এই সময়ে অনেকেই জ্বরে কাবু। সুস্থ হলেও ক্লান্তি কাটছে না। সকলের দ্রুত সেরে ওঠার জন্য চাই বিশেষ ডায়েট। পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এটাই হোক। কী কী খাবেন? জানালেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অরিজিৎ দে।
একদিকে পুজো পুজো আমেজ, অন্যদিকে হাই ফিভার। একদম মিঠে-তেতো একটা ব্যাপার। এই হাওয়াই চলছে চলতি মরশুমে। কেউ কেউ শুরু করে দিয়েছেন ঠাকুর দেখা। কেউ কেউ ১০০-১০২ জ্বরে (High Fever) কাবু হয় ঘরবন্দি। জ্বর কমলেও, দুর্বলতা কাটিয়ে বাড়ির বাইরে বেরনোর রিস্ক নিচ্ছেন না অনেকেই। গত কয়েকদিনে ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও নানা ভাইরাল রোগের জেরে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাটা বেশ বেড়েছে। ফলে পুজোয় আনন্দ করতে চাইলে, সময় থাকতে সতর্ক হন। বিশেষত নজর দিন খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। আর জ্বর থেকে সেরে উঠেও শরীরকে অবহেলা করবেন না।
দীর্ঘ অসুখের পর খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অরুচি চলে আসে। আর এই সমস্যা ছোট থেকে বড় সকলের। অন্যদিকে না খেয়ে থেকে এনার্জিও চলে যায় তলানিতে। সামনেই দুর্গাপুজো। তিন-চারদিনে শরীরকে তাড়াতাড়ি চাঙ্গা করতে হবে যে। তাহলে পুজোর কটা দিন ভালো করে কাটানো সম্ভব হবে। তাই চাই সঠিক ডায়েট (Diet), যার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠা যায় দ্রুত।
সব মিথ উড়িয়ে দিয়ে রোজ ভাত খান নিয়ম করে। কারণ, ভাতে থাকা হাই ক্যালোরি শরীরকে শক্তি জোগায়। ভাত সহজপাচ্য। ভাতের মধ্যে জলের ভাগ বেশি। ফলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে। সেই সঙ্গে পেটও ভর্তি থাকে অনেকক্ষণ।
সবজি সেদ্ধ করে বা স্টু বানিয়ে খান। বাজারে এখন অনেক সবজি এসেছে। আর সবজির মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর। এছাড়াও এর মধ্যে থাকে খনিজ উপাদান, ভিটামিন। তাই রোজ এক বাটি করে সবজি (Vegetables) খান।
জ্বর হলে প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। আর তাই তালিকায় মুরগির মাংস অবশ্যই রাখবেন। এর মধ্যে ফ্যাট প্রায় নেই। ফলে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে না।
রসুনে (Gerlic) রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল গুণ। তাই রান্নায় রসুন দিতে পারেন বা গরম জলে রসুনের কোয়া ফুটিয়ে শ্বাস নিতে পারেন। রসুনের মতো মধুতেও রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। এক গ্লাস জলে এক চামচ মধু ও লেবুর রস দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
বাদামে (Nut) রয়েছে জিঙ্ক। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ইনফেকশনের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
আদা (Ginger) শরীর থেকে জীবাণু দূর করে শরীর টক্সিনমুক্ত করতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় ব্যবহার করুন আদা। আদা দিয়ে চা খেলেও উপকার পাবেন।
কলার মধ্যে যেমন পটাশিয়াম রয়েছে, তেমনই তা ন্যাচারাল গ্লুকোজ, যা এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। কলা ফল হিসাবে যেমন খেতে পারেন, তেমনই খেতে পারেন স্মুদি বানিয়ে। এছাড়াও মরশুমি ফল ও সবজি যেমন লেবু, টম্যাটো, কিউই, পেঁপে, পালংশাক সমেত একাধিক খাবারে রয়েছে ভিটামিন সি। এতেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
আমন্ডের (Almond) মধ্যে থাকা ভিটামিন ই ও ম্যাগনেশিয়াম এনার্জি জুগিয়ে দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। রোজ রাতে ভিজিয়ে রাখুন ৩-৪টি আমন্ড। পরদিন সকালে খান।
সুস্থ হতে সবচেয়ে জরুরি হাইড্রেশন। তাই জল খাওয়া যেমন বাড়াতে হবে, তেমনই জুস, সুপ জাতীয় তরল খাবারও খেতে হবে। জ্বরের সময় শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হয়। এমনকী অনেকের হয়ে থাকে ইলেকট্রোলাইটসের কমতি। এই পরিস্থিতিতে একবারে ধন্বন্তরি হল ডাবের জল।
দই বা ইয়োগার্টের মধ্যে রয়েছে প্রোবায়োটিক। জ্বর কমাতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হলে অবশ্যই খাওয়া উচিত দই। লস্যি বানিয়ে তার সঙ্গে বাদামগুঁড়ো বা ড্রাই ফ্রুটস মিশিয়ে খান।
ভিটামিন সি (Vitamin C), আয়রন ও ক্যালশিয়ামে পরিপূর্ণ আমলকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত উপকারী। জ্বরের পর দুর্বলতা কাটাতে তাই অবশ্যই খান আমলকী ।
জ্বর সেরে গেলেও ভিটামিন ডি (Vitamin D) সমৃদ্ধ খাবার খান। মাছ, ডিম, মাশরুমের মতো খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকুন। এতে শরীর থাকবে অনেকটাই ফিট।
উপরে আলোচিত খাদ্যগুলো যদি জ্বরের সময় সঠিকভাবে খাওয়া যায় তবে অতি দ্রুত দুর্বলতা ও অরুচি কাটিয়ে উঠে উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠা সম্ভব হবে।