পুজোয় চাই নতুন লুক! নতুন জামা-জুতোর সঙ্গে সঙ্গে তাই চুল নিয়েও শুরু হয়ে গিয়েছে কেতাদার স্টাইলিং। আর হেয়ার কালার বা হেয়ার ডাই করা সেই তালিকায় একেবারে শীর্ষে। একবার করে দেখতেই পারেন। কিন্তু বারবার হলে একটু ভাবতে হবে বইকি! বলছেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. প্রিয়াঙ্কা আগরওয়াল। তাঁর কথা শুনলেন কোয়েল মুখোপাধ্যায়।
‘জেট ব্ল্যাক’ থেকে ‘মেহগনি’ কিংবা ‘বার্গান্ডি’– পুজোর বাজার কাঁপাচ্ছে সব কিছুই। কারও পুরো চুলই রঙিন, কেউ আবার ‘হাইলাইটস’ করছেন বেছে বেছে। স্কুলপড়ুয়ারাও ‘ফলো’ করছে এই ‘ট্রেন্ড’। কিন্তু, বার বার হেয়ার ডাই ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ? কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না তো? চুলের স্বাস্থ্যের উপরই বা কেমন প্রভাব পড়ে?
জেনে নিয়ে তবেই এগোন।
সমস্যার আঁতুড়ঘর
বাজারচলতি অধিকাংশ হেয়ার ডাইয়ের মধ্যে থাকে PPD। অর্থাৎ প্যারা ফিনাইলিন ডায়ামিন। কিছু কিছুর মধ্যে আবার ক্ষতিকারক অ্যামোনিয়াও থাকে। এই দু’টি উপাদান চুলের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিশেষ করে, PPD-যুক্ত ডাই ব্যবহার করলে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে, কখন কার সমস্যা দেখা দেবে, তা আগে থেকে বলা মুশকিল। হতে পারে, অনেকের হয়তো প্রথম ব্যবহারেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিল, আবার কারও বেশ কিছু বার বার ব্যবহারের স্কিনের ‘রিঅ্যাকশন’ হল। তাই বলা হয়, হেয়ার ডাই লাগানোর আগে প্যাচ টেস্ট অবশ্যই করুন। মানে, ডাই চুলের নিচে, ঘাড়ে একটু লাগিয়ে দেখে নিন, কোনও অস্বস্তি বা জ্বালা হচ্ছে কি না? র্যাশ বেরোচ্ছে কি না? মনে রাখবেন, এক বার যদি এমন হয়, পরে যতবার ডাই লাগাবেন, একই পরিস্থিতি হবে। অন্তত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। এমনকী, সমস্যা বাড়তেও পারে। বয়স নির্বিশেষে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই সমস্যা হতে পারে।
ত্বকের বারোটা
হেয়ার ডাই ঘন ঘন ব্যবহার করলে, নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল ‘ইচিং’। কপালে বা ভ্রু-এর কাছের ত্বক চুলকাতে শুরু করে, লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, জ্বালাও করে। এমনকি র্যাশও বেরোয়। কেউ যদি এই সমস্ত সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও সতর্ক না হন, ডাই ব্যবহার করতেই থাকেন, তাহলে সমস্যা বড় আকার ধারণ করতে পারে। ত্বকের ওই অংশে ‘ভিটিলিগো’ বা শ্বেতি হতে পারে। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত ডাই ব্যবহারের জেরে কারও শুধু কপাল নয়, গোটা শরীরেই র্যাশ বেরিয়ে গেল।
শুধু কি তাই! হেয়ার কালার বা ডাই, সবেতেই প্রচুর রাসায়নিক উপাদান থাকে, তা চুলের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বেশি ডাই যাঁরা লাগান, তাঁদের হেয়ার ফলও প্রচুর হয়।
ক্যানসার আশঙ্কা?
না। ক্যানসারের আশঙ্কা নেই। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যে শারীরিক সমস্যা হতে পারে, তা হল পোস্ট-ইনফ্ল্যামাটরি হাইপার-পিগমেন্টেশন। এটি ‘সিভিয়ার রিঅ্যাকশন’, শরীরজুড়ে হতে পারে।
হেনাতেও ‘না’
অনেকে মনে করেন, হেয়ার কালার বা ডাই-এর বদলে হেনা করা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কারণ এটা তো প্রাকৃতিক! তাই বার বার করা যেতে পারে। কিন্তু, তা নয়। হেনা আরও বিপজ্জনক। এতে ডাইয়ের কনসেনট্রেশন (অ্যামোনিয়া বা PPD) ‘ক্যালিব্রেটেড’ হয় না। ফলে সমস্যা বাড়ে। তাই বাজার থেকে কেনা হেনা, বার বার চুলে লাগানো মোটেও নিরাপদ নয়।
সাবধানের মার নেই
যদি স্টাইল করতেই হয়, চুল ডাই করার বদলে হাইলাইটস করতে পারেন। কোনওভাবেই হেয়ার রুটে যেন রং না যায়। পুরো চুলে না করে, কিছুটা বা নিচের দিকটুকু রাঙিয়ে নিতে পারেন। তাহলে অতটা খারাপ প্রভাব পড়ে না। তবে মনে রাখবেন, ডাই যেন অ্যামোনিয়া এবং PPD ‘ফ্রি’ হয়। হেনা ব্যবহার করবেন না। ডাই ব্যবহারে যদি ‘ইচিং’ হয়, র্যাশ বেরোয় বা অন্য কোনও সমস্যা দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হোন। ডাই-এর প্রয়োগ বন্ধ করুন। চুলে ভাল করে অয়েল ম্যাসাজ করুন। কেমিক্যাল-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর কন্ডিশনার লাগান। ভাল হেয়ার স্পা লাগান। চুলের স্বাস্থোদ্ধারে এমন ফল-সবজি খান, যা অ্যান্টি অক্সিডেন্টসে ভরপুর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.