মন চলে মনের গতিবেগে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মানুষের শান্তি নষ্ট করে। সবরকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে জীবনের প্রতিটি স্তরে মনকে বশে রাখা দরকার। কোন বয়সে মনের কী চাহিদা? ভাল থাকে নিজেই করুন নিজের কাউন্সেলিং। জিনিয়া সরকারকে সেই উপায় সরলীকরণ করে দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিকে পরিস্থিতির চাপ অন্যদিকে বয়সের উর্ধ্বগামীতার পারদ বৃদ্ধি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিপক্ক হতে শুরু করে মন। জন্মায় ভাল-মন্দের বিচার বোধ। পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে ঠিক-বেঠিকের হিসাব কষতে শেখেন। মানতে না পারার বিষয় গুলোই একসময় কম্প্রোমাইজের জাঁতাকলে জব্দ হয়। কখনও ভাঙা, কখনও গড়া। এরই নাম জীবন।
শরীরের পরিবর্তন তো চোখে পড়ে কিন্তু মনের পরিবর্তনটা! চলমান মনের ছন্দপতন ঘটলেই বিপদ। পরিস্থিতি অধিকাংশ সময় সেটা করতেই বাধ্য করে। তাল কাটলে প্রকাশ করতে পারেন না অনেকেই। চেপে রাখতে রাখতে পাকিয়ে যায় অসুখ, মন থেকে শরীর পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার। আর মেনে নিতে না পারলে জীবনটা অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক। পরিস্থিতকে বশে রাখলেও বয়সের ফলস্বরূপ অনেক পরিবর্তনেই আটকে রাখা বেশ কঠিন ব্যাপার। স্রোতের বিপক্ষে যেতে গেলেও বিপদ। যদিও চৌকাঠ পেরোতে গিয়ে হোঁচট লাগতে পারে। আর ঠিকভাবে উতরে গেলেও বয়সের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে গিয়ে গলদঘর্ম হন অনেকেই। এই দোলাচল থাকবেই। আসলে একটা বয়সের গাঁট পেরিয়ে অন্য একটা বয়সে প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে মনে কিছু ক্রাইসিস অবশ্যই তৈরি হয়। অর্থাৎ মানসিক দ্বন্ধ চলে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও ভাল থাকা যায়। যদি জানা থাকে বয়সভেদে মনের পরির্তনের ক্ষেত্রগুলি ও তা নিয়ন্ত্রণের উপায়।
টিন থেকে টোয়েন্টি (১৩ বছরের পর)
টিনএজ পেরিয়ে একধাপ এগোন। শরীরের নানা পরিবর্তন শুরু হয়। মনেও পড়ে তার প্রভাব।
মনের গতিবিধি:
বশে আনতে:
ব্যর্থ হলে :
বন্ধুবান্ধব দ্বারা প্রভাবিত, আইডেনটিটি ক্রাইসিস, কেরিযার কেন্দ্রিক অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক চাহিদা বৃদ্ধি।
কুড়ি পেরোলেই বুড়ি (২১ বছরের পর)
বুড়ি নয়, বড় হওয়া। একজন যখন ত্রিশে প্রবেশ করছে তখন মন পরিপূর্ণতা পেতে শুরু করে। কিন্তু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তখনও পাকাপোক্ত হয় না।
মনের গতিবিধি:
বশে আনতে :
সম্পর্কের ভীত তৈরি, জোরাল প্রতিশ্রুতি, কস্ট-বেনিফিট রিলেশনশিপ।
ব্যর্থ হলে :
সম্পর্কের দোলাচল, না পাওয়া থেকে মানসিক অবসাদ, জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা।
ত্রিশের ত্রিসীমানা পেরিয়ে (৩০ বছরের পর)
মনের গতিবিধি:
বশে আনতে :
ব্যর্থ হলে :
একঘেয়েমি, হীনমন্যতা।
চলে গেল চল্লিশ (৪০ বছরের পর)
চল্লিশ পেরিয়ে পঞ্চাশের দোরগোড়ায় মানেই শরীর ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে। এমটিনেস্ট ফিলিং বাড়তে থাকে। সন্তানরা বড় হয়ে পড়াশোনা বা কেরিয়ারের সূত্রে বাইরে থাকতে শুরু করে। ফলে এটা নিঃসঙ্গতা পুনরায় জীবনে দেখা দেয়।
মনের গতিবিধি :
বশে আনতে:
বেড়াতে যান। এই বয়সি বন্ধু-বান্ধবদের একটা গ্রুপ তৈরি করে অবসর কাটান। তাহলে সহজে জীবনের প্রতিকূলতা মেনে নিয়ে মনে-প্রাণে উৎফুল্ল থাকা সম্ভব।
ব্যর্থ হলে:
একাকিত্ব, অবহেলিত মন, শরীর ভঙ্গুর হতে শুরু করে।
পঞ্চাশ পরবর্তী (৫০ বছরের পর)
মনের গতিবিধি :
ঘুরে তাকানোর সময় এই বয়স। জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় এইসময়। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষা শুরু হয়। শরীরের প্রভাবে মন খারাপও হতে থাকে।
বশে আনতে:
ব্যর্থ হলে:
ইনসিকিউরিটি, অনুশোচনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.