ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: বাচ্চা অত্যধিক দুরন্ত। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। খেয়াল করলে দেখা যাবে পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকের শরীর একটি নির্দিষ্ট ঘড়ি ধরে চলে। যে কারণে একটা সময় পরে ঘুম পায়, খিদে পায়, ভেঙে যায় নিদ্রা। শরীরের এই ঘড়িকে বলে সারকাডিয়ান ক্লক। কারও ক্ষেত্রে তা দেরিতে চলে। আর পাঁচজনের থেকে বিলম্বে ঘুম ভাঙে তার। বুঝতে পারেন না মা-বাবা। ভাবেন ইচ্ছে করে শুয়ে আছে। এমন খুদেকে মর্নিং স্কুলে ভরতি করে দিলেই বিপত্তি।
বড়রা ঘুমোতে না পারলে দিনে ঝিমোয়। ছোটদের ক্ষেত্রে হয় উলটো। তারা হাইপার অ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে। মন বসাতে পারে না পড়ায়। স্কুল থেকে আসতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। সব সময়ই সে এটা ভাঙছে ওটা ফেলছে। চিকিৎসা পরিভাষায় এ অসুখের নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভ ডিজঅর্ডার। দেখা গিয়েছে এই এডিএইচডি-তে যারা আক্রান্ত তাদের ৫০ শতাংশরই ঘুম হয় না পর্যাপ্ত। পলিসমনোগ্রাফি টেস্টে ধরা পড়েছে তা।
সমস্যা রয়েছে আরও। অসংখ্য শিশু উঠে পড়ে মাঝরাতে। মা-বাবা ভাবেন খিদে পেয়েছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায় জানিয়েছেন, ছ’মাস বয়স পর্যন্ত এটা হতে পারে। কিন্তু দু’তিন বছরের শিশু বার বার উঠে পড়ছে এটা স্বাভাবিক নয়। এমন শিশুকে নিয়ে মা-বাবা চেম্বারে এলেই জিজ্ঞেস করতে হবে, নাক ডাকে কি? চিকিৎসকরা বলছেন নাক ডাকা অত্যন্ত ভয়ের। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রথম ধাপ এটাই। ডা. অলোকগোপাল ঘোষাল জানিয়েছেন, অগুনতি শিশু আক্রান্ত অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায়। ঘুমের সময় গলা এবং উপরের শ্বাসনালির পেশীগুলি শিথিল হয়ে যায়, বন্ধ করে দেয় শ্বাসনালি। বাধ্য হয়েই নাক ডাকে খুদে। হাঁ করে নিশ্বাস নেয়।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শুভাশিস রায়ের কথায়, মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। টানা পাঁচ-সাত বছর ওইভাবে দম নিতে গিয়ে বদলে যায় ঠোঁটের গড়ন। ঊর্ধ্বওষ্ঠ উপরের দিকে উঠে ত্রিভুজাকৃতি হয়ে যায়। চিন্তা একটাই। এখনও সরকারি বেসরকারি কোনও স্বাস্থ্য বিমাতেই এ অসুখের চিকিৎসা হয় না। যা নিয়ে কপালে ভাঁজ ডাক্তারদের। ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া নিজে মারাত্মক। তার থেকে শরীরে বাসা বাঁধে মারণ অসুখ। অবিলম্বে বিমা সংস্থাগুলোর রোগের তালিকায় একে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। পলিসমনোগ্রাফি টেস্টের মাধ্যমে ধরা পড়ে অসুখ। বাড়াবাড়ি হলে সাহায্য নিতে হয় সিপ্যাপ মেশিনের। দাম ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। মেশিন চলে পাঁচ-সাত বছর। শুক্রবার বিশ্ব ঘুম দিবস। তার আগে বৃহস্পতিবার ঘুম নিয়ে আলোচনায় একজোট হয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.