সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কারা কোন পরিস্থিতিতে জল মেপে পান করবেন? কোন কোন বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে জলপানেও নিয়ন্ত্রণ জরুরি সেই বিষয়ে আলোকপাত করলেন কলকাতা ফর্টিস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাল মেডিসিন ও রিউমাটোলোজিস্ট ডা. দিব্যেন্দু মুখার্জি। শুনলেন মৌমিতা চক্রবর্তী।
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত জল পান আবশ্যিক, এটা সবাই জানি। তা বলে সবাই কিন্তু যত ইচ্ছে জল পান করতে পারেন না। যদিও তেষ্টার সঙ্গে অনেক রোগ নিরাময়েও জলের বিকল্প কিছু নেই, অন্যদিকে কিছু অসুখে জলও হয়ে যায় শত্রু। তখন কিন্তু জলপানে রাশ টানা জরুরি।
কাদের এটা মাথায় রাখতে হবে?
কিছু অসুখ রয়েছে যেগুলির কারণে শরীর থেকে জল বেরোতে পারে না, যার ফলে জমা জল শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। এই রোগে আক্রান্তদের জলপান কম করা উচিত। সেই রোগগুলির মধ্যে অন্যতম রেনাল ফেলিওর অর্থাৎ ক্রনিক কিডনির অসুখ, হার্ট ও লিভার ফেলিওর, ডাইলুশন্যাল হাইপো ন্যাট্রিমিয়া (শরীরে বেশি জল জমে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া) প্রভৃতি।
হার্টের সমস্যা থাকলে হার্টের দ্বারা জল ঠিকমতো পাম্প করা সম্ভব হয় না। তখন লাগামছাড়া জল পান করলে হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা বাড়ে।
ক্রনিক লিভারের সমস্যায় অনেকেরই পেটে জল জমে পেট ফুলে যায়। অ্যাসাইটিস অর্থাৎ পেটের উপরিত্বক ও পেটের ভিতরের অঙ্গসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে জল জমে এক্ষেত্রে। সাধারণত লিভারে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এমন হয়। এছাড়া লিভার সিরোসিস হলেও রোগীদের জল কম পান করা উচিত।
এছাড়া ডাইলুশন্যাল হাইপো ন্যাট্রিমিয়ার ক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত জল জমে গিয়ে প্রথমেই সোডিয়ামের পরিমাণ নেমে যায়। তাই তঁাদের জলপান মেপে করতে হবে।
কোনও অসুখ যার দ্বারা শরীরে জল জমে সেগুলি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জলপান জরুরি। সাধারণত এই রোগীদের শরীর থেকে নির্গত হওয়া জলের পরিমাণ পান করা জলের থেকে কম হয় বলেই জল জমে বিপত্তি ঘটে।
কখন বুঝবেন নিয়ন্ত্রণ দরকার?
উপরিউক্ত এই রোগে আক্রান্তরা শরীর থেকে পর্যাপ্ত জল বের করে দিতে পারে না। যার ফলে বিশেষ কিছু শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। মুখমণ্ডলে ফোলা ভাব, পা ফোলা, শোয়া অবস্থায় কাশি ও শ্বাসকষ্টের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতে পারে। এছাড়া মাঝরাতে শোয়া অবস্থায় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের জন্য রোগীর অক্সিজেনের অভাব ও শ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়।
সঠিক সময়ে লক্ষণ সম্পর্কে সজাগ হতে না পারলে রোগীর শরীরে প্রচুর জল জমে রক্তে জলের পরিমাণ বেড়ে যায় ও রোগী হার্ট ফেলিওরের সম্মুখীন হতে পারেন। যা বিপদ ডেকে আনে এবং মৃত্যু হতে পারে।
সতর্কতা প্রয়োজন
যাঁদের কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সারাদিনে যতটা পরিমাণ প্রস্রাব নির্গত হয় ঠিক ততটা পরিমাণই জলপান করা উচিত। সেই জন্য ২৪ ঘণ্টায় নির্গত প্রস্রাবের মাত্রা খেয়াল রাখা দরকার। যদি কোনও রোগীর কিডনি আগে থেকেই বিকল থাকে ও শরীরে জল জমতে থাকে, সে অবশ্যই কম জলপান করবে। তবে কিডনির সমস্যার আসল চিকিৎসা ওষুধ ও তাতে কাজ না হলে পরবর্তী ধাপে ডায়ালিসিসই ভরসা।
হার্টের অসুখে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সেই রোগীর হার্ট ফেলিওর হতে থাকে, হার্ট বিকল হলেই ফুসফুস ও পার্শ্ববর্তী অংশে জল জমতে শুরু করে, যা প্রাণঘাতী। সেই মুহূর্তে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গেলে ইনজেকশন, ওষুধের মাধ্যমে শরীর থেকে জল বের করে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়।
বুঝে পান
তবে উল্লেখযোগ্য, জল কখনওই প্রচুর বেশি বা একেবারেই কম পান করা অনুচিত। মনে রাখবেন, যঁারা দিনে ১০ লিটারের বেশি জলপানে অভ্যস্ত, তঁাদের ব্রেনে জল জমে ব্রেন নষ্ট হবার সম্ভাবনা প্রবল। কিডনি ও হার্টের রোগী ছাড়া বাকিদের বিশেষ কোনও রোগ না থাকলে তঁারা নির্দিষ্ট মাত্রায় জল পান করতেই পারেন। ভারতীয় প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে আবহাওয়া ও খাদ্যের পরিমাপ অনুযায়ী সারাদিনে তিন লিটার জল পান করলে শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী সারাদিনের পানীয়র মধ্যে জল ছাড়াও ডাল, ডাবের জল, চা, কফি, দুধ, ফলের রস জাতীয় ফ্লুইডকেও ধরা হয়। শরীরে জল জমার যে কোনও লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সত্বর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রোগীর কো-মর্বিডিটি অনুযায়ী তাঁর ডায়েট ও জলের পরিমাণ শুধুমাত্র ডাক্তাররা বিচার করবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.