Advertisement
Advertisement
কালাচের ছোবল

দংশন করেছে বিষধর কালাচ? এই লক্ষণগুলি দেখা মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী জানতেই পারে না দংশনের কথা।

Dos and don'ts of Kalach snake bite, doctors share tips

ছবি: প্রতীকী

Published by: Bishakha Pal
  • Posted:September 3, 2019 3:30 pm
  • Updated:September 3, 2019 3:30 pm  

পেটে ব্যথা। চোখের পাতা পড়ে আসছে। শ্বাসকষ্ট। কালাচের কালান্তক দংশনের উপসর্গ মজুত। তবু এভিএস দিতে ভয় পাচ্ছেন ডাক্তারবাবু। রোগী না বাঁচলে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠবে যে! জুটতে পারে মারও। কে তার দায় নেবে? কালাচে কাটা রোগীর চিকিৎসার ঝুঁকি নিয়ে আক্ষেপ সর্পদংশন প্রশিক্ষক ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদারের। শুনলেন গৌতম ব্রহ্ম

ঘটনা ১

Advertisement

২২ আগস্ট, ২০১৯। রামপুর হাট মেডিক্যাল কলেজ। ১০ বছরের একটি মেয়ে পেটে ব্যথা নিয়ে সংকটজনক অবস্থায় ভরতি হয়েছিল। ডাক্তার তাকে এভিএস দিয়েছিলেন। তারপরই মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল ডাক্তারবাবুর বিরুদ্ধে।

ঘটনা ২

ডেবরা হাসপাতাল। ১ জুলাই, ২০১৮। বমি ও পেটে ব্যথা নিয়ে ৩০ বছরের এক তরুণী হাসপাতালে আসেন। আগের রাতে মেঝেতে খোলা বিছানায় মশারি ছাড়া ঘুমানো, তার সাথে শিবনেত্র। সব দেখে শুনে রোগীকে এভিএস দেওয়া হয়। রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

ঘটনা ৩

১৪ আগস্ট, ২০১১। পেটে ব্যথা নিয়ে ৩২ বছরের এক রোগী এনআরএস হাসপাতালে এসেছিলেন। ঘণ্টা পাঁচেক চিকিৎসার পর রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়। ফের অসুস্থ হওয়ায় রোগীকে ন্যাশনাল মেডিকেলে আনা হয়। সন্ধ্যায় এক জুনিয়র ডাক্তার রোগীকে এভিএস দেন। রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।

[ আরও পড়ুন: নেট তথ্যে বিপত্তি, ডেঙ্গু রোগীদের মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে পেঁপে পাতা ]

তিনটি ঘটনাতেই খলনায়ক কালাচ। রহস্যময় এই সাপের দংশনই পেটে ব্যথা, চোখের পাতা পড়ে আসার মতো উপসর্গ তৈরি করেছিল। প্রথম দু’টি ঘটনায় ডাক্তারবাবুরা রোগ নির্ণয় করে সঠিকভাবেই এভিএস দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রথম ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো যায়নি। তৃতীয় ক্ষেত্রে রোগী বাঁচলেও একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে, দুটি মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তারবাবুরা ব্যর্থ হলেও একটা জুনিয়র ডাক্তার কী করে নিশ্চিতভাবে রোগটা ধরে ফেললেন? বলতে দ্বিধা নেই শ্রীজিতা নামে ওই জুনিয়র ডাক্তার কয়েকমাস আগে সর্পদংশনের চিকিৎসার উপর ক্লাস করেছিলেন। জেনেছিলেন, কালাচ নামে একটি রহস্যময় সাপ আছে। যা সাধারণত গভীর রাতে খোলা বিছানায় কামড়ায়। ঘুমের মধ্যে কামড়ায় বলে প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী জানতেই পারে না দংশনের কথা। শ্রীজিতা আরও জেনেছিলেন, কালাচ দংশনের অন্যতম লক্ষণ হল, চোখের পাতা পড়ে আসা বা শিবনেত্র। শিবনেত্র দু’ঘণ্টা পর হতে পারে আবার ২৪ ঘন্টা পরও হতে পরে। ৪২ ঘন্টা পরও শিবনেত্র দেখা গিয়েছে রোগীর মধ্যে।

