পা ঝোলালেই ফুলে ঢোল। আবার একটু হাঁটাচলা করলেই স্বাভাবিক। এমন সমস্যার পিছনে দায়ী শিরার নানা অসুখ। সতর্ক করে প্রতিকারের উপায় জানালেন অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সুজয় কুণ্ডু। লিখছেন শ্রীজা ঘোষ
বাসে-ট্রামে অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে নিত্য যাতায়াত। অথবা অফিসে একনাগাড়ে এইভাবে বসে কাজ। যার ফলে অনেকেরই পা ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা হতে থাকে। এই সমস্যার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে ভেনাস ইনকম্পিটেন্স-এর (Venus Incompetence) মতো জটিলতা।
শিরার সমস্যায় পা ফোলা
মানবদেহে শিরা বা ধমনির দ্ধারা রক্ত চলাচল করতে পারে। যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে অক্সিজেন, জরুরি পুষ্টি এবং তরল পদার্থ পৌঁছে দিয়ে সাহায্য করে। শিরার যে রোগটি এখন সব থেকে বেশি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে এই ভেনাস ইনকম্পিটেন্স। এর জন্য সব থেকে বেশি প্রভাবিত হয় পায়ের কার্যকর শিরার ভালভগুলি। পা বেশিক্ষণ ঝুলিয়ে রাখলে রক্ত চলাচলের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ রক্তনালিকার মাধ্যমে পর্যাপ্ত রক্ত কার্ডিওভাসকুলার প্রক্রিয়ার প্রধান অঙ্গ অর্থাৎ হৃদযন্ত্রে ফেরত যেতে পারে না। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘Lack of venus return’। ফলে রক্তের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ধাতব অণু এবং অন্যান্য পদার্থ শরীরে চলাচল করতে পারে না। ফলে শিরাগুলি ফুলে ওঠে এবং রস বেরোতে থাকে। যেগুলি চামড়ার তলায় জমে পা ফুলে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘এডিমা/Edema’।
[আরও পড়ুন: লাফিয়ে বাড়ছে ওজন? খাদ্যতালিকাই বদলে দিতে পারে আপনার চেহারা]
আরও কারণ
অনেকসময় এসি ঘরে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার ফলে ভিটামিন ডি থ্রি-র (D3) অভাব হয় যার ফলে পেরিফেরাল মাসল গুলিও দুর্বল হয় পড়ে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ‘কাফ পেরিফেরাল মাসল’ পাম্পগুলি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে এই সমস্যা দেখা যায়। এর থেকেই ভেরিকোস ভেন (Vericose vein)-এর মতো জটিলতা দেখা দেয়। এই সমস্ত কিছুর ফলে পা ভারী হয়ে যন্ত্রণার উৎপত্তি হয়। সঠিক চিকিৎসা শুরু না করলে পা ফোলা থেকে সংক্রমণ হতে পারে।
প্রতিকার
ধমনির সমস্যা থেকে পা ফুললে সেক্ষেত্রে লম্বা আটসাঁট স্টকিংস পরা যেতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পা ঝুলিয়ে বসে না থেকে পা অল্পবিস্তর নাড়াচাড়া করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পায়ের আঙুল বা গোড়ালির ব্যায়াম করুন। শোয়ার সময় পা সোজা সমতলভাবে না রেখে বালিশের উপর তুলে রাখলে অনেকটাই আরাম মিলবে। এইগুলি যদি নিয়ম করে করা যায় তাহলে পায়ের পেরিফেরাল মাসলগুলিও সক্রিয় থাকবে। তাই একভাবে পা ঝুলিয়ে বসে না থেকে মাঝেমাঝেই একটু বিরাম দিন ও নাড়াচাড়া করুন। চিকিৎসকরা অনেক সময়ই ভিটামিন ডি আলাদা করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন যাতে পেশিগুলি শিথিল থাকে। তবে এই ধরনের সমস্যা একটু বয়স্কদের (৫০ বছর বা তার থেকে বেশি) মধ্যেই বেশি লক্ষ করা যায়।
[আরও পড়ুন: শরীর ভাল রাখতে কুঁড়েমিকে বিদায় জানিয়ে ভোরেই উঠুন, টিপস দিলেন বিশেষজ্ঞরা]
প্রভাব কোমরে
দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে থাকলে শুধু পা নয়, প্রভাব পড়বে কোমরেও। ‘স্পাইনাল ব্যাক মাসল স্টিফনেস’ অর্থাৎ পিঠের পেশিগুলিতে শিথিলতা কমে আসে। ফলে কোমরে ব্যথা অর্থাৎ ‘লো ব্যাক পেন’-এর উৎপত্তি হতে পারে। কোমরের সমস্যা লাঘব করতে ব্যাক সাপোর্ট দেওয়া চেয়ার ব্যবহার করুন। খাওয়া যেতে পারে ভিটামিন-ডি। একভাবে বসে থাকার কারণে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে একটু বয়স বাড়লেই শুরু হতে পারে স্পন্ডিলোসিসের সমস্যা। বয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ হাঁটু মুড়ে বসে থাকার ফলে ‘পেরি আর্টিকুলার স্টিফনেস’-এর সমস্যা দেখা যায়। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটুর সন্ধিস্থলটিকে বিশেষ নড়াচড়া করানোর সুযোগ থাকে না। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ‘স্ট্যাটিক কয়াড্রিসেপ’ (Static Quadricep) এক্সারসাইজের পরামর্শ দিতে পারেন। গোড়ালির ব্যায়াম করলে উপকার। পেরিআর্টিকুলার স্টিফনেসের ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপিই ভরসা। তবে অনেক সময় ওষুধেও কাজ হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.