পুজোর ক’টা দিন হুল্লোড়, রাত জেগে ঠাকুর দেখা আর দেদার খাওয়া-দাওয়া। উৎসবের মেজাজে অনিয়ম হবেই। কিন্তু শরীর বিগড়ে গেলে? একটু সাবধান থাকলে অসুস্থ হবেন না। পুজোয় হাজার অনিয়মের মধ্যেও সুস্থ থাকার উপায় (Durga Puja Lifestyle) জানিয়েছেন হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টেরোলজিস্ট ডা. সঞ্জয় বসু। তাঁর কথা লিপিবদ্ধ করেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
কোল্ড ড্রিঙ্কস
ক্যাফেনেটেড (কালো) কোল্ড ড্রিঙ্কস হজমের জন্য মোটেই ভালো নয়। পেট ভরে খেয়ে অনেকেই এই ধরনের পানীয় পান করে স্বস্তির ঢেকুর তোলেন। হয়তো ভাবেন, এতে শরীরের কষ্ট কমছে। আসলে এর সঙ্গে কষ্ট কমার কোনও যোগ নেই। উলটে কালো রঙের ঠান্ডা পানীয় বেশি করে বদহজম করায়। পুজোয় সবাই মিলে আনন্দ করতে বেরিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কসের একটা ছোট বোতল খেতেই পারেন। তবে দীর্ঘদিন বদহজমে ভুগলে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাবেন না। তার চেয়ে মিনারেল ওয়াটার কিনে খান। এই ক’দিন তিন-চার লিটার জল পান করতে হবে। ঠান্ডা পানীয় এনার্জি বাড়ায় না।
ফুটপাথের বিরিয়ানি-রোল
ফুটপাথের যে কোনও খাবারই বেশ বিপজ্জনক। পুজোর সময় ক্রেতার ভিড়ে ও তাড়াতাড়ি খাবার তৈরির জন্য বেশিরভাগ স্ট্রিট ফুডের মান খারাপ হয়ে যায়। একই তেলে বার বার খাবার ভেজে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। তাই ভাজাভুজি না খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানি খেলে ভালো দোকানের খান। অর্থাৎ যেখানে পরিচ্ছন্নভাবে ও ভেজাল না মিশিয়ে রান্না করা হচ্ছে। অবশ্য এই চারটে দিন ক্রেতার চাহিদা সামলাতে গিয়ে নামী দোকানের খাবারের মানও নিম্নমুখী হয়। কোনও কারণে ফুটপাথের বিরিয়ানি-চাউমিন-রোল বা খারাপ তেলে ভাজা খাবার খেয়ে শরীর খারাপ করলে জেলুসিল বা অন্য কোনও লিকুইড অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। একইসঙ্গে সুস্থ থাকতে ও বদহজম এড়াতে দীর্ঘক্ষণ বাদে একসঙ্গে অনেকটা না খেয়ে ঘন ঘন অল্প খান। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে লাঞ্চ নয়। বিরিয়ানির মতো ভারী খাবার খেলে সন্ধে সাতটার মধ্যে খেয়ে নিন।
ফুচকা
পুজোয় অলটাইম ফেভারিট। খাওয়া তেমন খারাপও নয়। টক জলে অম্বলের ধাত থাকলে শুকনো খান। বেশি পেট ভরে খাবেন না। যাঁরা এমনি সময় দশটা ফুচকা দিব্যি খেয়ে নেন, তাঁরা সাতটার বেশি নয়। বাইরের জল খেয়ে শরীর খারাপ করলেও ফুচকার টক জল থেকে সাধারণত পেট খারাপ হয় না। ইনফেকশনও হয় না। তবে নিজেদের হাত বা ফুচকাওয়ালার হাত পরিচ্ছন্ন কি না তা নজরে রাখুন। অপরিচ্ছন্নতা থেকেই যত সমস্যা। একই কারণে স্যালাড, রোল বিক্রেতার হাত অপরিষ্কার থাকলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
মদ
খাবারের সঙ্গে পরিমিত খাওয়া যায়। এক পেগে হজমের গন্ডগোল হয় না। এর বেশি খেলে হজমে গোলমাল হতে পারে। খালি পেটে মদ্যপান নয়। ওয়াইন খেলে অসুবিধা নেই।
ওবেসিটি
যতই পুজোর মরশুম হোক, ওবেসিটি আক্রান্তদের অতিরিক্ত তেল ও ফ্যাটজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। লোভ সংবরণ করে পরিমিত খান।
অনিয়মের দিনলিপিতে ভরসা:
অম্বল হলে: লিকুইড অ্যান্টাসিড বা এনজাইমযুক্ত ওষুধ খেলে দ্রুত কাজ করবে।
বদহজম: এক্ষেত্রে প্যান্টোপ্রাজল, ওমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ। এগুলি সঙ্গে সঙ্গে কাজ করে না। তাই বদহজম এড়াতে খুব ভারী খাওয়াদাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে খেয়ে নিতে হবে। অ্যাসিডিটি কমায়। যাঁদের সাধারণত বদহজম হয়, তাঁরা পাঁচ-ছদিন আগে থেকেই খালি পেটে প্যান্টোপ্রাজল বা ওমিপ্রাজল খেতে পারেন।
পেট খারাপ: অ্যান্টিবায়োটিক অফলক্সাসিন টিনিডাজল খেতে পারেন। হাতের হাইজিনের কারণে পেট খারাপে কাজে লাগে। ঘনঘন পাতলা পায়খানা হলে তখনই ৪ মিলিগ্রাম ডোজের লোপেরামাইড খেতে হবে। দিনে দু’-তিনটের বেশি নয়। এছাড়া কাজে দেবে লিকুইড অ্যান্টাসিড ও এনজাইম, ওমিপ্রাজল বা প্যান্টোপ্রাজল।
বমি হলে: ডমপেরিডন দিনে তিনবার।
শরীর গরমে: অনিয়মের জেরে শরীর গরম হয়ে ডিহাইড্রেশন হতেই পারে। প্রচুর জল পান করুন। প্রয়োজনে ওআরএস বা নুন-চিনি মেশানো জল খেতে হবে।
পেট ব্যথায়: ড্রটেভারিন ট্যাবলেট দিনে দুবার। এই ওষুধগুলি এমার্জেন্সিতে কাজে লাগলেও পরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.