শীতের আলসেমিতে মোড়া সকালে আলস্য কাটিয়ে শরীরচর্চা করা মোটেই সহজ নয়। তবে তারই মধ্যে ফিট থাকতে নর্মাল হাঁটাচলা, ওঠা-বসায় আর একটু শান দিন। ফল মিলবে। বললেন এশিয়ান যোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সম্পাদক ডা. উজ্জ্বল ঘোষ।
শীতকাল শরীরচর্চার জন্য আদর্শ। কিন্তু হলে কী হবে! অলস শরীর ঠান্ডায় আরও জবুথবু হয়ে যায়। সকালে লেপ ছেড়ে উঠে জগিং, ব্যায়াম ভাবলেই শরীর আরও কুণ্ডলি পাকিয়ে যায়। একটু পরে, আজ নয় কাল, গরমে নয় শীতে, তারপর শীত যে-ই এল তখন আর হাত-পা নাড়াতে ইচ্ছেই করে না। তাই শরীরচর্চার ব্যাপারটা সাধারণ মধ্যবিত্তের শিকেয় তোলা থাকে। এটা তো ঠিক নয়।
শরীর ভালো রাখতে তিনটে জিনিসের খুব প্রয়োজন, সুষম আহার, বিশ্রাম ও সঠিক ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা। তাই যতই অনীহা প্রকাশ পাক, সেটাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং ব্যায়াম করাটাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া দরকার। রোজ রুটিন করে করতে না পারলেও ছোটখাটো উপায়েও ব্যায়ামের সমান উপকার মেলে।
কীভাবে?
সহজ কিছু পদ্ধতি যা আপনাকে ফিট থাকতে সাহায্য করবে। যেমন ১০-১৫ মিনিট হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা এবং নামা, বালতি করে জল তোলা, বাজার বয়ে আনা, কাপড় কাচা, মাথায় জল ঢেলে স্নান করা, এছাড়া ঘর মোছা, বাসন মাজা, এমনকী, নিজের শরীরে তেল মালিশ করা।
অচেতন মনে ব্যায়াম
পদ্ধতি (১): ঘুম থেকে ওঠার সময় আরমোড়া ভাঙার অভ্যাস কম-বেশি সবারই আছে। এতেই উপকার মিলতে পারে একটু ঠিকভাবে করলে। এবার থেকে আড়মোড়া ভাঙা অবস্থায় অর্থাৎ হাত মাথার উপর যখন তুলবেন তখন দুই পা এবং হাতকে টানটান করুন, শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০-২০ সেকেন্ড থাকুন। স্বাভাবিক অবস্থায় এসে আবার করুন। এটিকে বলে ষষ্ঠি আসন।
উপকার: এই আসনটি শরীরকে তরতাজা রাখে। জয়েন্ট নমনীয় রাখে। লম্বা হতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি (২): ঘুম থেকে ওঠার সময় কোমরে ব্যথা বা স্টিফনেস লাগে। দুই পা ভাঁজ করে শরীরের কাছে আনুন, দু-হাত শরীরের দুপাশে রাখুন, এবার কোমরকে মাটি থেকে উপরে ওঠান এবং থাকুন ১০ সেকেন্ড। এইভাবে তিন মাত্রায় করুন। এটি হল সেতুবন্ধাসন।
উপকারিতা: রক্তচাপ কমায়, পিঠ ও কোমরে জোর বাড়াতে সাহায্য করে।
পদ্ধতি (৩): চেয়ারে বসে আছেন এবার মেরুদণ্ড সোজা রেখে দুই পাকে একবার সামনের দিকে আবার ভেতর দিকে নিয়ে আসুন এইভাবে ২০ বার করে ২ বার করুন, এটি একটি হাঁটুর ব্যায়াম (Dangling Exercise)।
উপকারিতা: হাঁটুর সমস্যায় স্টিফনেস কমায়, ব্যথা কমায় ও থাইয়ের মাংস পেশির জোর বাড়াতে সাহায্য করে।
কিছু সহজ আসন
তালাসন: দুই পা ৬ ইঞ্চি ফাঁক করে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান। শ্বাস নিতে নিতে দু-হাত একসঙ্গে মাথার উপর তুলুন। সেই সঙ্গে গোড়ালি ভূমি থেকে তুলুন। এই অবস্থায় ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড থাকুন, শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। লক্ষ রাখুন হাঁটু এবং কনুই যেন টান টান থাকে।
উপকারিতা: কাঁধ, ঘাড়, মেরুদণ্ড, হাঁটু, মাংস পেশির জোর বাড়াতে ও শরীরের জড়তা দূর করতে খুব উপকারী।
সিংহাসন: প্রথমে চেয়ারে বসুন। এবার চিবুক গলায় লাগানোর চেষ্টা করুন, জিভ বার করুন যতটা সম্ভব, এবার নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে গলায় ‘অ্যা’ ‘অ্যা’ শব্দ করে যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ছাড়ুন। ৬ বার করুন।
উপকারিতা: গলার স্বর ভালো রাখে, থাইরয়েড, টনসিল, ডবল চিন ইত্যাদিতে খুব ভালো
কাজ দেয়।
শ্বাস-প্রশ্বাসে উপকারিতা
তাড়াতাড়ি শ্বাস নেওয়া ও ছাড়া: এক জায়গায় বসুন বা দাঁড়ান। মেরুদণ্ড সোজা রেখে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন, এবার যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। সাইনাস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথাধরা থেকে উপকার পাবেন।
ডিপ ব্লো (Deep blow) : গভীরভাবে শ্বাস নিন নাক দিয়ে। এবার মুখ ফুলিয়ে ধীরে ধীরে দুই ঠোঁটের মাধ্যমে শ্বাস ছাড়ুন। শরীরের কর্মক্ষমতা, ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ঘাড়ের ব্যায়াম
মেরুদণ্ড সোজা করে চেয়ারে বসুন। এবার মাথা একবার ডান একবার বাঁ দিকে ঘোরান। ডান ও বাঁ নিয়ে একবার, এইভাবে ১০ বার করুন দুবার।
শিরদাঁড়া সোজা রেখে চেয়ারে সোজা হয়ে বসুন। ঘাড় একবার পিছনের দিকে কাত করুন ও একবার সামনের দিকে নিয়ে আসুন। এইভাবে একবার ধরে ১০ বার করুন ২ মাত্রায়।
আজকের দিনে সারাক্ষণ ঘাড় নিচু করে মোবাইল, ল্যাপটপে বেশিক্ষণ সময় কাটে ছোট থেকে বড় সকলেরই। সেই কারণে ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা খুব বেড়েছে। রোজ এই দুটি ব্যায়াম কাজের মাঝে একটু করলেই অনেক ভালো থাকা সম্ভব।
ঘরোয়া খেলাধুলা
এখন শরীরের পাশাপাশি মানসিকভাবেও ভালো থাকা খুব দরকার। তাই কিছু ইনডোর গেমস রয়েছে যেমন, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি যেগুলি রোজ না হলেও সপ্তাহে ৩ দিন ১৫ মিনিট খেলেলেই অনেক উপকার মেলে। বিশেষত মানসিক চাপ কমায় ও কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে এই ধরনের খেলাধুলো কার্যকর। যাঁদের হাড়জনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই সব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.