অভিরূপ দাস: পঁয়তাল্লিশে আনকোরা জননাঙ্গ। একেবারে নতুন। আগেরটা যে রেডিয়েশনে পুড়ে ছাড়খাড়। ব্যাপারটা কী?
বর্ধমানের (Purba Bardhaman district) বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের কণিকা হালদার ভালভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ক্যানসার ডানা মেলে মহিলাদের নিম্নাঙ্গের বাইরের অংশে। যে অংশকে বলা হয় ভালভা। শরীরের এই অংশের কর্কটরোগ তাই ভালভার ক্যানসার (Vulvar cancer) নামেই পরিচিত। নারীত্বের চিহ্ন ছড়িয়ে শরীরের ভালভার অংশে। মহিলাদের যোনিপথ, ক্লিটোরিস এবং মূত্রনালির আশপাশের অংশকেই বলা হয় ভালভা। কণিকার নিম্নাঙ্গের ওই অংশেই একটা টিউমার হয়েছিল। এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগে তা কেটে বাদ দেন ডা. এস এন বন্দ্যোপাধ্যায়। কুঁচকির আশপাশে যে লিম্ফ নোডগুলো ছিল তাও কেটে বাদ দেওয়া হয়। দুই পায়ের মাঝের অংশের বিশাল একটা অংশ বাদ দিতে হয়।
বিশাল সেই অংশের আকৃতি প্রায় ছয় ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি। ক্যানসার অস্ত্রোপচারের পর নিয়ম অনুযায়ী শুরু হয় রেডিয়েশন। তার পরেই শুরু হয় সমস্যা। রেডিয়েশন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। কুঁচকির আশপাশের অংশের ত্বক পাতলা। রেডিয়েশনে তা শুকিয়ে গুটিয়ে গিয়েছিল। দগদগে ওই অবস্থাকে বলা হয় ‘রেডিয়েশন আলসার’। প্রস্রাব করতে পারতেন না কণিকা। যোনিপথের অবস্থাও তথৈবচ। জননাঙ্গের বাইরের অংশটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বড়সড় ক্ষতের তৈরি হয়। যোনিপথের অনেকটা, মূত্রনালি, ক্লিটোরিসের (বাইরের অংশ) বাদ পড়ে যায়। নারীত্বের চিহ্ন বাদ পড়ায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন কণিকা। তাঁকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এর প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে।
ইউনিট থ্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথা প্লাস্টিক সার্জন ডা. অরিন্দম সরকার রোগীর দায়িত্ব নেন। ডা. অরিন্দম সরকারের কথায়, পেট থেকে চামড়া এনে যোনিপথ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যা অত্যন্ত বিরল। চিকিৎসকের কথায়, একে বলা হয় ‘রিভার্স ট্র্যাম’। সাধারণত পেটের নীচ থেকে অংশ কেটে উপরে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। এই কর্মযজ্ঞে ছিলেন ডা. মনোরঞ্জন শ, ডা. সৌম্য গায়েন। ডা. জয়ব্রত, ডা. অর্পিতারাও ছিলেন সহকারী হিসাবে। প্রায় পাঁচঘণ্টার প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় নতুন যোনিপথ। পেট থেকে ত্বক এনে রিভার্স ট্র্যাম পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় নতুন যোনিপথ। ডা. অরিন্দম সরকারের কথায়, ওই মহিলার মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক করতেও এই অস্ত্রোপচারের গুরুত্ব মারাত্মক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.