ডায়েট করতে করতে হাঁফিয়ে উঠলে একদিন যা খুশি চাই খেয়ে ফেলাই যায়। পুজোর সময় অনেকে এই মন্ত্রেই পেট পুজো করেন। তবে ‘চিট ডায়েট’-এর ভালো দিকে যেমন আছে, তেমনই না বুঝে করলে বিপদও আছে। বুঝিয়ে বললেন ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
রণবীর কাপুর, দীপিকা পাড়ুকোন, আলিয়া ভাট, করিনা কাপুর থেকে টাইগার শ্রফ, শিল্পা শেট্টি— এঁরা প্রত্যেকেই ফিগার কনসাস, কঠোর ডায়েট আর শারীরিক কসরত করেই নিজেদের চেহারা ধরে রেখেছেন। তবুও বারবার শোনা গিয়েছে চিট ডে-তে এঁদের ডায়েটে রয়েছে পিজ্জা, ফ্রাই, পাস্তা থেকে আইক্রিম, চকোলেট। তা হলে কি যে সকল আমজনতা আজকাল নিত্য কঠোর ডায়েটে অভ্যস্ত, পুজোর(Durga Puja 2024) মরশুমে তাঁরা ডায়েটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পেটপুরে বিরিয়ানি, মটন, পোলাও, কোর্মা খাবেন?
‘চিট ডে’ মনের শান্তি, শরীর কী চায়?
দীর্ঘদিন ধরে একটা কঠোর নিয়ম মেনে ডায়েটে থাকলে, অন্য খাবারগুলোর প্রতি বেশি আকর্ষণ তৈরি হয়। ফলে অনেকদিন পর খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলার প্রবণতা থাকে। এতে দেহে ক্যালোরি ইমব্যালান্স হয়। তাই ডায়েট চলুক ও মাসে ১-২ দিন চিট ডে থাকুক।
অনেকদিন পর যখন ডায়েটের বাইরে গিয়ে অন্য খাবার খাওয়া হয় তখন হজমের সমস্যা হতে পারে।
তবে টানা ডায়েট থেকে সব বাদ দিয়ে রাখার চেয়ে সুষম খাবারের সঙ্গে সঙ্গে একটু-আধটু বাইরের খাবারও খাওয়া দরকার। এতে মানসিক পরিতৃপ্তিও ঘটে। ডায়েট চার্ট মন থেকে ভালোবেসে বেশিদিন ফলো করতেও কোনও অসুবিধা হয় না। এর এফেক্টও ভালো হয়। কারণ, পছন্দের খাবার শরীরে হ্যাপি হরমোন, যেমন সেরোটোনিন, ডোপামিন ক্ষরণে সাহায্য করে।
অনেকই আছেন যাঁরা মাসে একদিনের বদলে চিট ডে-তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন প্রতিদিন। এভাবে চললে ডায়েটের কোনও উপকারিতা মেলে না।
খান, তবে খুব বুঝে
ডায়েট মানে একটি কমপ্লিট ভালো থাকা, ডায়েটও করবেন, মাঝে মধ্যে মন যা চাইবে তাই খাবেন। শুধু মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি বিষয় —
খালি পেটে কখনওই ফাস্ট ফুড নয়- রাস্তার এগরোল বা চাউমিন বা বিয়েবাড়িতে বিরিয়ানি খাওয়া অথবা পুজোর চারদিন জমিয়ে ফুচকা। সব কিছুই চলতে পারে, তবে পরিমিত পরিমাণে।
মাটন খেতে বড্ড ইচ্ছে করছে কিন্তু আপনার ডায়েটে তো একদম বারণ, তাহলে কী করণীয়? অনুষ্ঠানে আসার আগে হালকা কিছু স্ন্যাকস খেয়ে আসুন, যেমন গ্রিন টি, স্প্রাউটস বা রোস্টেড মাখনা। মাটন খাওয়ার আগে কিছুটা পরিমাণ স্যালাড, বেকড স্যাঙ্কস, ফ্রুটস বা ফ্রুট জুস খেতে
পারেন। এতে আপনার মাটন খাওয়ার পরিমাণটা কমবে, কম ক্যালোরি ইনটেক হবে আবার মেটাবলিজমও বজায় থাকবে।
ওয়ার্ক আউট মাস্ট। পুজোর চারদিন ডায়েটের বাইরে গিয়ে খাওয়া চলতেই পারে কিন্তু প্রতিদিনের ওয়ার্ক আউটের মাত্রা একটু বাড়তেও পারেন ট্রেনারের পরামর্শে।
সারা রাত জেগে পার্টি করার পরে ভোরবেলা বাড়িতে ফিরলেও অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা সাউন্ড স্লিপ কিন্তু জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পাবে এবং বিনজ ইটিং এর প্রবণতা বাড়বে।
ফাস্ট ফুড খাওয়া, অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীরে জমতে থাকে টক্সিন। তা বার করার জন্য সারাদিনে অন্তত ৪ লিটার জল খাওয়া খুব দরকার। নিজেকে হাইড্রেট রাখুন।
ক্যালোরি ব্যালান্স করতে যেদিন আপনি চিট ডে করবেন তার পরের দিন এবং আগের দিন ডায়েটে ফল ও স্যালাড বেশি রাখুন।
পেটের খারাপ ব্যাকটিরিয়ার মুক্তি দিতে দরকার প্রবায়োটিক। যার উৎকৃষ্ট উৎস টক দই। লো ক্যালোরি প্রোটিনের সোর্স এটি। তাই চিট ডে-র দিনেও যে কোনও একটি মিলে থাকুক টক দই।
ডিটক্স ওয়াটার পান করলে চিট ডে-র ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে পড়ে না। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ডিটক্স ওয়াটার পান করুন। এছাড়াও রয়েছে মৌরি-আদা-জিরার জল। পুদিনা-শসা-চিয়াসিডের জল দারচিনি-আদা-জিরার জল। শসা-পাতিলেবু-পুদিনা ইত্যাদি ভেজানো জল।
তবে চিট ডে আপনি কতদিন করতে পারবেন, কীভাবে করতে পারবেন বা আদৌ করতে পারবেন কি না তা অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ মেনে করুন। নিজে নিজে কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.