কালাচ দংশনের চিকিৎসায় দু’টি জিনিস ভাল করে বোঝা দরকার। প্রথম দশটি এএসভি দেওয়ার পর সাধারণত পেটে ব্যথা, গলাব্যথা, গাঁটে গাঁটে ব্যথার মতো ‘প্রেজেন্টিং সিমটম’ কয়েক ঘণ্টায় চলে যায়। অর্থাৎ যে কষ্টের জন্য রুগী এসেছিল, সেগুলি চলে যায়। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই, শিবনেত্র থেকে যায়। এই নিয়ে অনেক সময়ই চিকিৎসকরা বিভ্রান্ত হন। শিবনেত্র তিন-চার দিনও থেকে যায়।

শ্রীজিতার কাজকে আমি গত ছয় বছর প্রচার করে যাচ্ছি। পরে মৌমিতা, আলম, শুভেন্দু,   রাজীবের মতো অনেকেই ছোট ছোট গ্রামীণ হাসপাতালে অনবদ্য সব সাফল্য দেখিয়েছে। ২০১৪ সালে নতুন সংযোজন আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মুখার্জি। বছর চল্লিশের এক মহিলা গলাব্যথা নিয়ে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন। টনসিলের ব্যথা বলেই চিকিৎসা চলছিল। ডা. মুখার্জি আগে বার চারেক দেখেছেন। পঞ্চমবার দেখতে গিয়ে দেখেন, শিবনেত্র বা টোশিস। সঙ্গে সঙ্গে ডা. যুধিষ্ঠির দাস নামে এক সহকর্মীকে ডেকে আনেন। দু’জনে মিলে সাপ কামড়ের চিকিৎসা করে রুগিটিকে বাঁচান। এই যে কালাচ সাপ কামড়ের রুগি টনসিলের ব্যথা বলে চিকিৎসা পাচ্ছিল, এটা আমাদের কাছে খুব একটা নতুন কিছু খবর নয়। মেচেদার তপনও প্রথমে গলাব্যথাই বলেছিল। তপনের খবর আমাদের রাজ্যের সরকারি প্রশিক্ষণ পুস্তিকায় বিস্তৃত আছে। গাঁটে গাঁটে ব্যথা নিয়েও কালাচদষ্ট রোগী আসতে পারে। শিশু রোগী শুধু শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে, এমনও দেখেছি। শিবনেত্র হলেই মাথায় রাখতে হবে, ওটা কালাচের কামড় হতে পারে।

[ আরও পড়ুন: নার্ভ ব্লক করে যন্ত্রণার দরজায় খিল, পথ দেখাল বাঙুর ]

গতবছরই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে একজন সাঁইত্রিশ বছর বয়সের জোয়ান লোক পিঠে ব্যথা নিয়ে ভরতির ঘণ্টা তিনেক পরে মারা যান। পিঠে ব্যথার চিকিৎসা চলতে চলতেই রোগী পেটে ব্যথার কথা বলেন। পেটব্যথার পর শুরু হয় গলাব্যথা। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ কোনও গন্ডগোল পাননি। একটু পরে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন দেওয়ার আধঘণ্টা পর রোগী মারা যান। আমরা নিশ্চিত, আগের রাতেই ওঁকে কালাচ সাপে কামড়েছিল।

রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক নঞর্থক প্রচার হয়েছিল। বলা হল, সাপে কাটার ইঞ্জেকশন দেওয়ায় ১০ বছরের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা একেবারেই সঠিক নয়। এবার গ্রামীণ হাসপাতালের নতুন ডাক্তাররা, শিবনেত্র দেখেও, কালাচের কামড় বুঝেও, রুগিকে যদি এভিএস দিতে না চান? তার দায় কে নেবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement