মাথাঘোরা নিয়ে ছেলেখেলা নয়, এর আড়ালে অনেক কিছু থাকতে পারে। অবহেলা করলে জটিলতা বাড়ে। বিশদ আলোচনায় অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
কোথাও দাঁড়িয়ে কিছু কাজ করছেন, হঠাৎই মাথা ঘুরে গেল। খুব মন দিয়ে গল্পের বই পড়ছেন বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে স্থির দৃষ্টি হঠাৎই মনে হল মাথাটা কি পাক খাচ্ছে? কিংবা স্টেশনে ট্রেন ধরতে ছুটছেন অথবা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন হঠাৎ মাথায় চক্কর। এমন সমস্যা যদি কারও প্রায়শই হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু সতর্ক হতে হবে। ভার্টিগো (Vertigo) নানা রকম রোগের লক্ষণ হতে পারে। মাথা ঘোরার জন্য কান ও মস্তিষ্কের স্নায়ুর ভারসাম্যহীনতা বা অন্য বড় কোনও রোগের লক্ষণও হতে পারে। প্রয়োজন সময়মতো পর্যবেক্ষণ।
কেন হয়?
সাধারণত ভার্টিগো দুই প্রকারের হয়। সেন্ট্রাল ও পেরিফেরাল ভার্টিগো। মানব শরীরের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি খুব কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। যার প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী স্থান হল কানের ভেতরের অংশ বা ইনার ইয়ার। এখানে অবস্থিত বেশ কিছু অংশ শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কানের সমস্যাকে চিকিৎসার ভাষায় পেরিফেরাল কারণ বলে। আর মাথার ভিতরের কোনও অংশের সমস্যা থেকে মাথা ঘুরলে বা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হলে তাকে সেন্ট্রাল কারণ বলা হয়। সেন্ট্রাল কারণগুলির মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হল মাথার ভিতরে টিউমার বা স্ট্রোক।
কখন সাবধান হওয়া দরকার
মাথা ঘোরা মানে স্পন্ডিলাইটিস নয়। অধিকাংশই এটা ভেবে তেমন গা করেন না। দু-একবার ঘাড়ের ব্যায়াম করে নিস্তার পেতে চান। কিছু সময় মাথা ঘুরলে বা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে সেটি স্ট্রোক, হার্ট ব্লকেজের মতো বড় কিছু অসুখের পূর্বাভাসও হতে পারে। অবহেলা করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাছাড়া কানে কম শোনা, কান বন্ধ, দুটো কানের মধ্যে একটি কান অপেক্ষাকৃত ভারী বোধ হওয়া বা শ্রবণশক্তির পার্থক্য, উৎসহীন অপরিচিত আওয়াজ কানে অনুভূত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ থাকলে খুব সজাগ হওয়া উচিত।
মানতে হবে, উপরোক্ত লক্ষণ ঘনঘন প্রকট হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হার্ট ব্লকেজ বা হার্টে রক্তচলাচল বিঘ্নিত হলে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এদের সঠিক পর্যবেক্ষণ জরুরি। পেরিফেরাল জনিত সমস্যা না থাকলে পরবর্তীতে সেন্ট্রাল কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। সম্পূর্ণ চিকিৎসাপদ্ধতি ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া রোগীর পূর্ববর্তী কোনও রোগের ইতিহাসের বিবরণের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং সেটি বিস্তারিত জেনে তবেই চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
চিকিৎসা
সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ভার্টিগোর সূত্রপাত হয়। রোগের তারতম্য অনুযায়ী চিকিৎসা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো মাথা ও চোখের ভেস্টিবুলার এক্সারসাইজ করানো হয়। এছাড়া হঠাৎ সমস্যার বাড়াবাড়ি হলে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যেসব রোগীর কানের সমস্যা থেকে ভার্টিগো সেরে যাবার পরও পুনরায় ফিরে আসে তাদের ক্ষেত্রে ভেস্টিবুলার ট্রেনিং এক্সারসাইজই প্রধান ওষুধ। ভার্টিগোর সমস্যায় কোল্ড ড্রিঙ্কস জাতীয় নরম পানীয় খাওয়া অনুচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.