ফিট থাকতে জিম না যোগা? মনে এই নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের উদাহরণ টেনে ফিট থাকার স্বাস্থ্যকর উপায় জানালেন রাজ্য যোগা ও ন্যাচারোপ্যাথি কাউন্সিলের সভাপতি ডা. তুষার শীল। লিখছেন গৌতম ব্রহ্ম৷
জিম নয়, যোগাই তার সাফল্যের রেসিপি। সম্প্রতি জানিয়েছেন, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট তারকা ক্রিস গেইল। অনেকেই এখন জিম থেকে যোগায় বেশি আস্থা রাখছেন। কেউ আবার যাচ্ছেন ‘যোগা ভ্যাকেশন সেন্টার’-এ। কায়িক পরিশ্রম কম করে শরীর সুস্থ রাখার মোক্ষম উপায় যোগা। আসলে পেশার চাপ সামলে, হাড়ভাঙা খাটুনির পর অনেকের পক্ষেই জিমে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া জিমের খরচও অনেক বেশি। সবচেয়ে ভাল হয়, কেউ যদি দু’টোই মিশিয়ে করেন। দু’টোর মধ্যে পার্থক্য একটাই, কায়িক পরিশ্রম জিমে বেশি। অনেকে বলেন, জিম করলে বহিরঙ্গের উন্নতি হয়। যোগা করলে ভিতরটা শক্ত হয়। এটা কিন্তু সত্যি। যোগা ও জিম একে অপরের পরিপূরক। আগে খেলোয়াড়রাও জিম করার পর যোগা করতেন। তাই অনেক জিমখানাতেই এমন করানো হয়।
তবে জিম নিয়ে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে ভাবেন, ঘাম না ঝরালে ব্যায়াম সম্পূর্ণ হয় না। ঠান্ডার জায়গায় জিম করলেও ঘাম হয় না। আসল কথা হল, শরীর ও মনের মধ্যে ভারসাম্য। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ। যোগায় সেটা ভাল হয়। তাছাড়া পেশাগত ব্যস্ততায় অনেকের পক্ষেই জিমে গিয়ে কসরত করা সম্ভব হয় না। এঁদের পক্ষে যোগার অনুশীলনই বিজ্ঞানসম্মত। এতে ‘ন্যাচারাল কিলার সেল’ বাড়বে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বয়স্ক মানুষদের জিমের থেকে যোগা করা ভাল।
[আরও পড়ুন: ক্রমশই বেঢপ হচ্ছে শরীরের নিম্নাংশ! ঘরোয়া উপায়েই ঝরিয়ে ফেলুন বাড়তি মেদ]
তবে বেশি বয়সে যোগা করার আগে অবশ্যই যোগা ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে সমস্যা হতে পারে। গ্যাসট্রিক আলসার, ডিওডেনাম আলসারে কপালভাতি করা যাবে না। হাইপারটেনশনের রোগীদের মাথা নিচু রেখে এক্সারসাইজ নয়, কোমরে-ঘাড়ে ব্যথা থাকলে সামনের দিকে ঝুঁকে কিছু করবেন না। হাঁটুর ব্যথায় পা ভাঁজ করে কোনও ব্যয়াম নয়। এগুলো মাথায় রাখতে হবে।
বেলুড়ে যোগ-ন্যাচারোপ্যাথি কলেজ হচ্ছে। পূর্ত ভবনের দোতলায় যোগা-ন্যাচারোপ্যাথি কাউন্সিল রয়েছে। কাউন্সিল ১ বছরের কোর্স করাচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিচ্ছে। এই রেজিস্টার্ড ডাক্তার ও ট্রেনারদের কাছেই যোগা শিখুন। জিম করলেও প্রশিক্ষিত মানুষের কাছে শেখা উচিত। তবে জিমে গিয়ে ভুলেও কোনও পেশি বানানোর ওষুধ খাবেন না। ওতে স্টেরয়েড মেশানো থাকে। আসলে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ওজন কমাতে গিয়ে স্টেরয়েডের ফাঁদে পরেন। মাথার রাখা উচিত, রাতারাতি ওজন কমানো কিংবা ওজন বাড়ান, পেশিবহুল শরীর তৈরি করা যায় না। গেলেও তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
[আরও পড়ুন: হাড়েও বাসা বাঁধছে টিবি! জেনে নিন ভয়ংকর রোগ সম্পর্কে]
যোগার উপকারিতা অনেক। যোগা নমনীয়তা এবং ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায়। হজম ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে যোগা। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদস্পন্দনের সঠিক মাত্রা দিতে সাহায্য করে। যোগা হল একমাত্র প্রাকৃতিক উপায় যা শারীরিক গঠন ঠিক করে। যা গোটা শরীর জুড়ে কাজ করে। যোগা বাড়িতে বা বাইরেও করা যেতে পারে। কোনও নির্দিষ্ট জায়গার প্রয়োজন হয় না। যেমনটা জিমের ক্ষেত্রে প্রয়োজন। এছাড়া, যোগব্যায়াম করার কোনও নির্দিষ্ট বয়স থাকে না। যে কোনও বয়সের মানুষই করতে পারে। যোগব্যায়াম সমগ্র শরীরকে ভিতরে-বাইরে দৃঢ় করে। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।
আজকাল অনেকেই ঘুরতে গিয়ে যোগা করছেন। যোগা ভ্যাকেশন সেন্টারে থাকছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, এমন একটা জায়গাতেই এই ধরনের সেন্টারগুলি তৈরি হয়। এখানে ইনস্ট্রাক্টরের অধীনেই আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে মেডিটেশনের সময় নিশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়৷ রিভার ব়্যাফটিং, মাউন্টেন বাইকিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসেরও ব্যবস্থা থাকে৷ সব মিলিয়ে শরীর ও মনের সম্পূর্ণ ডিটক্সিফিকেশন হয়ে যায়। তাছাড়া যোগা ভ্যাকেশন সেন্টারে থাকাকালীন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন থাকে। মোবাইল বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হয়। ফলে নিজের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারেন।
[আরও পড়ুন: হিট স্ট্রোক এড়াতে অল্প কথায় ভাষণ সারুন, প্রার্থীদের পরামর্শ চিকিৎসকের]
জিমের থেকে যোগাতেই বেশি ভরসা রাখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। সামনেই বিশ্বকাপ। বিদায়ী বিশ্বকাপে নিজের সেরা পারফরম্যান্সটা মেলে ধরতে মরিয়া ক্যারিবিয়ান দৈত্য। ৩৯ বছরেও বিশ্বকাপের মতো মেগা টুর্নামেন্টের ধকল নিতে হবে প্রায় দেড় মাস ধরে। আর সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে জিম নয়, যোগাকেই হাতিয়ার করেছেন গেইল। শরীরকে বিশ্রাম দিতে জিম এড়াচ্ছেন তিনি। তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ব্যয় করছেন যোগাসনে। একটানা ফিল্ডিং ও অনুশীলনের পর যে ক্লান্তি থাবা বসাচ্ছে শরীরে, তা কাটিয়ে উঠতে নিয়মিত ম্যাসাজ নিচ্ছেন জামাইকান তারকাটি।
পরামর্শ: ৯৮৩০০৭৭৭২০
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.