ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: শিশুর প্রস্রাব হচ্ছে না ঠিকমতো। এমতাবস্থায় পুরুষাঙ্গের চামড়া ছাড়িয়ে দেওয়াই দস্তুর। চিকিৎসা পরিভাষায় যা সারকামসিসন (Circumcision)। মফস্বল, গ্রামাঞ্চলে অনেকেই একে ‘সামান্য অস্ত্রোপচার’ ভেবে আর হাসপাতালে আসেন না। অপটু হাতে এই কাজ বাড়াচ্ছে বিপদ। কারণ? এসএসকেএম হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে একজনের রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না। এরা হিমোফেলিয়ায় আক্রান্ত। হাতুড়ে ডাক্তার তা টের পান না। এমন শিশুদের সারকামসিসন করা হলে ক্ষতস্থানে রক্ত বন্ধ হয় না। শেষমেশ পুরুষাঙ্গে সংক্রমণ হয়ে থিকথিক করে মাছি। সে অবস্থায় অগুনতি শিশু আসে এসএসকেএমের শিশু শল্য বিভাগে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের এমনই দুই শিশুকে সুস্থ করে তুলেছে এসএসকেএম হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগ।
শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসক ডা. ঋষভ দেব পাত্র, ডা. অনীক রায়চৌধুরি, ডা. অরিন্দম ঘোষ , ডা. দেবজ্যোতি শাসমল, ডা. দেবযানী দাসের ২১ দিনের নিরলস পরিশ্রমে বাঁচানো গিয়েছে দুই একরত্তিকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুই শিশুরই হিমোফিলিয়া ছিল। হাতুড়ে ডাক্তার তা জানতেনও না। রক্ত বন্ধ না হয়ে হিমোগ্লোবিন নেমে গিয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশে।
সারকামসিসন যেমন পুরুষাঙ্গেই, হিমোফিলিয়াও শুধুমাত্র ছেলেদেরই। মেয়েরা সাধারণত এর বাহক। এদিকে পুরুষাঙ্গের চামড়া ছাড়াতে গেলে রক্তক্ষরণ হবেই, ভয় সেখানেই। চিকিৎসকরা বলছেন, হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত শিশুর পুরুষাঙ্গের চামড়া ছাড়ানো হলে রক্ত বন্ধ হতে চায় না। শিশু শল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পালের কথায়, সন্তান জন্মের আগেই জেনে নেওয়া যায় হিমোফিলিয়া আছে কি না। কী উপায়? চিকিৎসকদের কথায়, সন্তান মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় গর্ভস্থ জল বা অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড পরীক্ষা করে তা জানা যেতে পারে। অথবা সন্তান জন্মের পরে যদি দেখা যায় ব্লিডিং টাইম অথবা প্রথম্বিন টাইম স্বাভাবিক থাকলেও অ্যাক্টিভেটেড পার্শিয়াল থ্রম্বোপ্লাস্টিন টাইম বেশি রয়েছে তবে বুঝতে হবে সে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত। হাতুড়ে ডাক্তার তা নির্ণয় করেন না।
একাধিক কারণে বাদ দেওয়া হয় শিশুর পুরুষাঙ্গের মাথার চামড়া। ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়াও একটা মূল কারণ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, প্রসথাইটিস, ব্যালেনাইটিস জাতীয় নিম্নাঙ্গের সংক্রমণ এড়ানো যায় পুরুষাঙ্গের চামড়া ছাড়িয়ে রাখলে। প্রস্রাবের সমস্যায় শিশুদের ফাইমোসিস অসুখ গা সওয়া। এই অসুখে পুরুষাঙ্গের প্রিপিউস আর গ্লানস পেনিসের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়। ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, “শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় প্রস্রাব বেরনোর ছিদ্রটা বড়, কিন্তু দেহের বাইরে নিঃসরণ হওয়ার ছিদ্রটা ছোট্ট পিনের মতো। এর ফলে প্রস্রাব বেরোলেও তা পুরুষাঙ্গের বাইরের ত্বকের তলায় জমতে থাকে। এমন সময় সারকামসিসনই একমাত্র উপায়। কী এই পদ্ধতি? পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে। তা কেটে বাদ দিয়ে দেওয়াকেই বলা হয় সারকামসিসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.