৎসক মহলের প্রধান চিন্তার বিষয় অ্যাটোপি (Atopy) অর্থাৎ বংশগত কারণে বা বাড়ির বড়দের অ্যালার্জি থাকলে তা থেকে পরবর্তী প্রজন্মের অ্যালার্জির প্রবণতা। যা থেকে হাঁপানি, একজিমা, আমবাতের মতো উপসর্গ হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিনগত বা বংশগত অ্যালার্জি বা অ্যাটোপির প্রবণতা গত ৩০ বছরে পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় অ্যাটোপি বা বংশগত অ্যালার্জির এই প্রবণতাকে দমিয়ে রাখলেও নির্মূল করা অসম্ভব বলা হয়েছে। এই বংশগত রোগকে রোধ করতে ইমিউনো মডিউলেশনের জন্য হোমিওপ্যাথি (Homeopathy) ভালই কার্যকর। অ্যালার্জির পিছনে অ্যালার্জেন আপাতভাবে দায়ী হলেও সম্পূর্ণ দায় তার নয়। কারণ একই অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলেও সবার তো অ্যালার্জি হয় না। মূল দোষী হল আমাদের বংশসূত্রে প্রাপ্ত রোগ প্রবণতা (হোমিওপ্যাথির ভাষায় ‘মায়াজম’)।
হোমিওপ্যাথিক ওষুধ আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে যে শরীর যদি কোনও অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসে তবে তা বেশি উত্তেজিত হয় না, যা অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় অসম্ভব।
অ্যালার্জির নানা প্রকার-
অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও কনজাংটিভাইটিস – অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে জল পড়া ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপসর্গ প্রকাশ পায়। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় এই প্রবণতা তৈরি হলে তাকে সিজন্যাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলে। মূলত, ধুলোবালি, ফুলের রেণু, পুরনো বই বা কাপড়ের ভিতরে থাকা ধুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নাকের ভিতর প্রবেশ করে মিউকাস মেমব্রেন উত্তেজিত হয়, ফলে হাঁচি, সর্দি শুরু হয়। এই সমস্যা চোখে হলে চোখ লাল হয়ে, ফুলে গিয়ে জল গড়ায়, তাকে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বলে। তাছাড়া ভীমরুল, পিঁপড়ে, মৌমাছির মতো পতঙ্গের কামড় ও দেহের রস শরীরে প্রবেশ করলে বেশি মাত্রায় অ্যালার্জি হয়ে চোখ-মুখ-নাক বুজে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
অনেকের শরীরের সঙ্গে বিশেষ কিছু খাবারের বিরোধ থাকলে সমস্যা হয়। প্রধানত বেগুন, চিংড়িমাছ, ডিম, দুধ, সামুদ্রিক জীব প্রভৃতি। গমে উপস্থিত গ্লুটেন নামক প্রোটিন থেকেও অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
কারও আবার প্রসাধনী, পোশাক ও গয়নায় থাকা কেমিক্যালের সংস্পর্শে ত্বকে প্রদাহ বা অ্যালার্জি হতে পারে। যাকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বলে। এতে এগজিমার মতো ফুসকুড়ি, চুলকানি, ব্যথা, ত্বকের ফোলাভাব ও খোসা ওঠার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
বিভিন্ন ওষুধ খেয়েও অ্যালার্জির সূত্রপাত হয়, যেমন সালফোনামাইড, মেট্রোনিডাজোল, অ্যাসপিরিন-সহ কিছু ব্যথার ওষুধ প্রভৃতি। কিছু ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অ্যালার্জি হতে পারে।
কারও রোদে বেরোলে মুখ, ঘাড়, হাতের মতো খোলা অংশ লাল হয়ে ঘামাচির মতো অসংখ্য দানা বেরিয়ে যায়। আমবাত হয়, ত্বক কালো হয়ে যায়। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যাকটিনিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। সেটি সাময়িকভাবে হয় ও কমেও যায়। তবে দু’সপ্তাহের বেশি হলে ক্রনিক আর্টিকেরিয়া বা ডার্মাটাইটিস বলা হয়।
শীতকাল ও বসন্তকালে ফুলের পরাগ উড়ে বেড়ায়, তাই সেই সময় সিজনাল অ্যালার্জি হতে পারে ও সারা বছর ধরে এর প্রবণতা থাকলে তাকে পেরিনিয়াল অ্যালার্জি বলা হয়।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি –
অ্যালার্জি নির্ণায়ক পরীক্ষার মধ্যে রক্তপরীক্ষা টোটাল আই.জি.ই ও স্পেসিফিক আই.জি.ই অন্যতম। তাছাড়া কমপ্লিট হিমোগ্রাম ও ইওসিনোফিল কাউন্ট, স্কিন প্রিক অ্যালার্জি টেস্টের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা বোঝা সম্ভব।
কখন হোমিওপ্যাথিও ভাল?
অ্যালার্জির তাৎক্ষণিক সমস্যায় হোমিওপ্যাথি ভাল কাজ দেয়। যেমন,
ধুলো থেকে শ্বাসকষ্ট হলে পোথোস (Pothos), ব্রোমিয়াম (Bromium)
মাছ থেকে অ্যালার্জিতে আর্সেনিক অ্যালবাম (Arsenic Album)
মাংস খেয়ে অ্যালার্জি হলে অ্যান্টিমক্রুড (Antimcrud)
বসন্তকালে অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় পালসেটিলা (Pulsatilla)
দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জিকে প্রতিহত করে ক্যালকেরিয়া-কার্ব (Calceria-Carb), ইথুজা(Aethusa)।
চিংড়িমাছ, কাঁকড়া বা সামুদ্রিক জীব খেয়ে সমস্যা হলে আর্টিকা ইউরেনস্ (Urtica Urens) উপকারী।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে লক্ষণ অনুযায়ী সালফার, পালস, ন্যাট মিউর, সিপিয়া, থুজা ইত্যাদি ধাতুগত অ্যান্টিমায়াজমেটিক ওষুধের সাহায্য নিলে দীর্ঘস্থায়ী উপকার পাওয়া সম্ভব।
তবে, উপরিউক্ত ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই সেবন করা উচিত নতুবা ফলাফল হিতের বিপরীত হওয়া অনিবার্য।
বিশদে জানতে ফোন করুন – ৯৮৩১৪২১৬৯৬, ৯০৩৮৯৮১৯৪০
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.