অভিরূপ দাস: টিভি দেখতে দেখতে খেতে গিয়েই বিপত্তি। গলায় ঢুকেছিল মাছের কাঁটা! তারপর এক দু’দিন নয়। টানা দশদিন তা আটকে ছিল গলায়! কাটা গলানোর জন্য রোগী হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাচ্ছিলেন। চিকিৎসকরা বলছেন, মাছের কাঁটা গলায় ঢুকলেই অনেকে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে শুরু করেন। যেমনটা করছিলেন ওই মহিলাও। এই প্রবণতা সাংঘাতিক।
এসএসকেএম হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. দেবাশিস বর্মন জানিয়েছেন, কাঁটা তেমন বড় হলে সহজে গলে না। এদিকে শরীরের ভিতরের অংশ তা ফুটো করে দেয়। সেখান থেকে সংক্রমণ হয়ে সেপটিসেমিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন রোকেয়া বিবি। বসিরহাটের বাসিন্দা বছর সাতান্নর মহিলার গলায় যে কাঁটা ঢুকেছিল তা ৪ সেন্টিমিটার লম্বা। আটকে ছিল স্টারনোক্লেইডোমাসটয়েড পেশিতে। সেখানে পুঁজ জমে, সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। গিলতে পারছিলেন না কিচ্ছু। রোকেয়া বিবি ছুটে এসেছিলেন এসএসকেএমে। দ্রুত তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয় এসএসকেএমের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি বিভাগে। ডিরেক্টর ডা. অরুণাভ সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে যা এখন উৎকর্ষ কেন্দ্র।
বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. দেবাশিস বর্মন জানিয়েছেন, হাসপাতালে মাছের কাঁটা গলায় বিঁধে রোগী আসার সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। টিভিতে চোখ রেখে খেতে গিয়েই ঘটছে এমন বিপত্তি। অনেকে শিশুকে মোবাইলে ভিডিও দেখিয়ে খাওয়ান। অভিভাবকদের বলব, “এমন ভুল করবেন না। মাছের কাঁটা গলায় আটকে গেলে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খান অনেকে। ডা. দেবাশিস বর্মনের পরামর্শ, কাঁটা কোথায় বিঁধে রয়েছে সেটা দেখা প্রয়োজন। গলায় কাঁটা ঢুকলে আগে এক্স-রে করান। বসে বসে হোমিওপ্যাথি খাবেন না। তেমন জায়গায় কাঁটা ঢুকলে সহজে গলবে তো না-ই। উলটে কাঁটার খোঁচায় গলার ভিতরের অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যেমনটা হয়েছিল রোকেয়া বিবির। গলার মাসলে আটকে ছিল কাঁটাটা। হোমিওপ্যাথি খেয়েও বেরোয়নি। এদিকে ১০/১২ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। রোগী ছুটে আসেন হাসপাতালে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, গলায় কিছু ঢুকলে দ্রুত এক্স-রে করান। ফরেন বডির আঘাতে গলার ভিতরের অংশে রক্তপাত হয়ে সেপ্টিসেমিয়া হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোকেয়া বিবির গলার ভেটকি মাছের কাঁটা খাদ্যনালি ফুটো করে আটকে ছিল স্টারনোক্লেইডোমাসটয়েড মাসলে। আগে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে তাঁর সংক্রমণ কমানো হয়। শুরু হয় অস্ত্রোপচারের তোড়জোড়। অস্ত্রোপচার টিমে ছিলেন ডা. সায়ন হাজরা, ডা. সৌত্রিক কুমার, ডা. সৌরভময় বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. তপজিৎ দাস। অ্যানাস্থেটিস্টের ভূমিকায় ছিলেন ডা. সন্দীপ।
সাধারণত গলায় কিছু আটকে গেলে ইসোফেগাসস্কোপি করে বের করা হয়। এখানে তা সম্ভব হয়নি। গলার অংশে ত্বকের চামড়া কেটে বের করা হয় কাঁটাটিকে। ডা. সায়ন হাজরা জানিয়েছেন, সি আর্ম এক্স-রে ব্যবহার করা হয় রোগীর জন্য। সাধারণত এই যন্ত্র হাড়ের অস্ত্রোপচারে ব্যবহার করা হয়। এই এক্স রে-র মাধ্যমে জানা যায়, কতটা গভীরে ঢুকেছে কাঁটাটা। এরপর গলার ত্বকের একটা অংশ কেটে বের করা হয় ওই মাছের কাঁটা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.