ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: বর্ষাকালীন পেটখারাপ! নাকি কোভিড (Covid-19)! বুঝতে পারছেন না চিকিৎসকরা। উপসর্গ যে হুবহু এক। আর তাই চিকিৎসকরা বলছেন, পাতলা পায়খানা হলেই বাচ্চার কোভিড টেস্ট আবশ্যক। ঝাড়গ্রামের ২ বছর ৭ মাসের সম্প্রীতি মাইতি কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মাস চারেকের আরিয়ান মালাকার। দু’জনেরই পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। বর্ষাকালীন আন্ত্রিক ভেবে তাঁদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। সন্দেহ হওয়ায় কোভিড টেস্ট করেন চিকিৎসক। রিপোর্ট পজিটিভ! ওই দুই শিশুর চিকিৎসক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর ভৌমিক জানিয়েছেন, সাধারণত চিকিৎসা পরিভাষায় এ ধরনের উপসর্গকে বলে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সিন্ড্রোম বা জিআই সিন্ড্রোম। ফি বছর বর্ষার জমা জল থেকে এমন অসুখ গা সওয়া। কিন্তু এবার এমন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুদের অধিকাংশ কোভিড পজিটিভ। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে এমন শিশুদের বাড়ির লোকের কোভিড টেস্ট করলেও রিপোর্ট পজিটিভ আসছে।
টানা বৃষ্টিতে (Rain) জল জমেছে কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী একাধিক জেলায়। বাড়ছে বর্ষাকালীন রোগভোগের আশঙ্কা। বর্ষাজনিত রোগের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্ষার জমা দূষিত জল পানীয় জলের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে এই সময়। সাধারণ পেট খারাপ ভেবে নিজে থেকে ওষুধ খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা। ডা. প্রবীর ভৌমিকের কথায়, ছোট ছোট পরিসরে জল জমে পেটের অসুখ হতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে করোনা আর আন্ত্রিকের উপসর্গ মিলে যাওয়ায়। বাড়ির একরত্তির পেট খারাপ হলেই দ্রুত কোভিড টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, তিন থেকে ছয় মাস বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে সম্প্রতি করোনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে বাচ্চাদের মধ্যে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মধ্যে করোনার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে পাতলা মলত্যাগ। তারপরই শুরু হচ্ছে পেটে ব্যথা। তাই শিশুর পেট খারাপ ও পেট ব্যথার সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে তার করোনা পরীক্ষার (Covid Test) পরামর্শ নিন। অনেক সময় বাচ্চা কোভিড আক্রান্ত হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ধুম জ্বর, স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকছে না তার। অথবা গন্ধ চলে গেলেও মাস ছয়েকের বাচ্চার পক্ষে তা বলা সম্ভবও নয়। ফলে বাচ্চা কোভিড আক্রান্ত হলেও টের পাচ্ছেন না পরিবারের লোকেরা। পরবর্তীকালে এমন বাচ্চাদের মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে এমনই এক শিশুকে সুস্থ করে তোলেন ডা. সুমিতা সাহা। তিনি বলেন, লক্ষণ দেখে বোঝা মুশকিল, শিশুটির কী হয়েছে। তাই অন্য কোনও অসুখ হলেও এই আবহে পরীক্ষা করানো বা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা। অভিজ্ঞতা জানিয়ে ওই শিশুটির উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “তার একাধিক অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছিল না। হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন করোনার অ্যান্টিবডি হাইলি পজিটিভ। অর্থাৎ ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও বাড়ির লোক টের পায়নি। এমআইএসসি এক ধরনের কোভিড কমপ্লিকেশন। তাই সবাইকে অত্যন্ত সতর্কতা নিতে হবে আগামী দিনে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.