ক্রমশই বেঢপ হচ্ছে শরীরের নিম্নাংশ! হাত-মুখ রোগা হলেও পা -পিছন খুব ভারী? এমনধারা মোটা যাঁরা তাঁদের জন্য রইল ঘরোয়া সমাধান। কিছু এক্সারসাইজ নিজে নিজেই করলে ফল মিলবে। লিখছেন সোমা মজুমদার৷
ওজনের মাপকাঠিতে সব ঠিক, তবু সব ধরনের পোশাক পরা যায় না। কেমন যেন বেমানান লাগে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নাংশের মেদ যাঁদের বেশি তাঁরা এমন অসুবিধা নিয়ে দিনযাপন করেন। মাছে-ভাতে বাঙালিরা অনেকেই এমন ধরনের মোটা। আজকাল জিমে গিয়ে কার্ডিও কিংবা যোগা করে এই নিম্নাংশের মেদ ঝরাতে অনেকেই উদগ্রীব। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি একভাবে একস্থানে দীর্ঘসময় বসে কাজ করার অভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম কম করার ফলে নিম্নাংশের মেদ বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলা উভয়েরই দেহের মধ্য ও নিম্নাংশ অর্থাৎ তলপেট, ঊরু ও হিপে মেদ জমতে দেখা যায়। অফিস, বাড়ি সব সামলে এমন মেদ ঝরাতে নাজেহাল অনেকেই। তার উপর জিমে যাওয়ার সময় অধিকাংশেরই নেই। এক সহজে হাল ছাড়লে হবে না। এমন বিশেষ কিছু এক্সারসাইজ রয়েছে যা বাড়িতেই অল্প সময় বের করে করতে পারলে খুব সহজেই নিম্নাংশের মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব।
লাঞ্চ
মেদবহুল ঊরুকে কব্জা করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে লাঞ্চ। প্রথমে, আপনার পেটের পেশি শক্ত করে দুই পা অল্প ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার ডান পা সামনে বাড়ান। এই সময় যত কষ্টই হোক উপরের শরীর বাঁকাবেন না বা কোমর ভাঙবেন না। এরপর হাঁটু ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে নিয়ে আসুন। এরপর বাঁ পা এগিয়ে পুনরায় আগের মতো দু’টি হাঁটু ভেঙে অর্ধেক বসুন। দুই পায়ে একবার করে করলে ১ সেট পূর্ণ হয়। এইভাবে ১০ সেট প্রতিদিন করতে থাকুন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের সেট বাড়ান।
স্কোয়াট
এই এক্সারসাইজটি থাইয়ের মোটাভাব কমায়, সঙ্গে হিপ আর কোমরের পাশে জমে থাকা মেদও দূর করে। এই ধরনের মেদ ঝরাতে কেউ যদি শুধু এই এক্সারসাইজই করেন তাতেও ভাল ফল মিলবে। প্রথমে, দুই পায়ের মাঝে ১০-১২ ইঞ্চি তফাত রেখে দাঁড়ান। দুই হাত সামনে বাড়িয়ে দিন, এতে করে ব্যালান্স থাকবে আর কোনওভাবেই এক্সারসাইজের সময় কোমর ভেঙে বাঁকা হয়ে দাঁড়ানো চলবে না! এই অবস্থাতেই আস্তে আস্তে হাঁটু ভেঙে বসুন। আপনার উরু মেঝের সঙ্গে সমান সমান হয়ে গেলে থেমে যান। হাঁটু, পায়ের আঙুল যেন একইস্থানে একইভাবে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ৫ সেকেন্ড এভাবে থেকে আবার আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়ান। রোজ অন্তত ২০ বার করুন আর আস্তে আস্তে সংখ্যা বাড়ান। স্কোয়াট শরীরের গঠন ধরে রাখতে অনেক সাহায্য করে।
জাম্পিং স্কোয়াট
এই এক্সারসাইজটা স্কোয়াটেরই আরেকটি ধরন। যারা ইতিমধ্যেই শারীরিকভাবে ফিট রয়েছেন তাঁরা এটি ট্রাই করলে দ্রুত বাড়তি মেদ ঝরবে ও ওজনও কমবে। এর জন্য প্রথমে স্কোয়াটের মতো করে বসুন। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াবার বদলে দুই পা একত্রিত করে লাফ দিন। এতে আপনার পায়ের মাসলে জমে থাকা মেদও ঝরে যাবে। পায়ের গঠন নিটোল হবে আরও। অন্তত ৮ বার করে প্রতিদিন করতে শুরু করুন।
সিঙ্গল লেগ সার্কল
