ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রাণবায়ু অক্সিজেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বেশিমাত্রায় অক্সিজেনই প্রাণঘাতী ভূমিকা নেয়। ফুসফুসকেই অকেজো করে দেয়। রোগী হাঁটাচলা, স্বাভাবিক কাজ করতেই বেদম ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর এই সমস্যাকে চিকিৎসকরা বলছেন ফাইব্রোসিস (Fibrosis)।
ফাইব্রোসিস। অর্থাৎ ফুসফুসের নরম কোমল তন্তু শক্ত হয়ে যাওয়া। ফুসফুসের বাইরে কঠিন আস্তরণ পড়ে যাওয়া। ফলে ফুসফুসের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ বাধা পায়। শুধুমাত্র এই সমস্যা নিয়ে গত একমাসে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন অনেক রোগী। বিশেষত যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ICU-তে ছিলেন অথবা অনেকটা সময় ধরে ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা’র মাধ্যমে অক্সিজেন নিতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এই সমস্যা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে। রক্ত থেকে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বেরতে পারে না। রোগী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েন।
করোনা (Coronavirus) থেকে মুক্তি পেলেও শেষপর্যন্ত এই সমস্যায় মৃত্যুও হতে পারে। আর এই ঘটনাকেই চিকিৎসকরা বলছেন, ফাইব্রোসিস। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৌমিত্র ঘোষ অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, জটিল করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া রোগীদের ২০-২৫ শতাংশ রোগী এই সমস্যা ভুগছেন। তাঁরা একটু হাঁটলে ক্লান্ত হচ্ছেন। সামান্য পরিশ্রম করতে পারছেন না। হাসপাতালে বুকের সিটি স্ক্যান করে দেখা যাচ্ছে, কোমল তন্তু ও এলভিওলাই যা রক্ত সংবহন করে, সেটা শক্ত হয়ে গিয়েছে। ফুসফুস স্বাভাবিক কাজ করতেই পারছে না। ফুসফুস আর বেলুনের মতো বাড়ছে-কমছে না।” সৌমিত্রবাবুর কথায়, যদি দেখা যায় যে ফুসফুসের ৫০-৭৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে, তবে ওষুধ দিয়ে রোগ নিরাময় করা যেতে পারে। তবে তার বেশি হলে ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে হতে পারে।” আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আলোকগোপাল ঘোষালের কথায়, “করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, যাঁরা দীর্ঘসময় ধরে বেশিমাত্রায় অক্সিজেন নেন তাঁদের সমস্যা হতে পারে।”
তবে কিছু ওষুধও এই রোগের জন্য দায়ী। স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি অক্সিজেনের ফ্লো বা চাপ কমাতে হবে? স্বাস্থ্যদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, প্রতি গ্রাম রক্তে ৯৫ শতাংশ হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন বহন করলে তবে শরীর সুস্থ ধরা হয়। কম হলে সমস্যা। তাই করোনা আক্রান্তকে কম মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেছেন বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কারণ, ফুসফুস প্রতিস্থাপন করার মতো পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি এ রাজ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.