স্টাফ রিপোর্টার: শীতের সঙ্গে হাজির জ্বর-সর্দিকাশি। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো প্রায় দেড় দশক পর ফের বিভিন্ন জেলায় হানা দিয়েছে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমিত মারাত্মক হুপিং কাশি।
হুপিংয়ের আক্রমণে নাজেহাল বাচ্চা থেকে বুড়ো! বিশেষ করে ৩ থেকে ১৫ বছরের বাচ্চারা রোগের সফট টার্গেট। তবে বয়স্কদেরও ছাড়ছে না। ইতিমধ্যে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তিনজন ভর্তি। রোগী ভর্তি ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। জ্বর-সর্দি বা লাগাতার কাশি ওষুধে না কমলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন রাজ্য স্বাস্থ্যকর্তারা। হঠাৎ জ্বর সঙ্গে খুশখুশে কাশি। মামুলি শীতের জ্বর-কাশি ভেবে অবহেলা করলেই মহাবিপদ। কারণ, জ্বর কমলেও খুশখুশে কাশি ক্রমশ মারাত্মক চেহারা নিচ্ছে। কাশি আর থামছেই না। টানা কাশতে কাশতে কেউ বমি করছেন। আর অনেক বাচ্চা তো জ্ঞান হারাচ্ছে। ডাক্তারের কাছে গেলে রুটিন একটা-দুটো টেস্ট করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন করলেন। কিন্তু কাশি কমা তো দূরস্থান ক্রমশ গলা বসে কাশির সঙ্গে হুপ-হুপ শব্দ। ডাক্তার ইসিজি করে দেখলেন ফুসফুসে দাগ। হুপিং কাশি! স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ‘‘যক্ষ্মার মতো হুপিং কাশিও ‘নোটিফায়েড ডিজিজ’।’’ রোগ শনাক্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বা স্বাস্থ্য ভবনে জানাতে হবে। রোগের চিকিৎসা হবে সরকারি হাসপাতালে।
মূলত শিশুদের মধ্যে এই ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ দেখা গেলেও, বড়দের মধ্যেও সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের বিভাগীয় নোডাল অফিসার ডা. অসীম দাশ মালাকার জানিয়েছেন, ‘‘আইডি হাসপাতালে বেশ কয়েকটি বাচ্চা হুপিং কাশির লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা চলছে। চিকেন পক্সের মতো এই রোগও নির্মূল হয়নি। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও হতে পারে।’’ আইডি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার ডা. অমিতাভ ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘জন্মের দেড় সপ্তাহের মধ্যে ডিটিপি (ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, পারটুসিস) রুটিন টিকা দেওয়া হয়। এরপর আরও তিনদফায় এই টিকা নিতে হয়। কোনও কারণে একটি ডোজ বাদ পড়ে গেলে একটু বড় হলে বাচ্চার হুপিং কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনির্বাণ দলুই বলেছেন, ‘‘এই রোগের ব্যাকটিরিয়া শ্বাসনালির উপরিভাগে আক্রমণ করে। অনেক সময় শ্বাসনালির উপর চাপ দেয়। রোগ সম্পূর্ণ ভ্যাকসিনে নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন যাদের ফের হুপিং কাশি হচ্ছে, দেখতে হবে তারা কি ডিটিপি ভ্যাকসিন নেয়নি। আর নেওয়ার পরেও যদি হয় সেক্ষেত্রে খতিয়ে দেখা দরকার।
আবার হুপিং কাশির জন্য টিকা নেওয়া থাকলেও পারটুসিস ব্যাকটিরিয়ার জিনের চরিত্র সম্ভবত বদল হচ্ছে। তা না হলে এত বছর বাদে কেন ফের এই রোগ দেখা যাচ্ছে? চিন্তায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মোদ্দা কথা, আর পাঁচটা রোগের মতো হুপিং কাশিও ফের চোরাগোপ্তা থাবা বসাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.