গৌতম ব্রহ্ম: কোভিড পরীক্ষার জন্য মানুষ যদি হাসপাতালে যেতে না চান, ল্যাবের বাড়ি আসতে বাধা কোথায়? অতিমারি আবহে করোনা পরীক্ষার হার বাড়াতে এই ব্যবস্থাও বলবৎ হতে চলেছে। যার মূ্লে কোভিড টেস্ট করাতে কিছু লোকের অনিচ্ছাকৃত অনীহা। জরুরি বুঝেও যাঁরা সাত-পাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসছেন। জ্বর জ্বর ভাব, সঙ্গে গলা ব্যথা থাকলে খাওয়া-ঘুম শিকেয় তুলে সারাক্ষণ একই চিন্তায় কাঁটা হয়ে থাকছেন। করোনা ঢুকে পড়েনি তো শরীরে? শুকনো কাশি হলে তো কথাই নেই। পাশের বাড়ির জানলা দিয়েও সন্দিগ্ধ উঁকিঝুঁকি দেখে আরও সিঁটিয়ে যাচ্ছেন।
এই মুহূর্তে এই সমস্যা ঘরে ঘরে, পাড়ায়-পাড়ায়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও অনেকে সাহস করে হাসপাতালে যেতে পারছেন না। টেস্ট করানোর জন্য যে দু’-তিন দিন থাকতে হবে হাসপাতালে! রিপোর্ট যাই আসুক না কেন। আর ওই ক’দিন পরিবারকে পাড়ায় একঘরে হয়ে থাকতে হবে। পল্লবিত হতে পারে হরেক গুজব। যা সামলানোর ক্ষমতা অনেকেরই নেই। অগত্যা উপসর্গ থাকলেও কোভিড টেস্ট করানোর রাস্তায় হাঁটছেন না বহু লোক। বাড়ির লোকজনকে তো বটেই, তামাম মহল্লাকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন মহা সঙ্কটের দোরগোড়ায়। এবার তাঁদের জন্য মুশকিল আসান। সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ করলে বাড়িতে বসেই কোভিড টেস্ট করানো যাবে। দরকার শুধু আধার কার্ড এবং ডাক্তারের একটি প্রেসক্রিপশন। যাতে লেখা থাকবে, রোগীর কোভিড টেস্ট করানো দরকার। এই ন্যূনতম শর্তেই শহরের দু’টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তরফে সন্দেহভাজনদের লালারসের নমুনার ‘হোম কালেকশন।’ পিপিই পরে কালেক্টররা টুক করে বাড়ি গিয়ে সোয়াব স্যাম্পল কালেক্ট করে আনবেন। রিপোর্ট মিলবে আটচল্লিশ ঘণ্টায়। নেগেটিভ হলে তো ঠিক আছে। পজিটিভ হলে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকেই রিপোর্ট চলে যাবে স্বাস্থ্যদপ্তরে। তারপর প্রোটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা। উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে যেতে হবে। নচেৎ বাড়িতেই আইসোলশেন থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টেস্ট করিয়ে যেতে হবে।
এই ‘মুশকিল আসান’ পরিষেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কলকাতার দু’টি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার। ল্যান্সডাউনের ‘পালস ডায়াগনস্টিক’ ও সল্টলেকের ‘সুরক্ষা ডায়গনস্টিক।’ আজ সোমবার পালস-এর কালেক্টররা বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করবেন। সংস্থার ম্যানেজার অপারেশনস রাজেশ মুন্দ্রা রবিবার জানিয়েছেন, প্রাথমকিভাবে দৈনিক ৫০-১০০টি নমুনা সংগ্রহের পরিকাঠামো ও লোকবল তাঁদের রয়েছে। পিপিই পরিহিত কালেক্টররা বাইকে চেপে বাড়ি বাড়ি যাবেন। সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অনলাইনে পেমেন্ট নেওয়া হবে। তবে ক্যাশ দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকছে। রাজেশবাবুর কথায়, “সোমবার আমাদের আরটিপিসিআর মেশিন চলে আসছে। আইসিএমআরের অনুমোদন পেলে আমাদের ল্যাবরেটরিতেই পরীক্ষা হবে। আপাতত স্যাম্পলগুলো আউটসোর্স করব। কেউ চাইলে পালস-এর কালেকশন সেন্টারে গিয়েও স্যাম্পল দিয়ে আসতে পারেন।”
অন্যদিকে ছোট করে হলেও সাতদিন আগে ‘হোম কালেকশন’ শুরু করেছে সুরক্ষা ডায়গনস্টিক। সংস্থার ম্যানেজার অপারেশনস সঙ্গীতা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্যদপ্তরের সুপারিশে হোম কালেকশন হচ্ছে। সব মিলিয়ে দশটার মতো নমুনা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরিকাঠামো বাড়লে আমরাও আমজনতার জন্য এই পরিষেবা সম্প্রসারিত করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.