প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে অনায়াসে পায়ের ব্যায়ামটা সেরে নিতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে সোজা হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। দুই হাত সোজা করে পাশে রেখে তালু মেঝেতে লাগানো থাকবে। এবার আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে নিতে একটি পা মেঝে থেকে উপরে তুলে ফেলুন। এবার পা দিয়ে বাতাসে একটি গোল করার চেষ্টা করুন। দেখবেন, কোমর বা হিপ যেন একই স্থানে থাকে। নড়লে চলবে না। ৫ বার ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং আরও ৫ বার ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে পা ঘোরান। শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে আস্তে করে পা নামিয়ে সোজা হয়ে যান। আবার অন্য পা দিয়ে একই ভাবে পা সার্কল করুন। এভাবে ১টি সেট শেষ করুন। ভাল ফল পেতে রোজ আপনাকে অন্তত ৫ সেট লেগ সার্কল করতে হবে।
ব্রিজ
একটি মাদুরে কিংবা বিছানায় শুয়ে হাত দুটি শরীরের কাছে রাখুন। হাতের তালু মেঝের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। এরপর একটি পা সোজা করে তুলুন এবং আর একটি পা ভাঁজ করে পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন। পায়ের পাতার উপর ভর করে ধীরে ধীরে হিপে অংশ ওঠাতে থাকুন। এরপর পায়ের পাতার উপর পুরো শরীরের ব্যালান্স রেখে পিঠের উপরের অংশ উপরে তুলুন। কয়েক মিনিটের জন্য এই অবস্থান ধরে রাখুন। নিশ্বাস ত্যাগ করতে করতে হিপ নামিয়ে নিন। এই এক্সারসাইজটি ১০ টি করে ৩ সেট করুন।
সিট আপ
কোনও একটি সমতল জায়গায় বা মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো ভাঁজ করে দিন। হাত থাকবে হাঁটু বরাবর সোজা, সামনের দিকে। এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সোজা সামনের দিকে উঠে বসুন। পা ভাঁজ অবস্থায় থাকবে। এবার আবার আগের অবস্থায় শুয়ে যান। বসা অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকবেন না। উঠে আবার শুয়ে পড়বেন, আবার উঠবেন। এভাবে মোট ১২ বার করতে হবে। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন। এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আরও ১২ বার করে একটি সেট করুন। প্রাথমিক অবস্থায় দুটি সেট করুন। পরে সেট বাড়িয়ে তিন সেটে আনতে পারেন।
ক্রাঞ্চেস
সোজা হয়ে মেঝেতে শুয়ে পা দুটো একটু ফাঁকা রেখে ভাঁজ করে দিন। হাত দুটো আপনার মাথার দুই পাশে অর্থাৎ কানের পেছনে রাখুন। এবার নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওপরের দিকে উঠুন। খেয়াল রাখবেন মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়ার মতো করে নিশ্বাস ছাড়তে হবে এবং ঘাড়ে কোনও চাপ দেবেন না। তারপর শ্বাস নিতে নিতে নিচের দিকে নামবেন, তবে পুরো মেঝেতে আপনার মাথা লেগে যাবে না; মেঝের সঙ্গে মাথার কিছুটা ফাঁকা স্থান থাকবে। এভাবে আবার ওপরে উঠুন এবং নিচের দিকে ক্রাঞ্চ করে নামুন। মাঝারি গতিতে এভাবে মোট ১২ বার করবেন। ১২ বার হয়ে গেলে এক মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নেবেন এবং এক মিনিট পরে ঠিক একই নিয়মে আবার শুরু করবেন। এর ফলে আপনার পেটের মাংসপেশির সংকোচন হবে।
প্ল্যাঙ্ক
উপুড় হয়ে শুয়ে সামনে দুই হাত ভাঁজ করে কনুইয়ের ওপর এবং পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে, একটু উঁচু হয়ে শরীরকে একটি সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে হবে। এই অবস্থায় প্রথম দিকে ঠিক ১০-১৫ সেকেন্ড থাকবেন। পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে ৪০-৪৫ সেকেন্ড পর্যন্ত করতে পারবেন। এভাবে করবেন দুই থেকে তিনবার। প্রতিবার করার পর একটু বিশ্রাম নেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.